ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

শত বর্ষে পা রাখছে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ

প্রকাশিত: ০৩:২৬, ৯ জানুয়ারি ২০১৫

শত বর্ষে পা রাখছে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ

তৌহিদ আক্তার পান্না, ঈশ্বরদী ॥ ব্রিটিশ শাসনামলেরও আগে কলকাতার সঙ্গে পূর্ব বাংলার যোগাযোগ ব্যবস্থার মূল মাধ্যম ছিল নৌপথ। নৌপথে নারায়নগঞ্জ হতে স্টিমার ও জাহাজ ঈশ্বরদীর সাড়াঘাট এবং কুষ্টিয়ার রাইটাঘাট হয়ে কলকাতা বন্দরের মধ্যে চলাচল করত। এ অঞ্চল থেকে পদ্মার ইলিশ মাছ শাকসবজিসহ বিভিন্ন পণ্য জাহাজে করে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হতো। এভাবেই কলকাতার সঙ্গে পূর্ব বাংলার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে আঞ্চলিক অর্থনীতির শক্তি লাভ করে। ব্রিটিশ সরকার ব্যবসা বাণিজ্য, পর্যটন এবং অবিভক্ত ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসাম, ত্রিপুরা ও উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দিল্লী ও কলকাতার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের বিষয়টি গুরুত্ব পায়। ফলে ১৮৮৯ সালে ঈশ্বরদীর পাকশীর পদ্মা নদীর ওপর সেতু তৈরির প্রস্তাব করা হয়। এই প্রস্তাবের ফলে ১৯০৮ সালে তদানিন্তন উপমহাদেশে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ সরকার পদ্মার ওপর সেতু নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদন করে। একই সঙ্গে ঐ প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে স্যার রবার্ট উইলিয়াম গেইলস হার্ডিঞ্জকে নিয়োগ দেয়া হয়। শুরু হয় পাকশী পদ্মা নদীর ওপর হার্ডিঞ্জ সেতু নির্মাণের প্রক্রিয়া। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সেতুবন্ধন হিসেবে ১৯১০ সালে এশিয়ার অন্যতম বৃহত রেল সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। ১৯১৫ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্মাণ কাজ চলতে থাকে। একই সালের ৪ মার্চ তারিখে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ওপর দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু করা হয়। এদিকে ১৯১০ থেকে ১৯১৫ সাল পর্যন্ত হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণকে কেন্দ্র করে পদ্মা নদীর পাদদেশে পাকশীতে গড়ে ওঠে বিশাল রেলওয়ে স্থাপনা। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণ কাজ শেষ হলেও ঐ স্থাপনাতে চালু করা হয় রেলওয়ে নিয়ন্ত্রণ অফিস। যে অফিস থেকে গোটা ভারত বর্ষের মধ্যে সেসময় ট্রেন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হতো। পদ্মা নদীর ওপর ইতিহাসের সাক্ষী হিসাবে দাঁড়িয়ে থাকা হার্ডিঞ্জ ব্রিজটির বয়স ২০১৫ সালের ৪ মার্চ ১শ’ বছর পূর্ণ হবে। বর্তমানে ২০১৫ সালে এই ব্রিজটি শতবর্ষে পা রেখেছে। ১শ’ বছর আগে অবিভক্ত উপমহাদেশে পূর্ব বাংলার সঙ্গে কলকাতা এবং অন্যান্য অঞ্চলের মূল লক্ষ্যই ছিল অর্থনৈতিক উন্নয়নের। কালের পরিক্রমায় ভারত বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হলেও ঐতিহাসিক হার্ডিঞ্জ ব্রিজটি প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে হার্ডিঞ্জ ব্রিজটি আজও তার ভূমিকায় গৌরবান্তিত অবস্থায় দাঁড়িয়ে। এই হার্ডিঞ্জ ব্রিজের সুবাদে আঞ্চলিক সহযোগিতার দার ভবিষ্যতে আরও উন্মোচিত হবে বলে অর্থনীতিবিদদের ধারণা। ঐতিহাসিক হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণকে কেন্দ্র করে ঈশ্বরদীর পাকশী হয়ে উঠেছে দেশের শীর্ষ স্থানীয় দর্শনীয় স্থানে। এই দর্শনীয় স্থানে পরিণত হতেও সময় লেগেছে অনেক।
×