নিজস্ব সংবাদদাতা, গাজীপুর, ৫ জানুয়ারি ॥ বিএনপি ঘোষিত গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালনের জন্য সোমবার (৫ জানুয়ারি) গাজীপুর জেলার কোন শীর্ষ নেতা মাঠে নেই। এমনকি তারা এলাকায়ও নেই। কেন্দ্রীয় কর্মসূচী পালনের জন্য কর্মীদের উদ্দেশে তাঁরা সুনির্দিষ্ট কোন নিদের্শনা বা কর্মসূচীও দেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এ কারণেই জেলার বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাই গাজীপুরের বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের অর্ধশতাধিক ক্ষুব্ধ নেতা আনন্দ ভ্রমণে সুন্দরবনে গেছেন।
বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের একাধিক নেতাকর্মী জানান, গাজীপুরে রয়েছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্রীয় কয়েক নেতা। এদের মধ্যে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান একজন, তিনি বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, এছাড়াও জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি ফজলুল হক মিলন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়্যেদুল আলম বাবুল একই সঙ্গে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, সাবেক এমপি হাসান উদ্দিন সরকার বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি সালাহউদ্দিন সরকার শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সভাপতি। তাছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আ স ম হান্নান শাহ্র বাড়িও গাজীপুরে। অথচ প্রভাবশালী এসব নেতার অধিকাংশই গাজীপুরে থাকেন না। দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ দলের বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের জন্য এ নেতাদের খুব একটা মাঠে পাওয়া যায় না। অথচ দলের বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করতে গিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীরা বিভিন্ন মামলার আসামি হচ্ছেন, গ্রেফতার ও পুলিশী হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অপরদিকে জেলার এসব হেভিওয়েট নেতারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং নিজেদের সুবিধা নিচ্ছেন। ফলে রাজধানীর পার্শ্ববর্তী এ জেলায় এ পর্যন্ত সরকারবিরোধী আন্দোলনের কোন কর্মসূচী তেমন একটা সফলভাবে পালন হয়নি। এতে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।
সর্বশেষ গত ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুরে খালেদা জিয়ার জনসভাকে কেন্দ্র করে হরতালসহ বিভিন্ন কর্মসূচী ঘোষণা দেয়া হলেও স্থানীয় কর্মীরা এ নেতাদের মাঠে পায়নি। এমনকি তাদের অনেকের মোবাইল ফোনও বন্ধ ছিল। ২৭ ডিসেম্বরের হরতালকালে গাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় একটি মামলায় জিসিসি মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানসহ প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। ওই মামলার একাধিক আসামি ইতোমধ্যে আদালত থেকে জামিন নিলেও মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান জামিন নেননি। দলের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, দলের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে একটি মামলার আসামি হওয়া সত্ত্বেও আদালত থেকে জামিন না নিয়ে নিজ স্বার্থে ও গ্রেফতার এড়াতে তিনি সরকারের সঙ্গে আঁতাত করেন। এরপর তিনি গত শনিবার সকালে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের টঙ্গী অঞ্চলের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক প্রস্তুতি পর্যালোচনা সভায় যোগ দেন এবং অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন। ওই অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বিভিন্ন বাহিনীর বেশ কয়েক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। সভাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও সরকারের সঙ্গে আঁতাতের কারণে তাকে গ্রেফতারের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তিনি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অথচ জোট ও দলের কর্মসূচী পালন করতে গিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীরা পুলিশী হয়রানির ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। প্রায় একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে জেলার শীর্ষ অন্যান্য নেতার বিরুদ্ধেও। তাদের অভিযোগ দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করায় জেলা বিএনপি ও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষ এসব নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দূরত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই দলের বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচী পালনে ব্যাহত হচ্ছে।
নাম পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা আরও জানান, বিএনপি ঘোষিত সোমবার (৫ জানুয়ারি) গণতন্ত্র হত্যা দিবস কেন্দ্রীয় কর্মসূচী পালনের জন্য কর্মীদের উদ্দেশে জেলার শীর্ষ নেতারা সুনির্দিষ্ট কোন নিদের্শনা বা কর্মসূচী দেননি।
এমনকি নিজেরা মাঠে থাকার আশ্বাসও দেননি। এতে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। তাই শুধু শুধু পুলিশী হয়রানি এড়াতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচী বাদ দিয়ে ক্ষুব্ধ এসব নেতাকর্মীর অন্তত ৬০ নেতা আনন্দ ভ্রমণ করতে রবিবার ভোরে গাজীপুর থেকে সুন্দরবনের উদ্দেশে রওনা হন। ভ্রমণরত এসব নেতার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে জানা গেছে, সোমবার তারা সুন্দরবন এলাকায় অবস্থান করছিলেন। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ত্যাগী নেতা। আর এ কারণেই ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটালেও সোমবারের কেন্দ্রীয় কর্মসূচী জেলায় ফ্লপ করেছে। আর এসবের জন্য জেলার শীর্ষ নেতারাই দায়ী।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: