ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে গভীর রাতেও মার্কেটে জনস্রোত

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস

প্রকাশিত: ০১:০৯, ৭ এপ্রিল ২০২৪

চট্টগ্রামে গভীর রাতেও মার্কেটে জনস্রোত

জহুর হকার্স মার্কেটে উপচেপড়া ভিড়

ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে এখন শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা সারছেন চট্টগ্রামের মধ্যবিত্তরা। শুক্রবার রাত দেড়টায়ও প্রচ- ভিড় ছিল নগরীর জহুর হকার্স মার্কেটের প্রবেশপথের উভয় প্রান্তে। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের ঈদ কেনাকাটায় সঙ্গী স্ত্রী, সন্তানরা। ফলে মার্কেটে জন¯্রােত লেগেই আছে। ভিড় ঠেলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এগোতেই প্রাণ ওষ্ঠাগত সকলের। একই অবস্থা রেয়াজুদ্দিন বাজার সংলগ্ন তামাকুম-ি মার্কেটসহ বেশিরভাগ শপিং মলের। তবে নি¤œ ও মধ্যবিত্তরা এখন ছুটছেন মার্কেটে, স্বল্প দামে পছন্দের পোশাক কিনতে হকার্স মার্কেট।
বিক্রেতারা বলেছেন, বেচাবিক্রি চলছে সেহরি পর্যন্ত। অপরদিকে ক্রেতারা জানিয়েছেন, এবার পোশাকের দাম বেশি। তাই ধার-দেনা করে তারা ঈদ কেনাকাটা সারছেন। 
প্রিয়জনকে নতুন পোশাক উপহার দিতে সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন  ক্রেতারা। শুক্রবার গভীর রাতে নগরীর নিউমার্কেট,  রেয়াজুদ্দিন বাজারসহ আশপাশের ফুটপাত ঘুরে  দেখা গেছে ঈদ কেনাকাটায় ব্যস্ত বন্দর নগরীর কর্মজীবীরা। মার্কেট থেকে ফুটপাত পর্যন্ত ভিড়ে পা রাখার অবস্থা নেই। এমনকি ফুটপাতে হাঁটার জায়গাও ছিল না নিউমার্কেট, টেরিবাজার ও চকবাজার এলাকায়।

এছাড়া স্বল্প আয়ের লোকজনের ঈদ কেনাকাটায় সরব ফুটপাত । নগরীর চকবাজার, আগ্রাবাদ, নিউমার্কেট, জিইসি ও ২নম্বর গেট এলাকার ফুটপাতে স্বল্প দামেই মিলছে নতুন পোশাক। ফুটপাতে দুইশ’ থেকে আড়াইশ’ টাকায় মিলছে বড়দের শার্ট। আর শিশুদের জন্য টি-শার্ট, গেঞ্জি এবং শার্ট মিলছে দেড় থেকে আড়াইশ’ টাকায়। একইভাবে ছোটদের ফ্রক কিনতে ব্যয় হচ্ছে ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকা।

খুলনায় ভিড়
স্টাফ রিপোর্টার খুলনা অফিস থেকে জানান, ঈদুল ফিতর উৎসবকে ঘিরে চলছে শেষ সময়ের কেনাকাটা। তাইতো খুলনার মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় দেখে চোখ ধাঁধিয়ে যাবে। কেউ কেউ এক দোকান থেকে যাচ্ছে আরেক দোকানে। কেউ আবার ঝামেলা এড়াতে এক দোকান থেকেই কিনে নিচ্ছেন অনেককিছু। তবে এবারে নারীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে সুতির শাড়ি। কেননা গ্রীষ্মকাল সমাগত সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই অনেকে সারছেন কেনাকাটা।

বাজার ঘুরে জানা গেছে, সুতি, টাঙ্গাইলের শাড়ি, বিভিন্ন প্রিন্টের শাড়ি, সিল্ক, হালকা সিল্ক, কাতান, নকশি শাড়ি, পার্টি ও জামদানি শাড়ি বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে সুতি শাড়ির। ব্যবসায়ীরা বলছেন, নারীরা এখন শাড়ি বেশি কিনছেন। এসব শাড়ির দাম ৫৫০ থেকে চার হাজার টাকার মধ্যে। আবার তরুণীদের পছন্দ সিল্কের শাড়ি। বিশেষ করে শাড়ির আঁচল ও পাড়ে এবার সোনালি জমাট কারুকাজের চাহিদা বেশি। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, রমজানের শুরুর দিকে বিক্রি তেমন একটা ছিল না।

তবে ১৫ রমজানের পর থেকে বিক্রি বাড়তে শুরু করেছে। শুক্রবারও ভালো বিক্রি হয়েছে। বন্ধের দিন হওয়ায় শনিবার মার্কেটে ক্রেতা বেড়েছে। নগরীর জলিল মার্কেটের দোকানি আব্দুস সামাদ বলেন, গরম পড়তে শুরু করেছে। তাই এবারের ঈদে সুতি শাড়ি বেশি চলছে। গরমকালে সুতি শাড়ি পরতে আরাম।

সিরাজগঞ্জে কেনাকাটার ধুম 
স্টাফ রিপোর্টার, সিরাজগঞ্জ থেকে জানান, আর মাত্র কয়েকদিন পরেই পবিত্র ঈদুল ফিতর। রমজানের শেষ সময়ে সিরাজগঞ্জ শহর ও উপজেলা পর্যায়ের শহরের মার্কেটগুলোতে এখন ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। শুক্র ও শনিবার অফিস-আদালত ছুটি থাকায় ক্রেতাদের ভিড় বেশি মার্কেটগুলোতে। কেনাকাটায় ধুম পড়েছে। দিনের বেলায় শহর থেকে দূরের গ্রামের ক্রেতা, রাতে কেনাকাটা করতে আসেন শহরের ক্রেতারা।

ক্রেতাদের মধ্যে এবারের ঈদে দেশী এবং বিদেশী দুই ধরনের পোশাকের চাহিদা রয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। শনিবার দুপুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, কাপড়ের দোকানে বিশেষ করে তৈরি পোশাকের দোকানগুলোতে বেশি ভিড়। নারীদের অলঙ্কার, ব্যাগ, আতর-টুপি ও জুতার দোকানেও ক্রেতাসমাগম রয়েছে।

শহরের তালুকদার সাইফুল ইসলাম এন্ড ব্রাদার্স, শামীম ব্রাদার্স, জামান কমপ্লেক্স, সিদ্দিক প্লাজা, মেহমানসহ শহরের বিপণি বিতানগুলোতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। তবে গজ কাপড়ের দোকানে তুলনামূলক ভিড় কম। এই উৎসবে বাসার সাজগোজসহ সোফা সেটের গদির দোকানেও ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। তবে ক্রেতারা বলছেন গত বছরের তুলনায় এবার শিশু ও নারীদের পোশাকের দাম বেড়েছে কম করে হলেও দ্বিগুণ। শহরের এক নম্বর খলিফাপট্টিতে বোরকার দোকানেও উপচেপড়া ভিড়।

নারী ক্রেতার সঙ্গে পুরুষ ক্রেতারাও ভিড় করছেন। হিজাব বোরকা নারীদের পছন্দ বেশি।
তালুকদার প্লাজা মার্কেটের দোকানে আসা ক্রেতা রোকেয়া বেগম বলেন, শিশুদের পোশাক কিনতে এসেছি। ঈদ উপলক্ষে দাম অনেক বেড়েছে। দোকানের মালিক শহর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জ্যোতি তালুকদার বলেন, এ বছর মার্কেটে দেশী এবং বিদেশী উভয় পোশাকের চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে নারীদের থ্রি পিস। এর মধ্যে পাকিস্তানি নারগা ও ভারতীয় রিধিকা পোশাকের চাহিদা বেশি।

নাটোরে মার্কেট সরগরম
নিজস্ব সংবাদদাতা নাটোর থেকে জানান, নাটোরে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই শেষ সময়ের কেনাকাটা জমজমাট হয়ে উঠছে। কয়েকদিন ঈদের মার্কেটগুলো ফাঁকা থাকলেও শেষ মুহূর্তের বেচাকেনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন মার্কেটগুলোর বিক্রেতা ও ক্রেতারা। নারী, শিশুসহ সকল বয়সী ক্রেতাদের পদচারণায় মুখরিত বিপণি বিতানগুলো। ঈদকে ঘিরে বিপণি বিতানগুলোতে হরেক রকম নতুন কাপড়-চোপড়ে ঠাসা রয়েছে।

সকাল থেকে শুরু করে রাত ১১টা পর্যন্ত বিপণি বিতানগুলোতে চলে বেচাকেনা। এরমধ্যে জামা কাপড়, প্রসাধনী, জুতা-স্যান্ডেলের দোকানগুলোতে ভিড় বেশি। ঈদ মার্কেটে এবার মেয়েদের জামা কাপড়ের পছন্দের তালিকায় রয়েছে আলিয়া কাট, সারারা, নাইরা। অন্যদিকে ছেলেদের ঝোঁক পাঞ্জাবির দিকে। 
এবারের ঈদে জামা-কাপড়ে নারীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে থ্রি-পিস। এগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে বাহারি রকমের। এগুলোর মধ্যে আলিয়া কাট, নায়ারা, আফগানে নারীদের ঝোঁক বেশি। এ ছাড়া জর্জেট, গাদোয়াল, সফট কাতান, জামদানি, সিল্ক ও তাঁতের শাড়ি কিনছেন ক্রেতারা। অন্যদিকে ছেলে পাঞ্জাবি-পায়জামা, জিন্সের প্যান্ট, টি শার্ট কিনছেন। এছাড়া ঈদকে ঘিরে শহরের বিভিন্ন ব্যান্ডের শোরুম গুলোতে রয়েছে নানা আকর্ষণ ও আয়োজন। এছাড়া শহরের ফুটপাতের দোকানগুলোতেও ক্রেতা সাধারণের ভিড় বেশি লক্ষ্য করা  গেছে।

ঘিওরে রমরমা বিক্রি 
নিজস্ব সংবাদদাতা, ঘিওর, মানিকগঞ্জ থেকে জানান, শেষ হতে চলেছে রমজান মাস। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘিওর উপজেলার হাট-বাজারগুলোতে শেষ মুহূর্তে কেনাকাটার ভিড় বেড়েছে। জমে উঠেছে ঈদের বাজার। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে খেটে খাওয়া মানুষ সাধ্যমতো নতুন পোশাক, জুতা স্যান্ডেল প্রসাধনী কেনাকাটা করছে। পোশাকের দোকানগুলোতে রমজানের মাঝামাঝি সময় থেকে রমরমা বেচাকেনা চলছে।

ঈদের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে প্রতিটি দোকান, বিপণি বিতান ও শপিং মার্কেটগুলোতে ভিড় বাড়ছে। ভিড় ধাক্কাধাক্কি সবকিছু ছাপিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সবার হাতেই দেখা গেছে এক বা একাধিক নতুন কাপড়ের ব্যাগ। ঘিওর কাইয়ুম বস্ত্র বিতানের মালিক ও বাজার কমিটির সহসভাপতি এ কে সারোয়ার কিরন খান বলেন, সকাল ১০টার পর থেকেই সারাদিন প্রচুর ভিড়ও আছে। সন্ধ্যার পরে ভিড় বেড়ে যায়।

অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার শাড়ি, পাঞ্জাবি, থ্রিপিস প্রচুর বিক্রি হয়েছে। মহিলাদের সমাগম বেশি। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ক্রেতাদের ভিড় ততই বাড়ছে। শিশুদের পোশাকের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।  দোকানিরাও ক্রেতাদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।
  
সৈয়দপুরের তৈরি পোশাক যাচ্ছে রাজধানীতে
স্টাফ রিপোর্টার নীলফামারী থেকে জানান, নিপুণ হাতে সুঁই-সুতা দিয়ে চুমকি পুঁতি ও জরির কাজ করেছেন নারীরা। ঈদকে সামনে রেখে এই নারীদের হাতের কাজের থ্রি-পিস ও শাড়ি এখন রাজধানীর বড় বড় শপিংমলে বিক্রি হচ্ছে। সৈয়দপুর শহরের কাজিহাট, মুন্সিপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, বাঁশবাড়ী, হাতিখানা, নতুন বাবুপাড়া, ইসলামবাগ, গোলাহাট, রসুলপুর, বার্মাসেল প্রভৃতি মহল্লার বাড়ি-বাড়িতে চলে কারচুপি পোশাক তৈরির কাজ।

এ ছাড়াও উপজেলার কামারপুকুর, বোতলাগাড়ী, বাঙ্গালিপুর, কাশিরাম বেলপুকুর, খাতা মধুপুর ইউনিয়নের গ্রামে গ্রামে নারী শ্রমিকরা প্রচুর কাজ করছেন। দিনমজুর স্বামী যা আয় করতেন তা দিয়ে কোনোরকম দিন কাটাতেন। চার বছর আগে স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে অর্ধাহার-অনাহারে কেটেছে কত দিনরাত। এমনিভাবে জীবনের গল্প বলছিলেন সৈয়দপুর শহরের ইসলামবাগ চিনি মসজিদ এলাকার বাসিন্দা মর্জিনা খাতুন। বর্তমানে বদলে গিয়েছে সেই মর্জিনার জীবনের গল্প। শুধু মর্জিনা একাই নন। শাড়িতে কারচুপি ও নকশার কাজ করে তার মতো উপজেলায় প্রায় দেড় হাজার নারী নিজের ভাগ্য বদলে ফেলেছেন।
ইসলামবাগ এলাকার বাসিন্দা মিথিলা পারভীন বলেন, আট বছর আগে তার বিয়ে হয় দিনাজপুরের পার্বতীপুর শহরের সাহেবপাড়া এলাকার হামিদুল ইসলামের সঙ্গে। সামান্য কিছু কৃষি জমিতে স্বল্প আয় হতো। স্বামীকে নিয়ে অভাবের তাড়নায় বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন। তিন বছর আগে শুরু করেন শাড়িতে নকশা তোলার কাজ। এখন নিজের বাড়ি ও আবাদি জমি আছে। শাড়িতে নকশার কাজ করে মাসে ছয় হাজার টাকা আয় করছেন।
নীলফামারী সদর উপজেলার ঢেলাপীর উত্তরা আবাসনের নারীরাও ছিল ব্যস্ত এই কাজে। প্রায় প্রতিটি ঘরের সামনে বসানো কাঠের তৈরি ফ্রেম। মেয়েরা নিপুণ হাতে সুঁই-সুতা দিয়ে চুমকি, পুঁতি আর জরির কাজ করেছেন।

কুড়িগ্রামে মানুষের স্রোত
স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম থেকে জানান, শেষ সময়ে কুড়িগ্রাম শহরের বিভিন্ন বিপণিবিতানে ঈদের বাজার জমে উঠেছে। শহরের হক সুপার মার্কেট, কে আই সুপার মার্কেট, এন আর প্লাজা, সাগর সুপারমার্কেট, দবির প্লাজা, নছর উদ্দিন মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলোতে দিন রাতে মানুষের ¯্রােত। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে কেনাকাটা। রোজার এক সপ্তাহ পর থেকে বেচাকেনা শুরু হয়েছে। কুড়িগ্রাম শহরের বিভিন্ন শপিংমলে ও বাজারে এখন চলছে প্রচ- ভিড়। দোকানিরা সময় পাচ্ছে না।

অনেকেই পরিবার নিয়ে এসেছে অনেকে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে কেনাকাটা সারছে। পছন্দের কাপড় কিনতে তারা এক দোকান থেকে আরেক দোকানে ছুটছে। এবার ঈদে শিশুদের পোশাক আর পাঞ্জাবির দাম অনেক বেশি। তরুণরা পাঞ্জাবি ফতুয়া খুঁজছে। বিভিন্ন দামে কিনছে তারা। তবে কিশোরী আর মহিলারা শাড়ির চেয়ে স্যালোয়ার কামিজের দিকে ঝুঁকছেন। জেন্স পয়েন্টের স্বত্বাধিকারী কাপড় ব্যবসায়ী আশিকুর রহমান আশিক জানান, আগের চেয়ে বেচাকেনা বেশি  হচ্ছে। আগামীতে আরও বেচাকেনা বাড়বে। শাওন ফ্যাশন স্বত্বাধিকারী জানান, এবার রোজার শুরু থেকে মনে করেছিলাম ব্যবসা ভালো হবে।

×