ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

সেন্টমার্টিন কেঁপে ওঠে বিস্ফোরণের শব্দে

ফের মিয়ানমারের তিন সেনার অনুপ্রবেশ

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ও নিজস্ব সংবাদদাতা, বান্দরবান, সংবাদদাতা, উখিয়া

প্রকাশিত: ২৩:৪০, ৩০ মার্চ ২০২৪

ফের মিয়ানমারের তিন সেনার অনুপ্রবেশ

ফের মিয়ানমারের তিন সেনার অনুপ্রবেশ

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে দেশটির সরকারি জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে ক্ষমতা দখলের যুদ্ধে বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধে টিকতে না পেরে ফের বাংলাদেশের বিজিবির কাছে আশ্রয় নিলেন মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর তিন সেনা সদস্য। শনিবার ভোরে উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডে তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের পর তারা বিজিবির কাছে আশ্রয় নেয়। পরে বিজিবি তাদের নিরস্ত্র করে তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রেখেছে। এ ঘটনায় ফের নতুন করে নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে জনসাধারণের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়েক মাস ধরে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে তুমুল সংঘর্ষে জড়ায় সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। কয়েক দিন ধরে কয়েকগুণ শক্তি বাড়িয়ে আক্রমণ চালাচ্ছে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। এরইমধ্যে চলমান ক্ষমতা দখলের যুদ্ধে বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধে টিকতে না পেরে ফের বাংলাদেশের বিজিবির কাছে আশ্রয় নিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তিনজন সদস্য।

বর্তমানে তাদের নিরস্ত্রকরণ করে তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিজিবির হেফাজতে রাখা হয়েছে। পরে তাদের নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্যাম্পে অন্যান্য আশ্রিত সদস্যদের সঙ্গে রাখা হবে বলে জানা গেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ্ মুজাহিদ উদ্দিন দৈনিক জনকণ্ঠকে জানান, মিয়ানমারের তিন সেনা সদস্য বিজিবির কাছে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের নিরস্ত্র করে তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। 
গত ১১ মার্চ নাইক্ষ্যংছড়ির জামছড়ি সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া ১৭৯ জন মিয়ানমার বর্ডার পুলিশ (বিজিপি) সদস্যদের নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্যাম্পে বিজিবির হেফাজতে রয়েছে। সরকারের পরবর্তী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আশ্রিত সবাইকে মিয়ানমারের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।
তারও আগে ৪ থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে আসে বিজিপিসহ ৩৩০ জন। তাদের ১৫ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত পাঠানো হয়।
বিস্ফোরণের শব্দ ॥ টেকনাফের সেন্টমার্টিন-শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তের এপারে রাখাইন থেকে থেমে থেমে ভেসে আসছে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ। মিয়ানমার জলসীমায় নাফ নদে দেশটির নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধ জাহাজ টহল দিতে দেখা গেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। 
শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তের বাসিন্দা নাসির উদ্দীন বলেন, শনিবার ভোর থেকে মিয়ানমার থেকে মর্টারশেল বিস্ফোরণের বিকট শব্দ আধা ঘণ্টা পরপরই এপারে ভেসে আসছে। দুপুর পর্যন্ত এ শব্দ শোনা যায়। যখন বিস্ফোরণ হয়, তখন বাড়ি-ঘর কেঁপে ওঠে। তিনি জানান, এর আগের দুইদিনও বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসে। মিয়ানমার নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধ জাহাজকে তাদের জলসীমায় টহল দিতে দেখা গেছে। শাহপরীর দ্বীপ সীমান্ত থেকে এ দৃশ্য দেখা যায়। শনিবার সেটি আর দেখা যায়নি।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা খায়রুল আমিন বলেন, মিয়ানমারে বিস্ফোরণ হলে দ্বীপের এপারে শব্দ শোনা যায়। রাতের বেলায় শব্দ বেশি শোনা যায়। গত তিনদিন ধরে থেমে থেমে বিকট শব্দ এপারে ভেসে আসছে।
সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমারের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) রাখাইন অঞ্চল দখল করতে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। গত দুই মাসে আরাকান আর্মি রাখাইনে হামলা চালিয়ে জান্তা সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীকে হটিয়ে রাখাইনের অধিকাংশ অঞ্চল, বিজিপির ক্যাম্প, সীমান্ত চৌকি ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ তাদের হেফাজতে নিয়েছে।
আরকান আর্মি ও দেশটির সেনাবাহিনীর মধ্যে রাখাইনের জেলা শহর আকিয়াব ও রাছিদং উপজেলা শহর মংডুর ও বলি বাজারের গ্রামে এখনো দু’পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। এসব উপজেলা শহরের মধ্যে মংডুর সেনা ক্যাম্প ও বলি বাজারের সেনা ক্যাম্প দখল করতে আরাকান আর্মি ব্যাপক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
সূত্র আরও জানিয়েছে, অপরদিকে জান্তা বাহিনীও এসব সেনা ক্যাম্প নিয়ন্ত্রণ রাখতে পাল্টা আক্রমণ করছে। দেশটির জান্তা সেনারা তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়া রাখাইন অঞ্চল, সীমান্ত চৌকি ও বিজিপির ক্যাম্প পুনরুদ্ধার করতে তাদের জলসীমানায় নাফ নদে গত দুইদিন ধরে যুদ্ধ জাহাজ নিয়ে টহল দিচ্ছে। তবে এ জাহাজ থেকে কোনো হামলা এখনো করেনি জান্তা সেনারা।
টেকনাফ ২-বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাখাইনের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বিজিবি সবসময় সতর্ক রয়েছে।

×