ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

কাসিদা গেয়ে রোজাদারদের জাগান তারা

সাজেদ রহমান

প্রকাশিত: ০১:১৬, ২৯ মার্চ ২০২৪

কাসিদা গেয়ে রোজাদারদের জাগান তারা

‘ঘুম থেকে উঠুন, সেহরি খাওয়ার সময় হয়ে গেছে’

‘ঘুম থেকে উঠুন, সেহরি খাওয়ার সময় হয়ে গেছে’। ‘রোজাদাররা উঠো, আল্লাহ’র প্রিয় বান্দারা, রাত তিনটা বেজে গেছে, সেহরি খেয়ে নাও।’ এভাবে যশোরে মধ্যরাতে কোরাস গান গেয়ে রোজাদারদের সেহরি খেতে ঘুম থেকে ডেকে তোলার রেওয়াজ প্রচলিত এখনো রয়েছে।
একদল যুবক সেহরির ঘণ্টাখানেক আগে থেকেই বিভিন্ন পাড়ামহল্লার অলিগলিতে ঘুরে বেড়ান তারা কোরাস গান গেয়ে সেহরি খেতে ঘুম থেকে উঠতে আহ্বান জানান। তাদের ডাক শুনে পরিবারের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ঘুম থেকে উঠে তাদের একনজর দেখতে বাইরে তাকান। যশোর শহরের কাজীপাড়া এলাকায় অনেক বছর ধরে সুমন ও শিপন নামের দুইজন এভাবে গান গেয়ে রোজাদারদের সেহরি খাওয়ার জন্য ডাকেন। তবে আগে শহরের সব মহল্লায় এই কোরাস পার্টি ছিল। এখন সব জায়গায় এদের দেখা যায় না। শহরের অনেক মহল্লায় সেই দিনগুলো এখন শুধুই অতীত।

অনেক জায়গায় এখন আর ঘুম ভাঙানো সেই পার্টিকে কোরাস গান গাইতে শোনা যায় না। ডিজিটাল প্রযুক্তির এ যুগে এখন মোবাইলের অটো অ্যালার্মে তাদের ঘুম ভাঙে। বড় বড় অ্যাপার্টমেন্টের সিকিউরিটি গার্ডরা ফ্ল্যাটে ফ্ল্যাটে ইন্টারকমে সেহরি খাওয়ার সময় হলে ডেকে দেন। প্রবীণ ব্যক্তিরা আজও সেই কোরাস গানের সেহরি কাফেলার শূন্যতা অনুভব করেন। সুমন বলেন, আগে আমাদের এলাকায় একজন সেহরির সময় ডেকে দিতেন। আমি তার সহকারী ছিলাম। তিনি মারা গেছেন। তাই এখন আমি নিজে এই কাজ করি। শিপন বলেন, এটা করে আমরা আনন্দ পাই।

তাই সুমনের সঙ্গে আমিও এই কাজ করি। আমরা কোনো টাকা-পয়সার জন্য করি না। যদি কেউ খুশি হয়ে কিছু দেয় ঈদের আগে তখন নিই। যশোর রেলগেট এলাকার বাসিন্দা জিল্লুর রহমান মানিক জানান, আগে রমজান মাস এলেই প্রতিরাতে কোরাস গানে ঘুম ভাঙতো। ঘণ্টা খানেক আগে থেকেই তারা ঘুরে ঘুরে সেহরি খাওয়ার আহ্বান জানাত। কিন্তু এখন সব কিছু কেমন যেন পানসে হয়ে গেছে। সেই কোরাস গানের পার্টিও নেই।

ডিজিটাল সুবিধা ভোগ করে আমরা কেমন যেন অ্যানালগ হয়ে গেছি। যশোর শহরের বরান্দিপাড়ার শাকিল আহমেদ জানান, এক সময় কোরাস পার্টির সদস্যরা ঈদের আগের দিন সন্ধ্যায় অর্থাৎ চাঁদরাতে প্রতিটি বাসার কলিং বেল বাজাত। ছেলে-মেয়েরা দরজা খুলে অপরিচিত লোকদের দেখে ভয়ে ভয়ে পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে তারা হেসে বলত ‘মাগো আমরা ঘুম ভাঙানি পার্টি। 
প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, পাকিস্তানি আমলে যশোরে এই কাসিদা গাইতেন উর্দু ভাষায়। ওই সময় সুরে সুরে যশোর শহরের প্রায় সব মহল্লাতেই রমজানে সেহরির সময় দেখা মিলত এক বিশেষ গায়েন দলের। গলায় পেঁচানো গামছায় ঝুলন্ত হারমোনিয়াম, কারও হাতে হ্যাজাক বাতি, কারও হাতে ডুগডুগি, কারও হাতে করতাল। সুললিত কণ্ঠে ছন্দময় গলায় বিশেষ এক সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে মহল্লাবাসীকে ঘুম থেকে উঠে সেহরি খাওয়ার আহ্বান জানাতেন তারা।

সাজেদ রহমান, যশোর

×