ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

কাজ সম্পন্নের মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগেই

রাঙ্গাবালীতে অসমাপ্ত চার সেতু

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ২১:২৩, ২২ জানুয়ারি ২০২৪

রাঙ্গাবালীতে অসমাপ্ত চার সেতু

রাঙ্গাবালীর মাদারবুনিয়া খালের ওপর পড়ে আছে সংযোগ সড়ক ছাড়া সেতু 

রাঙ্গাবালী উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের একসঙ্গে শুরু করা চারটি সেতুর মধ্যে তিনটির নির্মাণ কাজ শেষ হলেও সংযোগ সড়কের অভাবে এর একটিও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। অপর সেতুটির নির্মাণ কাজ ৮টি খুঁটি স্থাপনের মধ্যে ঝুলে আছে। প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এসব সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। সেতুগুলো ব্যবহারোপযোগী না হওয়ায় মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। মাইলের পর মাইল ঘুরে লোকজনকে যাতায়াত করতে হচ্ছে। অর্ধসমাপ্ত সেতুগুলো এখন স্থানীয়দের কাছে গলার কাঁটা হয়ে আছে। 
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) রাঙ্গাবালী উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে উপজেলায় ‘আয়রন ব্রিজ প্রকল্পের’ আওতায় ৫ কোটি ৮৮ লাখ ৪৩ হাজার ৬৮ টাকা ব্যয়ে সদর ইউনিয়নের চারটি স্থানে পৃথক ৪টি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। দরপত্রে এক প্যাকেজে সেতুগুলোর নির্মাণকাজ পিরোজপুরের ভা-ারিয়া ইফটিই ও ইটিসিএল (প্রাইভেট) লিমিটেড নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়।

চুক্তি অনুযায়ী ২০২২ সালের ১ এপ্রিল কাজ শুরু এবং ২০২৩ সালের ৩১ মার্চ কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু চুক্তির মেয়াদ দশ মাস আগেই শেষ হয়েছে। এর মধ্যে কাজের ৯০ ভাগ অগ্রগতি দেখানো হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ কাজির হাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আলমগীর মৃধাবাড়ির মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া আমলাভাঙা খালের ওপর একটি সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। তবে ৯০ মিটার দৈর্ঘ্যরে এবং ১০ ফুট প্রস্থের এ সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়ক না থাকায় সেতুটি অব্যবহৃত পড়ে আছে।

একইভাবে খালগোড়া বাজারের জলকপাট সেতুর অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু ৩০ মিটার দৈর্ঘ্যরে এবং ১০ ফুট প্রস্থের এ সেতুরও সংযোগ সড়ক না হওয়ায় তা অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। মাদারবুনিয়া খালের ওপর নির্মিত ৪২ মিটার দৈর্ঘ্যরে এবং ১০ ফুট প্রস্থের মূল সেতু নির্মাণ হলেও সেতুর দু’পাশে নেই সংযোগ সড়ক। ফলে সেটিও অব্যবহৃত অবস্থায় খালের ওপর দাঁড়িয়ে আছে।

মাদারবুনিয়া খালের এ সেতু থেকে তিন কিলোমিটার পূর্বে ৭৮ মিটার দৈর্ঘ্যরে এবং ১০ ফুট প্রস্থের লোহার সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হলেও সেখানে শুধু  ৭ থেকে ৮টি লোহার খুঁটি (বিম) পুঁতেই কাজ ফেলে রাখা হয়েছে মাসের পর মাস। এভাবে নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। 
স্থানীয়রা জানান, মাদারবুনিয়া খালের এক পাড়ে রসুলবাড়িয়া গ্রাম। অন্য পাড়ে মাদারবুনিয়া গ্রাম। এই দুই পাড়ের মানুষের যোগাযোগ মাধ্যম আগে ছিল খেয়া।

পরে হয়েছে কাঠের সেতু। সেই সেতুতে পথচারীরা কোনোমতে পারাপার হতে পারলেও যানবাহন চলার সুযোগ ছিল না। এ অবস্থায়  এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে দুই গ্রামের মানুষের সহজ যোগাযোগের জন্য ৭৮ মিটারের একটি লোহার সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এক বছরের মধ্যে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা দেড় বছরেও হয়নি। এতে দুই পাড়ের মানুষ যাতায়াতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে। 
এ প্রসঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি গিয়াসউদ্দিন জানান, শ্রমিক সংকটের কারণে কাজ শেষ করতে বিলম্ব হয়েছে। তবে এখন শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন হবে। রাঙ্গাবালী ইউপি চেয়ারম্যান মামুন খান জানান, জনগণের ব্যবহারের গুরুত্ব¡ বিবেচনায় সেতুগুলো  নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে সংযোগ সড়ক ছাড়াই তিনটি সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়। তাই সেতু  থাকলেও সংযোগ সড়কের অভাবে সেতুগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

অপর সেতুটির নির্মাণ কাজও ঝুলে আছে। এতে জনগণের দুর্ভোগ বেড়েছে। এ ব্যাপারে এলজিইডির রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান জানান, তিনটি সেতুর কাজ ৯০ ভাগ হয়েছে। অসম্পূর্ণ সেতুর কাজও ঠিকাদার শুরু করবে। এ ব্যাপারে  ঠিকাদারকে মৌখিক এবং লিখিতভাবে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। সময় বাড়ানো হয়েছে এবং চলতি বছর জুনের মধ্যেই সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

×