ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ই-গেটের সামনে দাঁড়ালে এক মিনিটেরও কম সময়ে ইমিগ্রেশন

প্রকাশিত: ১০:৩১, ২৩ জানুয়ারি ২০২০

  ই-গেটের সামনে দাঁড়ালে এক মিনিটেরও কম সময়ে ইমিগ্রেশন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ অবশেষে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম শুরু হলো। এই পাসপোর্টের মাধ্যমে এক মিনিটেরও কম সময়ে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা যাবে। বুধবার এই কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকা শহরের মানুষ সবচেয়ে আধুনিক এই পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন। দুই বছর ধরে আসছে আসছে বলে যে আশার বাণী শুনছিল বাংলাদেশের মানুষ, সেই আশা অবশেষে পূরণ হয়েছে। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো চালু হলো ই-পাসপোর্ট বা ইলেকট্রনিক পাসপোর্টের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। এর মাধ্যমে একজন বিদেশগামী কারও সাহায্য ছাড়া নিজেই নিজের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে পারবেন। পুরো প্রক্রিয়াটি এক মিনিটেরও কম সময়ে সম্পন্ন হবে। পৃথিবীতে এর চেয়ে নিরাপদ ও অত্যাধুনিক পাসপোর্ট এখন পর্যন্ত উদ্ভাবন হয়নি। বিশ্বের ১১৮টি দেশে এ পাসপোর্টের ব্যবহার রয়েছে। বুধবার বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ ২৩ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকা শহরের বাসিন্দারা ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এদিন থেকে বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের আগারগাঁও, যাত্রাবাড়ী ও উত্তরা কার্যালয়ে মিলবে ই-পাসপোর্ট সেবা। এটি একটি বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট, যাতে একটি এমবেডেড ইলেকট্রনিক মাইক্রোপ্রসেসর (মোবাইলের মেমোরি কার্ডের মতো) চিপ থাকবে। মাইক্রোপ্রসেসর চিপে পাসপোর্টধারীর বায়োগ্রাফি ও বায়োমেট্রিক (ছবি, আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের মণি) তথ্যসহ মোট ৩৮ ধরনের নিরাপত্তা ফিচার থাকবে। চলমান মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) মতোই হবে ই-পাসপোর্টের বই। তবে এমআরপির প্রথম দুই পাতায় পাসপোর্টধারীর তথ্য থাকলেও ই-পাসপোর্টের দ্বিতীয় পাতাটি থাকবে একটি পলিমারের তৈরি কার্ডের মতো (ডেবিট/ক্রেডিট/ এটিএম কার্ড-সদৃশ)। কার্ডে পাসপোর্ট বাহকের নাম, ঠিকানা, জন্ম তারিখসহ নানা মৌলিক তথ্য থাকবে। এছাড়া সেই কার্ডের ভেতরে একটি মাইক্রো চিপ থাকবে। যেখানে পাসপোর্ট বাহকের সব গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল তথ্য ও ডাটাবেজ সংরক্ষিত (অদৃশ্যমান) থাকবে। ডাটাবেজে থাকবে পাসপোর্টধারীর তিন ধরনের ছবি, ১০ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ। এমআরপি দিয়ে ইমিগ্রেশন অফিসারের মাধ্যমে একজন যাত্রী খুব দ্রুত বন্দর পার হতে পারেন। তবে অত্যাধুনিক ই-পাসপোর্টের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, ভ্রমণকারীরা খুবই দ্রুত, সহজে এবং ই-গেটের মাধ্যমে নিজেই নিজের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে দেশের বাইরে যেতে পারবেন। ফলে বিভিন্ন বিমানবন্দরে তাদের ভিসা চেকিংয়ের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হবে না। এর মাধ্যমে তাদের ইমিগ্রেশন দ্রুত হবে। দেশের বিমানবন্দরে ইতোমধ্যে ই-গেট স্থাপন হয়েছে। ই-পাসপোর্টধারীরা নির্দিষ্ট স্থানে পাসপোর্ট পাঞ্চ করে ই-গেটের সামনে দাঁড়ালে সেখানে স্থাপিত ক্যামেরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদের ছবি তুলে নেবে। এরপর ই-গেটের মনিটরে নিজের আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে নিজেই নিজের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করবেন। যদি পাসপোর্টধারীর বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকে বা তার তথ্য ও ছবিতে মিল না থাকে তবে ই-গেটে লালবাতি জ্বলে উঠবে। ই-পাসপোর্টের জন্য ২০ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ফটোগ্রাফ নেয়া হয়েছে বলে বঙ্গভবন সূত্রে জানা গেছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইতোমধ্যে তিনটি ই-পাসপোর্ট গেট বসানো হয়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বেনাপোল ও বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে আরও ৫০টি ই-গেট স্থাপন করা হবে। সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ এসব ই-গেট স্থাপন করলেও এগুলো পরিচালনা করবে ইমিগ্রেশন বিভাগ। রাজধানীর উত্তরায় ই-পাসপোর্ট তৈরির কারখানা রয়েছে। এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ কিছু না বললেও অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রথমে ই-পাসপোর্ট উৎপাদনে কিছুটা ধীরগতি দেখা দিতে পারে। তবে জুন মাস থেকে সক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সারাদেশে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম শুরু হবে। ডিসেম্বর নাগাদ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা এ পাসপোর্টের জন্য নিজ নিজ মিশনে আবেদন করতে পারবেন। পাঁচ ও ১০ বছর মেয়াদী ই-পাসপোর্ট ইস্যু করা হবে। বাংলাদেশে আবেদনকারীদের জন্য ৪৮ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৩,৫০০ টাকা, জরুরী ফি ৫,৫০০ ও অতীব জরুরী ফি ৭,৫০০ টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদী সাধারণ ফি ৫,০০০ টাকা, জরুরী ফি ৭,০০০ ও অতীব জরুরী ফি ৯,০০০ টাকা। এছাড়া বাংলাদেশে আবেদনকারীদের জন্য ৬৪ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৫,৫০০ টাকা, জরুরী ফি ৭,৫০০ ও অতীব জরুরী ফি ১০ হাজার ৫০০ টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদী সাধারণ ফি ৭,০০০ টাকা, জরুরী ফি ৯,০০০ ও অতীব জরুরী ফি ১২,০০০ টাকা। নতুন পাসপোর্টের ক্ষেত্রে অতীব জরুরী হলে তিনদিনে, জরুরী সাতদিনে এবং সাধারণ আবেদনের ক্ষেত্রে ২১ দিনে পাসপোর্ট পাওয়া যাবে। তবে পুরনো অথবা মেয়দোত্তীর্ণ পাসপোর্ট রি-ইস্যু করার ক্ষেত্রে অতীব জরুরী দুদিনে, জরুরী তিনদিনে এবং সাধারণ পাসপোর্ট সাতদিনের মধ্যে দেয়া হবে। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে সাধারণ আবেদনকারী, শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা আলাদা ই-পাসপোর্ট ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে সাধারণ আবেদনকারীদের জন্য ৪৮ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদী সাধারণ ফি ১০০ মার্কিন ডলার ও জরুরী ফি ১৫০ এবং ১০ বছর মেয়াদী সাধারণ ফি ১২৫ ও জরুরী ফি ১৭৫ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে সাধারণ আবেদনকারীদের জন্য ৬৪ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদী সাধারণ ফি ১৫০ মার্কিন ডলার ও জরুরী ফি ২০০ এবং ১০ বছর মেয়াদী সাধারণ ফি ১৭৫ ও জরুরী ফি ২২৫ মার্কিন ডলার ধার্য করা হয়েছে। ই-পাসপোর্টের জন্য গত ১৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফটোগ্রাফ নেয়া হয়। ই-পাসপোর্টের আবেদনপত্র জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা জন্মনিবন্ধন সনদ (বিআরসি) অনুযায়ী পূরণ করতে হবে। অপ্রাপ্তবয়স্ক (১৮ বছরের কম) আবেদনকারী, যার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নেই, তার পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে। এমআরপি থেকে কিছুটা ভিন্ন করা হয়েছে ই-পাসপোর্টের ফরম। এতে আবেদনকারীর ৮৭ ধরনের তথ্য চাওয়া হবে। ফরমে পাসপোর্টের মেয়াদ (পাঁচ অথবা ১০ বছর) ও পাসপোর্টের পাতার সংখ্যা (৪৮ অথবা ৬৪) ইত্যাদি তথ্য জানতে চাওয়া হবে। এতে ৩৮টি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। অত্যন্ত নিরাপদ পাসপোর্ট এটি। এছাড়া কারও অতীব জরুরী হলে তিনি নিজ উদ্যোগে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এনে অধিদফতরে আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে পাসপোর্টের ফরমে প্রি-পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের নম্বর ফরমে উল্লেখ করতে হবে। আবেদনের সময় জমা দিতে হবে ক্লিয়ারেন্সের কপি। ই-পাসপোর্ট করতে আবেদনের ফরমে বা প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে কোন ধরনের সত্যায়িত লাগবে না। এমআরপি কার্যক্রম এখনই বন্ধ হচ্ছে না। আবেদনকারীরা ই-পাসপোর্ট ছাড়াও অধিদফতরে গিয়ে এমআরপির জন্য আবেদন করতে পারবেন। সূত্র জানায়, আগামী পাঁচ বছর এমআরপি রাখার পরিকল্পনা রয়েছে অধিদফতরের।
×