ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খাট কিনে না দেয়ায় অভিমানে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর আত্মহত্যা

প্রকাশিত: ১১:২১, ১০ ডিসেম্বর ২০১৯

খাট কিনে না দেয়ায় অভিমানে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর আত্মহত্যা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একটি সুন্দর খাট কেনা নিয়ে ঝগড়ার জের ধরে আত্মহত্যা করেছেন পাঁচ মাসের এক অন্তঃসত্ত্বা। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে রবিবার এ ঘটনা ঘটে। হতভাগী ওই নারীর নাম হাবিবা আক্তার (২০)। এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কাটাসুরের ২ নম্বর রোডের ৪১ নম্বর বাড়ির ষষ্ঠ তলার বাসা থেকে হাবিবার গলায় ফাঁস দেয়া ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। হাবিবা রাজশাহী জেলার শাহ মখদুম থানার মধ্য নওদাপাড়ার মোঃ ইকরাম আলীর মেয়ে। তার স্বামীর নাম মোঃ আকাশ আলী। তিনি একটি বেসরকারী কোম্পানিতে চাকরি করেন। স্বামী কর্মস্থলে থাকাবস্থায় ফাঁকা ঘরে আত্মহত্যা করেন হাবিবা। এ সম্পর্কে আকাশ আলী বলেন, আমার স্ত্রী পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। বাসায় খাট কেনা নিয়ে আমার সঙ্গে তার একটুু ঝগড়া হচ্ছিল। আমি বলেছি, এখন আমার কাছে টাকা নেই। আগামী মাসে খাট কিনে দেব। এই মাসে একটি ড্রেসিং টেবিল ও একটি আলমারি কিনেছি। শনিবার রাতে এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। পরে দুজনেই রাতে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। রবিবার সকালে আমাকে রুটি বানিয়ে দেয় ও। আমি খেয়ে অফিসে চলে যাই। অফিসে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে আমার ফোনে একটি মেসেজ আসে। মেসেজ দেখে আমি ফোন দিই, কিন্তু ও কল রিসিভ করে না। পরে আমি একটি মেসেজ দিই, তাতেও কোন উত্তর আসে না। আমি আবার কল দিলে ফোন বন্ধ পাই। তখন আমার মনে সন্দেহ হলে দ্রুত বাসায় চলে আসি। এসে কলিং বেল বাজিয়ে ডাকাডাকি করলেও দরজা খুলছিল না। পরে পাশের বাসার সবাইকে নিয়ে দরজা ভেঙ্গে ফেলি। ঢুকে দেখি ড্রয়িং রুমে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলছে হাবিবা। পরে প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় তাকে নামিয়ে সঙ্গে সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসি। সেখান থেকে তাকে নিকটের হৃদরোগ হাসপাতালে পাঠানো হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক হাবিবাকে মৃত ঘোষণা করেন। হাবিবার বড় ভাই ফরিদুর বলেন, আমরা দুই ভাই ও এক বোন। হাবিবা সবার ছোট। বছরখানেক হলো বিয়ে হয়েছে। আমাকে কয়েক দিন ধরে ফোন করছিল বাসায় আসার জন্য। আমি বলেছি, মঙ্গলবার আসব। শুনেছি আমার বোনের সঙ্গে খাট কেনা নিয়ে আকাশের সামান্য ঝগড়া হয়েছে। রবিবার ফোন পেয়ে এসে দেখি আমার বোন আর নেই। হাবিবার মামা শফিকুল ইসলাম বলেন, বছরখানেক আগে আমরাই দেখে-শুনে ভাগনিকে বিয়ে দিলাম। আর এসে দেখতে হলো তার নিথর দেহ। এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক মোঃ মিজানুর ইসলাম বলেন, রবিবার বিকেল ৫টায় আমরা খবর পেয়ে হৃদরোগ হাসপাতাল থেকে লাশের সুরতহাল তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠাই। প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পারি স্বামীর সঙ্গে খাট কেনা নিয়ে কথাকাটাকাটি হয় হাবিবা আক্তারের। পরে সে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার বিকেলে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওই পরিবারে চলছে শোকের মাতম।
×