ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু প্রযুক্তি ভার্সিটি বন্ধ ঘোষণা

প্রকাশিত: ১০:২৭, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু প্রযুক্তি ভার্সিটি বন্ধ ঘোষণা

নিজস্ব সংবাদদাতা, গোপালগঞ্জ, ২১ সেপ্টেম্বর ॥ গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মোঃ নূরউদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ ছুটি ঘোষণা করা হয়। এছাড়া শনিবার সকাল দশটার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসমূহের শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগ করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে আন্দোলন চলাকালীন শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দায়ী করে নৈতিকতার প্রশ্নে সহকারী প্রক্টর পদ থেকে পদত্যাগ করেন মোঃ হুমায়ন কবির। অফিস আদেশে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত রাখতে বিবদমান গ্রুপসমূহের মতানৈক্য নিরসন ও সম্ভাব্য অপ্রত্যাশিত ঘটনা এড়াতে রিজেন্ট বোর্ডের সদস্যগণের মৌখিক অনুমতির প্রেক্ষিতে আসন্ন পূজার নির্ধারিত ছুটির সঙ্গে ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত ছুটি বর্ধিত করা হয়েছে। এ ঘটনার পর সকাল থেকেই আরও বেগবান হয় শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে জানান, শুক্রবার রাত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল হলে খাবার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে হলে বিদ্যুত ও পানির লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। গোপালগঞ্জ শহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পথে ভিসি সমর্থকরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের গোবরাসহ বিভিন্ন স্থানে মারপিট করেছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসহ সকল প্রবেশদ্বার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা শহর থেকে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় নীলার মাঠ এলাকায় ভিসি’র পেটোয়া বাহিনী হামলা চালায়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে, ক্যাম্পাসে, বাইরেসহ কয়েকটি স্থানে হামলা চালায় একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ। এসময় অনেক শিক্ষার্থীকেই পানির মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং বিল পাড়ি দিয়ে প্রাণ বাঁচাতে দেখা গেছে। এ ঘটনায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এদের মধ্যে ১৫ জনকে গোপালগঞ্জ ২৫০-শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে গ্রুপটির মহড়া ও রাস্তা বন্ধ থাকার কারণে অনেক আহত শিক্ষার্থীকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে পারেনি বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনার খবর পেয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন গোটা ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা শহর থেকে ক্যাম্পাসে যেতে পুলিশী বাধায় সার্কিট হাউজের সম্মুখ সড়ক ও গোবরা সোবাহান সড়কে অবস্থান নিয়ে ভিসিকে আফসারণের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। দুর্নীতিবাজ, ভর্তি ও নিয়োগ বাণিজ্যকারী ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক টর্চার সেলে পরিণত করেছে উল্লেখ করে বিএনপি-জামায়াত পন্থী এই ভিসির পদত্যাগ না করা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন কর্মসূচী চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন ও মূল ফটকের বাইরে অবস্থান নিয়ে ভিসির পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। দফায় দফায় ভিসি বিরোধী আন্দোলনকারীদের অবস্থান থেকে সরাতে ভিসি পন্থীরা ধাওয়া করে। এরপরও নানা উৎকণ্ঠা, উত্তেজনা ও আশঙ্কার মধ্য দিয়ে আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান নিয়ে ভিসি বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. নূরউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের শনিবার সকাল ১০ টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এজন্য হলের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসককে ১৪৪ ধারা জারি ও পুলিশ সুপারকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ ক্যাম্পাসে মোতায়েনের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও ধাওয়ার বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেননি। এদিকে সহকারী প্রক্টরের পদত্যাগপত্র হাতে পাননি বলেও জানিয়েছেন রেজিস্ট্রার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর ভিসি প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিন মুঠোফোনে জানান, শিক্ষার্থীদের ওপর কে বা কারা হামলা করেছে আমার জানা নেই। ক্যাম্পাসে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যদি আন্দোলনকারীরা না যায়, তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কোন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি যে, ১৪৪ ধারা জারি করতে হবে। তবে ভিসি আমাকে ১৪৪ ধারা জারির জন্য অনুরোধ করেছেন। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান এ পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছি। উল্লেখ্য, গোপালগঞ্জ বশেমুরবিপ্রবি’র ভিসি প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে এর আগেও বহুবার নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, বিভিন্ন মিডিয়াতেও তা প্রকাশ হয়েছে। গত ১১ সেপ্টেম্বর জিনিয়াকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার ও তার সঙ্গে ভিসির কটাক্ষ আচরণের অডিও-ক্লিপ ফাঁস হওয়ার পর গত বুধবার থেকে এ ভিসি’র বিরুদ্ধে নতুন করে শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন শুরু হয়। খুলনায় মানববন্ধন ॥ স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস জানায়, গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) উপাচার্য প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের পদত্যাগ দাবিতে শনিবার খুলনায় মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এই কর্মসূচীর আয়োজন করে। তারা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে সাধারণ শিক্ষর্থীদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে উপাচার্যকে দুর্নীতিবাজ, স্বেচ্ছাচারী, বাক স্বাধীনতাহরণকারী এবং বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের এজেন্ট বলে আখ্যায়িত করেছেন। এই উপাচার্যের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ও সুনাম ক্ষুণœ হচ্ছে বলেও তারা দাবি করেন। দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ূন কবির বালু মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পক্ষে সম্রাট বিশ্বাস এসব অভিযোগ করেন। এর আগে নগরীতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়। সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধনে উপাচার্যকে অপসারণসহ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বশেমুরবিপ্রবির সাবেক শিক্ষার্থী ফোরাম খুলনার নেতা আদনান ফয়সাল আলিফ, আবুল হাসান আফসানা ঊষা, মোহুয়া হাসান মনিষাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। তারা বলেন, দুর্নীতিবাজ এই ভিসির অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে। সংবাদ সম্মেলনে প্রাক্তন ছাত্র স¤্রাট বিশ্বাস অভিযোগ করেন, উপাচার্য ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিন বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন। তিনি জাতির পিতার নামের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছেন। এই ব্যক্তি ১৯৯৪-৯৫ সালে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত সাদা প্যানেলের পক্ষে নির্বাচন করেন। তার কারণে গত ৫ বছরেও বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতির জনকের মুর‌্যাল ও শহীদ মিনার হয়নি। উল্টো অর্থ আত্মসাৎ হয়েছে। ভর্তি বাণিজ্য, ভিসি কোটা চালুসহ তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। বিচার বিভাগীয় তদন্ত করলেই তার সব কুকীর্তি প্রকাশিত হবে। তিনি বলেন, উপাচার্য নিজের পদ বাঁচাতে সর্বশেষ বহিরাগতদের দিয়ে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে কথা বললেই শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের নাজেহাল হতে হয়। এ পর্যন্ত তুচ্ছ ঘটনায় ৩৪ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের জামায়াত-শিবির, সরকার বিরোধী অপবাদ দিয়ে বাকরুদ্ধ করে রাখেন এবং অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। বঙ্গবন্ধুর মাটিতে সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করে ছাত্রছাত্রীর ক্ষতি সাধন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছেন তিনি। স¤্রাট বিশ্বাস অভিযোগ করে বলেন, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির জিনিয়া এবং তার আগে তারেক লিটুকে বহিষ্কার এবং মানসিক নির্যাতন করেছেন ভিসি। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক কর্মকান্ড নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অর্ঘকে বহিষ্কার করা হয়। অর্ঘ্যরে বাবা বহিষ্কার আদেশ ওঠাতে অনুরোধ করলে তাকে অপমান করে বের করে দেয়া হয়। বাবার আপমান সহ্য করতে না পেরে অর্ঘ্য আত্মহত্যা করে।
×