ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

ভূমি বিষয়ে হয়রানি জানাতে হটলাইন ॥ ভূমিমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১০:৫৬, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ভূমি বিষয়ে হয়রানি জানাতে হটলাইন ॥ ভূমিমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, ভূমি সংক্রান্ত যে কোন হয়রানির কথা সরাসরি মন্ত্রণালয়ে জানাতে আগামী মাসেই শুরু হচ্ছে হটলাইন নম্বর। এর মাধ্যমে দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে ভুক্তভোগীরা তাদের সমস্যার কথা জানাতে পারবেন। অভিযোগ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে মন্ত্রণালয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, ২০২১ সালের আগেই ইউনিয়ন পর্যায়ের ভূমি অফিসে হাইস্পিড ফাইবার অপটিক ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া হবে। সোমবার ভূমি মন্ত্রণালয়ে ‘ই-নামজারির সক্ষমতা মূল্যায়নে গবেষণালব্ধ ফলাফল’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব কথা বলেন। ভূমিমন্ত্রী বলেন, আমরা হটলাইন চলু করছি। আগামী মাসের মধ্যে এটা চালু করা হবে। এর মাধ্যমে জনগণ ভূমি সংক্রান্ত সমস্যা জানাতে পারবেন। প্রবাসীদের জন্যও একটি ডেডিকেটেড ওয়েবসাইট করছি। এর মাধ্যমে প্রবাসীরাও তাদের সমস্যা জানাতে পারবেন। সাড়ে চার কোটি আরএস ও সিএস খতিয়ানের মধ্যে পৌনে চার কোটি ডাটাবেজে আপলোড করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এগুলো সবাই অনলাইনে পাচ্ছে। বাকি ৫০ হাজার আপলোড করতে পারলেই এক্ষেত্রে শতভাগ হয়ে যাবে। মন্ত্রী বলেন, রেজিস্ট্রেশন বিভাগের অংশটায় বেশ সমস্যা রয়েছে। এটা ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে নয়, এটা আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে। রেজিস্ট্রেশন বিভাগটা যেহেতু আমার মন্ত্রণালয়ের অধীনে নয়, তাই আমি এখানে হাত দিতে পারছি না। তিনি আরও বলেন, এটা নিয়ে আমরা চিন্তা করছি না। আমরা ভূমি বিষয়ে ডিজিটালাইজেশনে যাচ্ছি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রীর উদ্দেশে ভূমিমন্ত্রী বলেন, যাতে তারা (আইন মন্ত্রণালয়) ডিজিটালাইজেশনের ক্ষেত্রে সমান স্তরে থাকতে পারে সেজন্য এটুআইয়ের সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া যায়। তিনি বলেন, পুরো সিস্টেমটা ডিজিটালাইজেশন হয়ে গেলে কে কোন মন্ত্রণালয়ে সেটা দেখার বিষয় থাকবে না। অনলাইনে কাজটা শেষ হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে হয়রানি বা কোন সমস্যা থাকবে না। মন্ত্রণালয় ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলের ভূমি আইন সংশোধন করে সময়োপযোগী করার উদ্যোগ নিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হটলাইন কল সেন্টার স্থাপনের মাধ্যমে ভূমি সম্পর্কিত সেবা অধিকতর সহজে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবে। সেবা গ্রহীতা যে কোন সমস্যায় পড়বেন সঙ্গে সঙ্গে হটলাইন কল সেন্টারে ফোন করলে তাকে লাইনে রেখই যে কর্মকর্তার কাছে ওই সেবা রয়েছে তাকে ফোন দেয়া হবে। বিষয়টি জেনে সেবা গ্রহণকারীকে সেবা প্রদান করা হবে কিংবা প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেয়া হবে। হটলাইন সেন্টারে প্রাথমিকভাবে ভূমি বিষয়ে অভিজ্ঞ একজন যুগ্মসচিব কিংবা অতিরিক্ত সচিবকে পদায়ন করা হবে। এছাড়া কল সেন্টারে থাকবেন অভিজ্ঞ সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার, উপসহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার, সার্ভেয়ার, ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা (তহশিলদার), নাজির এবং কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিরা। তারা যেহেতু দীর্ঘ চাকরি জীবনে মাঠপর্যায়ে ভূমি নিয়ে কাজ করেছেন সেহেতু তাদের রয়েছে ভূমি সম্পর্কিত বিরল সব অভিজ্ঞতা। তারা বিষয়গুলো ভাল বুঝবেন। তবে হটলাইন সেন্টারে কর্মরতদের জন্য বেতন ভাতার বাইরে বাড়তি কোন আর্থিক সুবিধা থাকছে না বলে জানান কর্মকর্তারা। প্রাথমিকভাবে প্রতি কর্ম দিবসে আট ঘণ্টা করে এই কল সেন্টার চালু থাকবে। দুই শিফটে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই সেন্টারে দায়িত্ব পালন করবেন। হটলাইন স্থাপনের জন্য বিটিআরসি থেকে শর্টকোড পাওয়া গেছে। শর্টকোড নম্বর হচ্ছে ১৬১২২। ভূমি মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের হটলাইন সেন্টার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের যোগাযোগ করে তাদের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা নেয়া হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মাঠ প্রশাসনে ভূমি সেবা সহজ করতে ইতোমধ্যে ৩০২টি উপজেলায় ই-নামজারি চালু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সকল উপজেলায় ই- নামজারি কার্যক্রম চালু করা হবে। ভূমি রেকর্ড ও ভূমি জরিপ অধিদফতর এটুআই প্রকল্পের সহায়তায় ইতোমধ্যে ১ কোটি ১ লাখ খতিয়ান অনলাইনে প্রকাশ করেছে। যা এখন অনলাইনে দেখা যায়। গত ফেব্রুয়ারি মাসে আর এস খতিয়ান সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুুক্ত করে দেয়া হবে। সাধারণ মানুষ প্রয়োজনমতো তার অংশটুকু দেখতে পারবে। প্রিন্ট করে নিতে পারবে না। ইতোমধ্যে এটুআই প্রকল্পের সহায়তায় ৩ কোটি ১০ লাখ ১৭ হাজার সিএস ও আর এস খতিয়ান অনলাইনে ডাটা এন্ট্রি করেছে। এই সব খতিয়ান সাধারণ মানুষ যাতে অনলাইনে দেখতে পায় সে জন্য এটুআই প্রকল্প থেকে নাগরিক কর্নার খুলেছে। এছাড়া গত ২৪ জানুয়ারি ই- নামজারি, আরএস খতিয়ান, এবং সিএস ও এসএ খতিয়ান অনলাইনে ফি জমা প্রদান সাপেক্ষে প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য একটি পেমেন্ট গেটওয়ে তৈরি করে দিয়েছে বলে জানা গেছে। ভূমি অফিসে হাইস্পিড ফাইবার অপটিক ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ ॥ ২০২১ সালের আগেই ইউনিয়ন পর্যায়ের ভূমি অফিসে হাইস্পিড ফাইবার অপটিক ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, প্রায় ৩০ লাখ মামলা কোর্টে পেন্ডিং রয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই হচ্ছে ভূমি সংক্রান্ত মামলা। ভূমি খাতটা পুরোপুরি ডিজিটালাইজেশন হয়ে গেলে মামলার জট অর্ধেক কমে যাবে।
×