ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আজ থেকে ১২ দিনের মানববন্ধন

ধাপে ধাপে আন্দোলন জোরদার করতে চাচ্ছে বিএনপি

প্রকাশিত: ১১:১৩, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ধাপে ধাপে আন্দোলন জোরদার করতে চাচ্ছে বিএনপি

শরীফুল ইসলাম ॥ রাজপথের আন্দোলনের বিষয়ে তাড়া নেই বিএনপির। তবে ধাপে ধাপে আন্দোলন জোরদার করতে চাচ্ছে দলটি। আজ রবিবার থেকে প্রথম ধাপে ১২ দিনব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচী শুরু করে পরবর্তীতে আরও কয়েক ধাপে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করার পর রাজপথে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচীতে যেতে চায় বিএনপি। এ জন্য ভেতরে ভেতরে ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। দলের সিনিয়র নেতাদের পাশাপাশি লন্ডনপ্রবাসী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করছেন। সূত্র জানায়, হঠাৎ করে রাজপথের কঠোর কর্মসূচী দিলে তা পালনের বিষয়ে সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা আগ্রহী হবে না বুঝতে পেরেই এবার কৌশল পরিবর্তন করেছে বিএনপি। সম্প্রতি তারেক রহমানের সঙ্গে দলের সিনিয়র নেতাদের স্কাইপি বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ধাপে ধাপে আন্দোলন জোরদার করার। এ ছাড়া ধাপে ধাপে স্বাভাবিক আন্দোলন কর্মসূচী পালনের পাশাপাশি সর্বস্তরে বিএনপি ও বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কমিটি পুনর্গঠনেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ সিদ্ধান্ত অনুসারে ছাত্রদলের কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের কথা থাকলেও আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে ছাত্রদলের কাউন্সিল না হওয়ায় দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছুটা হতাশা নেমে আসে। তবে শীঘ্রই আদালতের ঝামেলা মিটিয়ে ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠন করা হবে বলে জানা গেছে। বিএনপি হাইকমান্ডের নির্দেশ পেয়ে আন্দোলনের প্রথম ধাপের কর্মসূচী সফল করতে ইতোমধ্যেই দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন প্রস্তুতি জোরদার করতে শুরু করেছে। আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ঢাকা মহানগরসহ সারাদেশের প্রতিটি দলীয় ইউনিটই এ বিষয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এভাবে কয়েক ধাপ স্বাভাবিক আন্দোলন কর্মসূচী পালন করে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সক্রিয় করেই রাজপথে কঠোর আন্দোলন শুরু করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ধাপে ধাপে আন্দোলন জোরদার করবে বিএনপি। কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও মুক্তির দাবিতে ইতোমধ্যেই ১২ দিনের মানববন্ধন কর্মসূচী দেয়া হয়েছে। এ কর্মসূচী পালন শেষে আবারও পরবর্তী ধাপের কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে। আন্দোলন ছাড়া বিএনপির সামনে কোন বিকল্প নেই। লন্ডনপ্রবাসী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে গত ১২ সেপ্টেম্বর নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথসভা শেষে সংবাদ সম্মেলন করে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও মুক্তির দাবিতে ১২ দিনের মানববন্ধন কর্মসূচী ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপির তত্ত্বাবধানে কর্মসূচীগুলো দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন পালন করবে বলেও জানানো হয়। প্রথম ধাপে বিএনপির ১২ দিনব্যাপী কর্মসূচী অনুসারে আজ রবিবার মৎস্যজীবী দলের মানববন্ধন। এ ছাড়া ১৬ সেপ্টেম্বর সোমবার মুক্তিযোদ্ধা দলের মানববন্ধন, ১৭ সেপ্টেম্বর তাঁতী দলের উদ্যোগে মানববন্ধন, ১৮ সেপ্টেম্বর এ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (এইবি) এর মানববন্ধন, ১৯ সেপ্টেম্বর ডক্টরস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এর মানববন্ধন, ২০ সেপ্টেম্বর যুবদলের মানববন্ধন, ২১ সেপ্টেম্বর ওলামা দলের মানববন্ধন, ২২ সেপ্টেম্বর মহিলা দলের মানববন্ধন, ২৪ সেপ্টেম্বর কৃষক দলের মানববন্ধন, ২৫ সেপ্টেম্বর শ্রমিক দলের মানববন্ধন, ২৭ সেপ্টেম্বর এগ্রিকালচারিস্ট এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এ্যাব) এর মানববন্ধন এবং ২৮ সেপ্টেম্বর স্বেচ্ছাসেবক দলের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হবে। সূত্রমতে, ধাপে ধাপে আন্দোলন কর্মসূচী পালন করতে করতে আসন্ন শীত মৌসুম থেকেই রাজপথের আন্দোলন জোরদার করতে চাচ্ছে বিএনপি। এ জন্য সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সক্রিয় করার কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। এ কৌশলের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই রাজধানীতে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে শোডাউন করেছে দলের নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া আন্দোলন জোরদার করার আগে সারাদেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা সফর করবে বিএনপির সিনিয়র নেতারা। গতবছর ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকেই দলের সিনিয়র নেতারা রাজপথের আন্দোলনের কথা বলে আসছেন। কিন্তু আজ না কাল, কাল না পরশু এমন করতে করতে দেড় বছরেরও বেশি সময় পার করে ফেলেছে বিএনপি। এ সময়ের মধ্যে খালেদা জিয়ার মুক্তি কিংবা জামিন কিছুই না হওয়ায় দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা নেমে আসে। এ পরিস্থিতিতে আর সময় নষ্ট না করে ধীরে ধীরে রাজপথের আন্দোলন জোরদার করার কৌশল নেয় দলটি। সম্প্রতি দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে স্কাইপি বৈঠকে লন্ডনপ্রবাসী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আসছে শীত মৌসুমের মধ্যেই রাজপথের আন্দোলন জোরদার করার নির্দেশ দেন। এরপর দলের সিনিয়র নেতারা নিজেদের মধ্যে আরও ক’টি বৈঠক করে আন্দোলন শুরুর কৌশল নির্ধারণ করেন। রাজপথের কঠোর আন্দোলন শুরু হলে যেন দলের অধিক সংখ্যক নেতাকর্মীকে সক্রিয় করা যায় সে জন্যই ধাপে ধাপে স্বাভাবিক আন্দোলন কর্মসূচী চালিয়ে যাওয়ার কৌশল নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান বলেন, বিএনপির সামনে এখন আন্দোলনের বিকল্প কিছু নেই। আন্দোলনেই দাবি আদায় করে নিতে হবে। ইতোমধ্যেই প্রথম ধাপে ১২ দিনের মানববন্ধন কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে। আরও কর্মসূচী আসবে। আস্তে আস্তে রাজপথের আন্দোলন কর্মসূচী জোরদার করা হবে। বিএনপি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, কয়েক ধাপ স্বাভাবিক আন্দোলনের মাধ্যমে রাজপথের কঠোর আন্দোলনের প্রস্তুতি জোরদার করা হবে। এরপর দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মাঠে নামানোর মাধ্যমে রাজপথের আন্দোলন চাঙ্গা করার চেষ্টা করা হবে। আর এ আন্দোলনে যাতে সমমনা দলগুলোর সমর্থন পাওয়া যায় সে চেষ্টাও করা হবে। এ ছাড়াও আন্দোলন জোরদারের আগে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মত বিনিময় করা হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই খালেদা জিয়াকে মুক্তির দাবিতে আন্দোলন শুরুর কথা বলেছিল দলের একটি বড় অংশ। কিন্তু দলের অপর একটি অংশ মনে করে নির্বাচনের আগে আন্দোলন শুরু করলে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো বিএনপিকে ছাড়াই নির্বাচন করে ক্ষমতায় চলে যাবে আওয়ামী লীগ। তাই তারা বিএনপি হাইকমান্ডকে বোঝাতে সক্ষম হয় যে, আন্দোলন না করে নির্বাচনে অংশ নিলে ক্ষমতায় না গেলেও জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের মর্যাদা লাভ করে দলের অবস্থান সুদৃঢ় করার সুযোগ পাওয়া যাবে। কিন্তু তারা যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এত কম আসন পাবে এবং বিরোধী দলের মর্যাদাও হারাবে তা ভাবতে পারেনি বিএনপির কেউ। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর আবারও দলের একাংশ রাজপথে আন্দোলন শুরু করার দাবি তুলে। এ পরিস্থিতিতে লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচী দিতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতাদের চাপ দেয়। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে আন্দোলন কর্মসূচী দিলে তা সফল করা সম্ভব হবে না বলে তারা তারেক রহমানের এ নির্দেশ মানতে পারেননি। এ নিয়ে তারেক রহমান তাদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়। তবে তখন তারেক রহমানকে জানানো হয় আপাতত একটু পরিস্থিতি সামাল দিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে কোন সুরাহা না হলে আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচী দেয়া হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তির কোন সম্ভাবনা না দেখে আন্দোলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে ইতোমধ্যেই বরিশাল, চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগীয় সদরে ৩টি সমাবেশ করেছে বিএনপি। শীঘ্রই অন্য বিভাগীয় সদরেও সমাবেশ কর্মসূচী পালন করবে দলটি। তবে এ সমাবেশ কর্মসূচী তেমন সফল না হওয়ায় ধাপে ধাপে রাজপথের কর্মসূচী পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে বিএনপি নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। তাদের মতে ধাপে ধাপে স্বাভাবিক কর্মসূচী পালন করতে গিয়ে কোন ইস্যু পাওয়া গেলে রাজপথের আন্দোলন কর্মসূচী জোরদার করা হবে।
×