ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

এরা দেশের ৬৮ কারাগারে সাত বছরের বেশি আটক আছেন

৩১ আগস্টের মধ্যে ১৩৯ হাজতির বিচার নিষ্পত্তির নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

৩১ আগস্টের মধ্যে ১৩৯ হাজতির বিচার নিষ্পত্তির নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিচারের দীর্ঘ সূত্রতার বা বিলম্বে বিচারের কারণে দীর্ঘ ৭ বছরের উর্ধে দেশের ৬৮ কারাগারে ১৩৯ হাজতির বিচার ৩১ আগস্টের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এ নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানিয়ে সুপ্রীমকোর্টের মনিটরিং কমিটির কাছে সংশ্লিষ্ট বিচারকদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে এসব মামলায় সাক্ষীর হাজিরা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইডের প্যানেল আইনজীবী কুমার দেবুল দে ১৩৯ কারাবন্দীর বিষয়টি নজরে আনলে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেয়। এ সময় ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল ফরহাদ আহমেদ ও সহকারী এ্যাটর্নি জেনারেল ইউসুফ মাহবুব মোর্শেদ এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড দ্বিতীয় বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা বা বিলম্ব বিচারে সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে আটক ব্যক্তিদের তথ্য চেয়ে দেশের আটটি বিভাগের ৬৮টি কারাগারে গত বছরের ১৯ নবেম্বর চিঠি দেয় সুপ্রীমকোর্টের লিগ্যাল এইড। এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর কারা কর্তৃপক্ষ ২৫৬জনের তালিকা পাঠায়। লিগ্যাল এইড থেকে পাওয়া তালিকা অনুযায়ী, ঢাকা বিভাগে সাত বছরের বেশি সময় ধরে কারাবন্দী ৪৪জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৩জন, রাজশাহী বিভাগে ১৬জন, সিলেট বিভাগে ১২জন, বরিশাল বিভাগে ১জন, খুলনা বিভাগে ৫জন, রংপুর বিভাগে ১০জন ও ময়মনসিংহ বিভাগে ৮জন। সে তালিকা থেকে যাচাই-বাছায়ের পর রবিবার ১৩৯ কারাবন্দীর বন্দীদশা নজরে আনে লিগ্যাল এইড। আদেশের পর আইনজীবী কুমার বুল দে জনকণ্ঠকে বলেন,‘আগামী ৩১ অগাস্টের মধ্যে এসব কারাবন্দীদের মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশের পাশাপাশি আদালত বলেছে, এরপর এ নির্দেশনার বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানিয়ে সুপ্রীমকোর্টের মনিটরিং কমিটির কাছে সংশ্লিষ্ট বিচারকদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। ‘এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে এসব মামলায় সাক্ষীর হাজিরা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ দিকে সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড অফিসের কো-অর্ডিনেটর রিপন পৌল স্কু জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, এর আগেও বিচারের দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে ১০ ও ৫ বছরের অধিক যারা কারাগারে আটক আছেন তাদের তালিকা চাওয়া হয়েছিল। এর প্রেক্ষিতে কারাকর্তৃপক্ষ ৪৬২জনের তালিকা পাঠায়। তার মধ্যে ১০বছরের অধিক যারা বিচারের দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে আটক আছে এমন ৫৮জনের বিষয়ে আদালতের নজরে আনা হয়। এর মধ্যে ১৮জনের জামিন দেয়া হয়। ৯ বছরের উর্ধে ১৯জনের বিষয়ে আদালতের নজরে আনা হলে ২জন জামিন পান। বাকিদের বিষয়ে আদালত বিভিন্ন বিচারিক আদেশ দিয়ে মামলা নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেন। যার মধ্যে সিপন রিপনসহ ৪জনকে বিচারিক আদালত খালাস দিয়েছেন। ঐ চিঠিতে বলা হয়, সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি দেশের উচ্চ আদালতে সরকারী আইনী সেবা নিশ্চিতকরণে কাজ করে চলছে। নিম্ন আদালতে বিচারে জন্য প্রস্তুত হওয়া মামলাসমূহ সাক্ষ্যগ্রহণসহ নানাবিধ কারণে দীর্ঘ সময় ধরে অনিষ্পত্তি অবস্থায় রয়েছে। ফলে কার্যত সাজা হওয়ার পূর্বেই আটক বন্দী দীর্ঘদিন যাবত কারাভোগ করছেন। সরকারী আইনী সেবা সুনিশ্চিত করার তাদের একটি পূর্ণাঙ্গ ও হালনাগাদ তালিকা প্রয়োজন। ৭ বছরের উর্ধে আটক থাকা হাজতিদের তালিকা সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইডে পাঠালে অসচ্ছল হাজতিদের আইনী সহায়তা দেয়া করা সম্ভব হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। দেশের স্বল্প আয়ের ও অসহায় নাগরিকদের আইনী সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ২০০০ সালে ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন’ করা হয়। এ আইনের অধীনেই প্রতিষ্ঠা করা হয় জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা। সংস্থার অধীনে সুপ্রীমকোর্টসহ দেশের ৬৪ জেলায় লিগ্যাল এইড কমিটি বিনামূল্যে আইনী সেবা নিয়ে কাজ করছে।
×