ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করলেও দেশে প্রথম রাষ্ট্রভাষা দিবস পালন করা হয় ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ। ওইদিন বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে পালিত প্রথম হরতাল কর্মসূচীতে পুলিশী নির্যাতনের প্রতিবাদে প্রতি বছর ১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই মোতাবেক ’৪৯ সালে দ্বিতীয় ’৫০ সালে তৃতীয় এবং ’৫১ সালে চতুর্থবারের মতো প্রতি বছর রাষ্ট্রভাষা দিবস পালিত হয়। ১১ মার্চ ১৯৪৮ সালে প্রথম রাষ্ট্রভাষা দিবসের প্রাক্কালে ঢাকার সচিবালয়ের গেটে পিকেটিং করতে গিয়ে অনেক ভাষাকর্মী সেদিন আহত হন। অনেকে গ্রেফতার হন। ১১ মার্চের আন্দোলন শুধু ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না, পূর্ববাংলার সব জেলাতেই ছড়িয়ে পড়ে। ঐতিহাসিক ১১ মার্চের ঘটনা তাই ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। শুধু তাই নয় পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর এদেশে এটাই ছিল কোন হরতাল কর্মসূচী, যা ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। ১১ মার্চ প্রতিবাদের যে ভীত রচনা হয়েছিল তারই সূত্র ধরে তৎকালীন সরকার ১৫ মার্চ রাষ্ট্রভাষা চুক্তি করতে বাধ্য হয়। এই সংগ্রামের পূর্ণতা লাভ করে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে। ১১ মার্চ হরতালে পূর্বপাকিস্তানের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট, ঢাকা শহরের বিক্ষোভ মিছিল ও পিকেটিং করা হয়। ঢাকার সচিবালয়ের সামনের গেটে পিকেটিং করার সময় গ্রেফতার হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, কাজী গোলাম মাহবুব, শামসুল আলম, আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী, অলি আহাদ, শওকত আলী, রণেশ দাসগুপ্তসহ আরও অনেকে। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের আহ্বায়ক নাঈমুদ্দিন আহমদ এক বিবৃতিতে বলেন, হরতালের সময় ২০০ জন আহত, ১৮ জন গুরুতর আহত এবং ৯শ’ জন গ্রেফতার হন। ১১ মার্চের হরতালে সচিবালয়ের প্রথম গেটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শামসুল আলম অলি আহাদ, দ্বিতীয় গেটে কাজী গোলাম মাহবুব, খালেক নওয়াজ, শওকত আলী প্রমুখ পিকেটিং করেন। অন্যান্য স্থানে পিকেটিং ও বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দেন অধ্যাপক আবুল কাসেম, মির্জা মাজহারুল ইসলামসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। ১১ মার্চের গ্রেফতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের এক বিশাল অর্জন। মোনায়েম সরকার সম্পাদিত বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান : জীবন ও রাজনীতি’ শীর্ষক গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে, স্বাধীন পাকিস্তানের রাজনীতিতে এটাই তাঁর প্রথম গ্রেফতার। কাজী গোলাম মাহবুব ও শওকত আলী ১১ মার্চের হরতালে অদম্য সাহসিকতার পরিচয় দেন। বিশেষজ্ঞদের এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ওই হরতাল কর্মসূচী ছিল পাকিস্তান উত্তর প্রথম হরতাল এবং পাকিস্তানী শাসকদের বিরুদ্ধে প্রথম ব্যাপক ভিক্তিক গণআন্দোলন।
×