এ আর এম মামুন, চরফ্যাশন॥ প্যারিসের আইফিয়েল টাওয়ার আদলে নির্মিত উপমহাদেশের সর্বোচ্চ ওয়াচ টাওয়ার ভোলার চরফ্যাশনে জ্যাকব টাওয়ার। অত্যাধুনিক স্থাপত্যকলার নান্দনিক বৈভব। টাওয়ারটি সন্ধ্যার পর আলো ঝলমলে রঙিন হয়ে ওঠে। আর তার রোশনাই ছড়িয়ে পড়ে চারপাশের ফ্যাশন স্কায়ার। সামনের বিশাল পুকুরের স্বচ্ছ নীলাভ পানিতে রঙিন প্রতিচ্ছবি পড়ে টাওয়ারটির। শত শত মানুষ সেখানে এসে ভিড় করেন। তাঁদের কেউ একাকী, কেউ দলবদ্ধভাবে সেলফি তোলেন। কেউ আবার চেষ্টা করেন পানিতে পড়া প্রতিচ্ছবিসমেত টাওয়ারের ছবি ক্যামেরাবন্দী করতে। সন্ধ্যা থেকে অনেকটা রাত অবধি জ্যাকব টাওয়ার সংলগ্ন ফ্যাশন স্কয়ার এলাকাটি জমজমাট থাকে।
আগামী ২৪ জানুয়ারি বুধবার রাষ্ট্রপতি মো.আবদুল হামিদের এই টাওয়ার উদ্বোধনের কথা। এরপর থেকেই সর্বসাধারণের জন্য টাওয়ার খুলে দেওয়া হবে। দেখতে পারবেন চরাঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
দৃষ্টি নন্দন এই টাওয়ার দেখতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসছেন। টাওয়ারের পাশে প্রশস্ত খোলা চত্বর। ফ্যাসন স্কয়ার পুকুর। তার পাশে শিশু ও বিনোদন পার্ক। এতে আছে মজার মজার রাইড। পার্কের ভেতরে রয়েছে চারদিকে পাড় বাঁধানো পুকুর। পুরো স্থাপনার চারপাশ ঘিরে রয়েছে নকশা করা ইট বিছানো পায়ে হাঁটার পথ। সকাল-সন্ধ্যায় এলাকার স্বাস্থ্যসচেতন বহু নারী-পুরুষ এখন এই পথ ধরে হাঁটাহাঁটি করেন।
জানাগেছে, টাওয়ারটির উচ্চতা প্রায় ২১৫ ফুট। টাওয়ারটিতে লিফটের সংযোজনও করা হয়েছে। থাকছে উচ্চ ক্ষমতার বাইনোকুলার, যাতে ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকার নানা কিছু দেখা যাবে অনায়াসে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৮ তলা বিশিষ্ট ওই দৃষ্টিনন্দন টাওয়ারটি পর্যটকদের দারুণভাবে আকর্ষণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। সে লক্ষ্যে ইতিমধ্যে চর কুকরি-মুকরি, ঢালচরসহ আশপাশের বনাঞ্চলে ইকোপার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। ওয়াচ টাওয়ারে দাঁড়ালেই পশ্চিমে তেঁতুলিয়া নদীর শান্ত জলধারা, পূর্বে মেঘনা নদীর উথাল-পাতাল ঢেউ, দক্ষিণে চর কুকরি-মুকরিসহ বঙ্গোপসাগরের বিরাট অংশ নজরে আসবে।
পর্যটকদের সুবিধার্থে ইতোমধ্যে চর কুকরি মুকরি এলাকায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক বিলাসবহুল রেস্ট হাউসও নির্মাণ করা হয়েছে। রেস্ট হাউসে রয়েছে ১৮টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুম, সুইমিংপুল ও হেলিপ্যাডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভ্রমণপিপাসুদের কাছে চর কুকরী-মুকরী, ঢালচরসহ আশপাশের বনাঞ্চলে খুবই জনপ্রিয়।
চরফ্যাশন পৌর সভা সুত্রে জানাযায়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে খাসমহল মসজিদ ও ফ্যাশন স্কয়ার সংলগ্ন ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন। টাওয়ারটির ডিজাইনার হচ্ছেন বিশিষ্ট স্থপতি কামরুজ্জামান লিটন। ৭৫ ফুট মাটির নিচ থেকে ৭০টি পাথর ঢালাই পাইলিং ফাউন্ডেশনের ওপর নির্মিত টাওয়ারটি সম্পূর্ণ ইস্টিলের তৈরি। ৮ মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয় ওই টাওয়ারের চূড়ায় ওঠার জন্য সিঁড়ির পাশাপাশি রয়েছে ১৬ জন ধারণ ক্ষমতার অত্যাধুনিক ক্যাপসুল লিফট। টাওয়ারের চারদিকে অ্যালুমোনিয়ামের ওপর ৫ মিলি ব্যাসের স্বচ্ছ গ্লাস রয়েছে। এক হাজার বর্গফিটের ১৭তম তলায় থাকবে বিনোদনের নানা ব্যবস্থা। একসঙ্গে দুই শত পর্যটক সেখান থেকেই শক্তিশালী বাইনোকুলারের সাহায্যে কুকরি-মুকরি, তারুয়া দ্বীপসহ চারপাশের একশত বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত দেখা যাবে। এ ছাড়াও থাকবে বিশ্রাম, প্রাথমিক চিকিৎসা ও খাবারের সুব্যবস্থা।
চরফ্যাশনের টাওয়ারটির মূল উচ্চতা ১৮৫ ফুট। এর ওপর রয়েছে ৩০ ফুট দীর্ঘ সুদৃশ্য ফলক। ঢাকার কারওয়ান বাজার হাসনা টাওয়ারের ‘আর্কিটেক্ট ফোরাম’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান ওই প্রকল্পের কনসালটেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ‘ইউনুছ-আল মামুন জয়েন্ট ভেঞ্চার সরকার স্টিল’ কারওয়ান বাজার, ঢাকা। ২০১৩ সালের ফেব্র“য়ারি মাসে এর কাজ শুরু হয়। চলতি মাসে শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে। টাওয়ারটি এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: