ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আমেরিকার ২০০ সিটিতে নারীদের বিক্ষোভ

প্রকাশিত: ১৯:০১, ২১ জানুয়ারি ২০১৮

আমেরিকার ২০০ সিটিতে নারীদের বিক্ষোভ

অনলাইন ডেস্ক ॥ ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্ক, লসএঞ্জেলেস, সানফ্রান্সিসকো, ফ্লোরিডা, বস্টন, শিকাগো, ফিলাডেলফিয়া, কলরাডো, সিয়াটলসহ দুই শতাধিক সিটিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের বর্ষপূর্তির দিন শনিবার লাখ লাখ নারী বিক্ষোভ করেছেন। হাজার হাজার নারীর বিক্ষোভ দেখার সময় হোয়াইট হাউজের বারান্দায় ফার্স্টলেডি মেলানিয়াকে পাশে নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রোদ্রজ্জল আবহাওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে এক টুইট বার্তায় লিখেন, ‘আমাদের মহান এদেশের সর্বত্রই আজ চমৎকার আবহাওয়া। নারীদের মার্চ (মিছিল) করার জন্যে এটি অবশ্যই একটি ভালো দিন।’ ট্রাম্প উল্লেখ করেছেন, ‘অপ্রত্যাশিতভাবে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারসহ সমৃদ্ধি অর্জনে গেল বছরটি ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকার মত। গত ১৮ বছরের মধ্যে গেল বছরে সবচেয়ে কম নারী বেকার ছিলেন। এটিও কম বড় অর্জন নয়।’ প্রেসিডেন্সির বর্ষপূর্তির দিনটি অতিবাহিত হয় ফেডারেল শাটডাউনের মধ্য দিয়ে। ইমিগ্রেশনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ডেমোক্র্যাটরা আপদকালিন বাজেট বিলে ভোট না দেয়ায় ২০ জানুয়ারি প্রথম প্রহর থেকেই ফেডারেল সরকারের সকল কাজকর্ম (জরুরি কাজ চালু রয়েছে) বন্ধ হয়ে গেছে। এজন্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দোষারোপ করেছেন ডেমোক্র্যাটদের। অপরদিকে ডেমোক্র্যাটরা দোষছেন ট্রাম্পকে। ১৫ বছর বয়স হবার আগে মা-বাবার সাথে বেআইনী পথে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পর এখনও অভিবাসনের মর্যাদা পায়নি প্রায় ৮ লাখ তরুণ-তরুণী। এদেরকে ‘ড্রিমার’ হিসেবে অভিহিত করে ২০১২ সালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ‘ডেফার্ড এ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড এ্যারাইভাল’ তথা ‘ড্যাকা’ কর্মসূচি চালু করেছিলেন। এর মধ্য দিয়ে ঐসব তরুণ-তরুণীর বিরুদ্ধে জারিকৃত বহিষ্কারের আদেশ স্থগিত এবং ওয়ার্ক পারমিট ইস্যু করা হয় দু’বছর অন্তর নবায়নের শর্তে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত বছরের সেপ্টেম্বরে জারিকৃত এক নির্বাহী আদেশে সেই ড্যাকা কর্মসূচি বাতিল করেন। ৫ মার্চের পর ড্যাকা কর্মসূচির সকলকেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের প্রক্রিয়া শুরু হবে। ১৫/১৬ বছরের অধিক সময় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসর করে এদের প্রায় সকলেই হাই স্কুল অথবা কলেজ গ্র্যাজুয়েশন করেছেন। কখনোই জন্মগ্রহণ করা দেশে ফিরতে পারেননি। ‘এমনি অবস্থায় তাদেরকে ঐসব দেশে পাঠিয়ে দেয়ার অর্থ হবে হাত-পা বেঁধে গভীর সমুদ্রে নিক্ষেপের সামিল’-এমন যুক্তি দেখিয়ে ডেমোক্র্যাটরা অবিলম্বে ঐসব অবৈধ অভিবাসীসহ প্রায় সোয়া কোটি অবৈধ অভিবাসীর মধ্যে যারা কোন অপরাধে লিপ্ত নন-তাদেরকে শর্তসাপেক্ষে স্থায়ীভাবে বসবাসের বিধির পরিপূরক বিল উত্থাপন করেছেন। এই বিলে রিপাবলিকানদেরও অনেকের সমর্থন রয়েছে। আপদকালিন বাজেট পাশের সময়ই ‘ড্যাকা’ কর্মসূচি সম্প্রসারণসহ সমন্বিত অভিবাসন সংস্কার বিলের প্রতি রিপাবলিকানদের দ্ব্যর্থহীন সমর্থনের গ্যারান্টি চেয়েছেন ডেমোক্র্যাটরা। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি জানিয়েছেন মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তের ৭০০ মাইলে দেয়াল নির্মাণের জন্যে ১৮ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দের জন্যে। এমনি অবস্থায় বাজেট বিল পাশ না হওয়ায় ‘শাটডাউন’ হয়েছে ফেডারেল প্রশাসন। এমন নাজুক পরিস্থিতির কঠোর সমালোচনা করা হয় যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী নারীদের বিক্ষোভ-সমাবেশ থেকে। রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে লিংকন মেমরিয়্যাল পার্কের বিক্ষোভ-সমাবেশে বক্তৃতাকালে ইউএস সিনেটর (ডেমোক্র্যাট-নিউইয়র্ক) ক্রিস্টিন জিলিব্র্যান্ড (New York Sen. Kirsten Gillibrand) বলেছেন, ‘মার্কিন কংগ্রেসে আরো বেশী নারী দরকার। তাই নভেম্বরের নির্বাচনে যেন নারীরাও প্রার্থী হন। সিনেটর জিলিব্র্যান্ড উল্লেখ করেন, ‘এক বছর আগে এদিনে ট্রাম্প শপথ নেয়ার দিনও সর্বকালের বৃহত্তম নারী সমাবেশ হয়েছে। সে সময়েই আমরা সতর্ক করেছিলাম যে, ট্রাম্পের হাতে আমেরিকা নিরাপদ নয়। আমেরিকার ইতিহাস স-ঐতিহ্য আজ হুমকির মুখে এমন ব্যক্তির কর্মকান্ডে। তাই মহিলাদের আরো সোচ্চার হতে হবে।’ নিউইয়র্কের সমাবেশ থেকে হাইতি, আফ্রিকা, মেক্সিকোসহ বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের সম্পর্কে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্যকে অমার্জনীয় অপরাধ হিসেবে অভিহিত করে নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানদের কংগ্রেস থেকে হঠানোর সংকল্প ব্যক্ত করা হয়। এ সমাবেশে বাংলাদেশি নারীরাও ছিলেন সন্তানসহ। তারাও ট্রাম্পের অভিবাসন-বিরোধী অভিযানকে অ-আমেরিকান হিসেবে অভিহিত করেন।
×