ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিরুদ্ধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর ॥ শিক্ষামন্ত্রী

প্রকাশিত: ০০:৪৯, ১৪ জানুয়ারি ২০১৮

প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিরুদ্ধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর ॥ শিক্ষামন্ত্রী

সংসদ রিপোর্টার ॥ পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে। যারা প্রশ্নপত্র ফাঁসের অপপ্রয়াস চালায় তাদের বিরুদ্ধেও ইতোমধ্যে মামলা করা হয়েছে। এ ধরণের অপরধের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের চার বছর পর্যন্ত কারাদন্ড কিংবা অর্থদন্ড অথবা উভয়বিধ দন্ডে দন্ডিত করার বিধান রয়েছে। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে রবিবার সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আরও জানান, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাসহ পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত তৎপর রয়েছে। তারা ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত একটি চক্রকে সনাক্ত ও গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে। শিক্ষামন্ত্রী আরও জানান, ইতোপূর্বে পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত কিছু অসাধু শিক্ষককেও আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়া মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অপরাধীদেরকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নপত্র আপলোডকারীদের গ্রেফতার করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মামলা করা হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধে গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী জানান, প্রশ্নপত্র প্রণেতা সংশ্লিষ্ট বোর্ডে উপস্থিত থেকে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করছেন। প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারীর ও পরিশোধনকারীর গোপনীয়তা রক্ষায় শপথ এবং এ বিষয়ে লিখিত অঙ্গীকারনামা নেওয়া হচ্ছে। অধিকাংশ বোর্ডের মডারেশন কক্ষে পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারী ও পরিশোধনকারী মনোয়নের ক্ষেত্রে সৎ, যোগ্য মেধাবী এবং মাস্টার ট্রেনিং প্রাপ্ত শিক্ষকদের অগ্রাধিকার প্রদান করা হচ্ছে। বিজি প্রেসে প্রশ্নপত্র মুদ্রণের সঙ্গে জড়িতদেরকে গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারীতে রাখা হয়েছে। কোচিং বাণিজ্য বন্ধে নীতিমালা ॥ একই প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী জানান, দেশে কোচিং বাণিজ্য বন্ধে ’শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য মেট্টোপলিটন- বিভাগীয় পর্যায়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পৃথক পৃথক মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব কমিটি স্ব স্ব অধিক্ষেত্রে তৎপর রয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম চলাকালীন শ্রেণী সময়ের মধ্যে কোন শিক্ষক কোচিং করাতে পারবেন না। তিনি জানান, কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে কোচিং বাণিজ্য জড়িত শিক্ষকগণের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এ সকল কমিটির তৎপরতায় কোচিং বাণিজ্য বন্ধে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। এছাড়া বাস্তবতা পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে, সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যে সকল শিক্ষক দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে কর্মরত আছেন তাদের অধিকাংশের ক্ষেত্রে কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা রয়েছে। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এরূপ শিক্ষকদের বদলী-পদায়নের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী জানান, শিক্ষা ক্ষেত্রে যে কোন ধরণের দুর্নীতির বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সকল সময় কঠোর অবস্থান নীতি অবলম্বন করে আসছে। সম্প্রতি দুর্নীতির দায়ে একজন কর্মকর্তাকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় হাতেনাতে গ্রেফতার করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে এ কার্যক্রম ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-ছাত্রের অনুপাত ১ঃ ২০ ॥ সরকার দলীয় সংসদ সদস্য দিদারুল আলমের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী জানান, বর্তমানে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত ১ ঃ ২০। ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৩১ লাখ ৫০ হাজার ৪০৯ জন ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়ন করছে। এর মধ্যে ছাত্র ১৭ লাখ ৫৭ হাজার ৩২৭ এবং ছাত্রী ১৩ লাখ ৯৩ হাজার ৮২ জন। এর মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাধিক ৩৬ হাজার ২৫১ ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়ন করছে। সরকার দলীয় অপর সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, দেশের প্রতিটি জেলায় সরকার-বেসরকারি উদ্যোগে প্রয়োজনে অন্তত একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। দেশে বর্তমানে মোট ৪০টি সরকারি এবং ৯৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। আইন ও বিচার বিষয়ে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির লক্ষ্যে দেশের সাধারণ ধারার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আইন বিষয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে অধ্যয়নের সুযোগ রয়েছে। তাই দেশে স্বতন্ত্র আইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা সরকারের আপাতত নেই।
×