ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নড়াইলে রোপা আমনে পোকার আক্রমণ ॥ দিশেহারা কৃষক

প্রকাশিত: ০১:২৮, ২১ অক্টোবর ২০১৭

নড়াইলে রোপা আমনে পোকার আক্রমণ ॥ দিশেহারা কৃষক

রিফাত-বিন-ত্বহা, নড়াইল ॥ নড়াইলে রোপা ইরি ও আমন ধানে বাদামি গাছ ফড়িং(বিপিএইচ) কারেন্ট পোকার আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন কৃষক। পোকার আক্রমণে ধান গাছ প্রথমে হলুদ ও পরে শুকিয়ে বাদামী রং ধারন করেছে। মাঠের পর মাঠ জুড়ে পোকার আক্রমণে কীটনাশক ছিটিয়েও কোন ফল পাচ্ছে না কৃষকেরা। এখন বিস্তৃত ফসলের মাঠ জুড়ে শুধু পোকা আর পোকা। এদিকে পোকা দমনে বাজারে প্রয়োজনীয় কীটনাশক না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ছেনে কৃষকেরা। তাদের আশংকা, সময় মতো পোকা দমন করতে না পারলে এবার রোপা ইরি ও আমন উৎপাদন ব্যহত হতে পারে। সরেজমিন ঘুরে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার ৩৫ হাজার ২৮৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে লোহাগড়া উপজেলায় রোপা আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিল প্রায় ৭ হাজার ৪ শত ২০ হেক্টর জমিতে। এর বিপরীতে ধান চাষ হয়েছে ৯ হাজার ৭শত ৮০ হেক্টরে। নড়াইল সদর উপজেলায় দেড় হেক্টর এবং লোহাগড়া উপজেলায় ২ হেক্টর জমিতে সর্বমোট সাড়ে ৩ হেক্টর জমিতে বাদামি গাছ ফড়িং পোকার আক্রমণ হয়েছে। নড়াইল সদর উপজেলার চন্ডিববরপুর, হবখালী ও লোহাগড়া উপজেলার নলদী, লাহুড়িয়া, শালনগর ও নোয়াগ্রাম ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকার অন্তত ২’শ হেক্টর জমির রোপা আমন ধানে বাদামি গাছ ফড়িং পোকার আক্রমণ হয়েছে। তবে কৃষকের কাছে এটি কারেন্ট পোকা নামে পরিচিত। সরেজমিন ঘুরে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,লোহাগড়া উপজেলার মল্লিকপুর, ইতনা, কোলা-দিঘলিয়া,কালনা,চরকালনা,বাঁকা,সিংগা,পাচুড়িয়া, মোচড়া, শালবরাত, জয়পুর, নারানদিয়া,মানিকগঞ্জ,রামকান্তপুর, চর শালনগর, মিঠাপুর, লাহুড়িয়া এলাকার ধানক্ষেত মাঠে যেখানে থাকবে সবুজের সমারোহ, সেখানে মাঠের পর মাঠ ফসল বিবর্ণ হয়ে শুকিূেয় পড়েছে। এসব ধান ক্ষেতে কৃষকরা বিষ প্রয়োগ করেও ধানের ক্ষেত বাঁচাতে পারছেন না। এ পোকার আক্রমন এতটাই ভয়াবহ যে, পোকা এক মাঠ থেকে অপর মাঠে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। স্থানীয় কৃষকরা এ পোকার নাম দিয়েছে কারেন্ট পোকা। আক্রান্ত ধানের ক্ষেত মুহুুর্তের মধ্যে বাদামি রং ধারণ করছে। নোয়াগ্রামের কৃষক সৈয়দ মাসুম জানান, কারেন্ট পোকার আক্রমণে ক্ষেতের মাঝে মাঝে ধান মরে খড়ে পরিণত হচ্ছে। বাজারের কীটনাশক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে পাইরাজিন, স্ক্রজারসহ বিভিন্ন ধরনের ওষুধ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু একটি জমিতে কীটনাশক দিলে পোকাগুলি উড়ে পাশের জমিতে আক্রমণ করছে। এই পোকা দমন করতে হলে একসঙ্গে পুরো বিলে ছিটাতে হবে। আমাদা-ঝিকড়া গ্রামের কৃষক তরিকুল ইসলাম জানান, কৃষকের মুখে হাসি নেই। তারা পাগলের মতো জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করছে। তাতেও কাজ হচ্ছে না। মল্লিকপুর গ্রামের কৃষক জিরু মিয়া জানান, বাদামী গাছ ফড়িং (বিপিএইচ) বা কারেন্ট পোকা রোপা ইরি ও আমন ক্ষেতে ছড়িয়ে পড়েছে । ধান গাছে থোড় আসার পর পোকার আক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে। পোকার ডিম থেকে বেরিয়ে আসা বাদামী গাছ ফড়িংয়ের বাচ্চা ও পূর্ণ বয়ষ্ক উভয় পোকা দলবদ্ধ ভাবে ধান গাছের গোড়ার দিকে অবস্থান করে গাছ থেকে রস খেয়ে ফেলছে। আর এ কারণে গাছ দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে। পোকার আক্রমণে ধান গাছ প্রথমে হলুদ ও পরে শুকিয়ে বাদামী রং ধারন করেছে। নড়াইলের নলদী, মানিকগঞ্জ ও লোহাগড়া বাজারের কীটনাশক ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিদিনই শত শত কৃষক কারন্টে পোকা দমনের জন্য কীটনাশক কিনতে আসছেন। কিন্তু বাজারে কীটনাশকের সরবরাহ কম থাকার কারণে প্রয়োজনীয় কীটনাশক না পেয়ে অনেক কৃষকই হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। উপজলো কৃষি র্কমর্কতা সমরেন বিশ্বাস সাংবাদিকদের জানান, এই পোকার নাম বাদামী গাছ ফড়িং (বিপিএইচ)। স্থানীয় ভাবে এই পোকাকে কৃষকরা কারেন্ট পোকা বলছেন। কৃষকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য এরই মধ্যে এ সর্ম্পকিত প্রচারপত্র বিতরণ করা হয়েছে। পৌরসভাসহ উপজেলার ১২ টি ইউনিয়নে কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা পোকা দমনে তৎপর রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নড়াইলের উপ-পরিচালক শেখ আমিনুল হক সাংবাদিকদের জানান, নড়াইল সদর উপজেলায় দেড় হেক্টর এবং লোহাগড়া উপজেলায় ২ হেক্টর জমিতে সর্বমোট সাড়ে ৩ হেক্টর জমিতে বাদামি গাছ ফড়িং পোকার আক্রমণ হয়।
×