কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশ সঠিক অবস্থানে রয়েছে বলে মনে করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এছাড়া সংস্থাটি রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরিয়ে নিতে কোফি আনান কমিশনের সুপারিশমালার বাস্তবায়ন চেয়েছে। বুধবার ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডেলিগেশন প্রধান ও রাষ্ট্রদূত রেনসে তিরিঙ্ক এসব কথা বলেন। বুধবার রাজধানীর লেকশোর হোটেলে কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিক্যাব আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠান ‘ডিক্যাব টক’য়ে বক্তব্য রাখেন।
ডিক্যাব আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে নব নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেনসে তিরিঙ্ক বাংলাদেশ ও ইইউয়ের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ডিক্যাব সভাপতি রেজাউল করিম লোটাস ও সাধারণ সম্পাদক পান্থ রহমান।
রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থান জানতে চাইলে রেনসে তিরিঙ্ক বলেন, ইইউ সম্প্রতি মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তাদের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, তা এটির (রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান) বিরুদ্ধে প্রতীকী হিসেবে ব্যবস্থা। রোহিঙ্গা সঙ্কট মিয়ানমারকে সমাধান করতেই হবে। অবশ্যই নিরাপদ ও নির্বিঘেœ রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন করতে হবে মিয়ানমারকে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, এতো কম সময়ে এতো রোহিঙ্গা শরণার্থীর পালিয়ে আসা এখানে মানবিক সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। এ সঙ্কট মোকাবেলায় সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমাদের সকলকে সহযোগিতা করে যেতে হবে।
তিনি জানান, রোহিঙ্গা সঙ্কট দেখতে আগামী ৩০ অক্টোবর ঢাকায় আসবেন ইইউ’র মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কমিশনার ক্রিস্টেস স্টাইলিনিডিস। ৩১ অক্টোবর তিনি কক্সবাজারে যাবেন। সেখান থেকে ফিরে এ বিষয়ে ইইউ’র অবস্থান জানাবেন। রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিয়ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে বলেও জানান রেনসে তিরিঙ্ক।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত তিরিঙ্ক বলেন, আমরা মিয়ানমারকে চাপ দেব, কিন্তু কীভাবে ? এ দেশটি অনেকদিন চোখের আড়ালে ছিল। এখন আবার মিয়ানমারে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে চীন। সেজন্য একটি জটিল প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে, এটা কীভাবে সমাধান হবে। তবে চীনের ভূমিকা এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর যে নির্যাতন হয়েছে, ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, এসব ধ্বংসের চিত্র আমরা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে জানতে পারছি।
রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কটের প্রেক্ষিতে এই ইস্যুটি বিশ্ব নজরে আনতে সক্ষম হয়েছে। রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানে চীন ও ভারতের ভূমিকা থাকতে পারে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ সঠিক অবস্থান নিয়েছে। কেননা এটিকে মানবিকভাবে দেখতে হবে। সম্প্রতি ইইউও এ ধরনের সঙ্কটে পড়েছে। যারাই সহযোগিতা করতে চায় তাদের তা করতে দেয়া উচিত।
এক প্রশ্নের উত্তরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কটের প্রেক্ষিতে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে এখনও আমরা ইতিবাচক ভূমিকা দেখতে পারছি না। তবে সঙ্কট সমধানে সকল ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
ঢাকায় নব নিযুক্ত এই রাষ্ট্রদূত বলেন, আমি এক মাস হলো এ দেশে এসেছি। এরই মধ্যে বাংলাদেশের উষ্ণ অভ্যর্থনা আমাকে বিমোহিত করেছে। তিনি জানান, বাংলাদেশ ইইউর বাজারে কোটা-ফ্রি সুবিধা পায়। যা দু’পক্ষের বাণিজ্য প্রসারে ভূমিকা রাখছে। সামনের বছরে বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচন হবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, এ সময়টা এই দেশের জন্য একটি কঠিন সময়। নির্বাচনের সময় আমন্ত্রণ জানালে পর্যবেক্ষক পাঠাবে ইইউ।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে এখন আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়ছে। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটান বিবিআইএন উদ্যোগ নিয়েছে। এটা খুবই ইতিবাচক একটি উদ্যোগ। এর মধ্য দিয়ে আঞ্চলিক যোগাযোগ আরও বাড়বে।
রেনসে তিরিঙ্ক বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। ব্যবসা, বাণিজ্য ছাড়াও শ্রমিক অধিকার, শিশু শিক্ষা, মানবাধিকার রক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি ইস্যুতে উভয়পক্ষ কাজ করছে। আগামী দিনেও উভয়পক্ষের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রগুলো সম্প্রসারিত হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: