ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সার্চ কমিটি প্রত্যাখ্যান না করলেও নিরপেক্ষ ইসি নিয়ে সংশয় বিএনপির

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২৮ জানুয়ারি ২০১৭

সার্চ কমিটি প্রত্যাখ্যান না করলেও নিরপেক্ষ ইসি নিয়ে সংশয় বিএনপির

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সার্চ কমিটি নিরপেক্ষ হয়নি অভিযোগ করলেও এই কমিটি প্রত্যাখ্যান করেনি বিএনপি। শুক্রবার সকালে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাষ্ট্রপতি গঠিত সার্চ কমিটির কঠোর সমালোচনা করে বক্তব্য দিলেও এ কমিটি তারা প্রত্যাখ্যান করবেন না বলে জানান। পাশাপাশি তিনি বলেন, এই সার্চ কমিটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করতে পারবে না। উল্লেখ্য, বুধবার সার্চ কমিটি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বিএনপির মুখপাত্র ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, এ কমিটি প্রত্যাখ্যান করবে বিএনপি। মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার প্রস্তাব উপেক্ষা করে সার্চ কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতি জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন। কারণ, জনগণ আশা করেছিল সার্চ কমিটি নির্দলীয় এবং বিতর্কিত নন এমন ব্যক্তিদের দিয়ে গঠিত হবে। কিন্তু এই কমিটিকে নির্দলীয় কিংবা নিরপেক্ষ বিবেচনা করার কোন অবকাশ নেই। তাহলে কি সার্চ কমিটি আপনারা প্রত্যাখ্যান করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখানে প্রত্যাখ্যান করা বা না করার কোন বিষয় নেই। যখন নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে তখন এই প্রশ্ন আসতে পারে। আমরা এখন সার্চ কমিটির বিষয়ে আমাদের দলীয় মতামত বা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছি। সার্চ কমিটি পুনর্গঠনের কোন আবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে করবেন কি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না, আমরা কোন আবেদন করব না। ফখরুল বলেন, গঠিত সার্চ কমিটিকে নির্দলীয় কিংবা নিরপেক্ষ বিবেচনার করার কোন অবকাশ না থাকলেও সরকারী দলের নেতারা বলছেন, তারা নাকি নিরপেক্ষ। আমরা ভোটারহীন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন সরকারের এই স্বৈরাচারী আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা মনে করি, এমন একটি সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, সৎ, সাহসী, মেধাবী ও যোগ্য ব্যক্তিগণ নতুন নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান কিংবা সদস্য হবেন, এমনটা আশা করাও বাতুলতা মাত্র। আমরা এই ঘটনার মাধ্যমে আগামী নির্বাচনকে প্রভাবিত করার সরকারী ষড়যন্ত্র সম্পর্কে দেশবাসীকে হুঁশিয়ার হতে এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে বাধ্য করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিচ্ছি। দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের সমঝোতায় কূটনৈতিক উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা জাতিসংঘের যে কোন উদ্যোগকে সমর্থন করছি, আগেও করেছিলাম। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, জাতিসংঘ যে উদ্যোগ নেয়, এ সরকার তার আশপাশ দিয়েও যায় না। আর জাতিসংঘও এ সরকারকে সেই উদ্যোগ গ্রহণ করতে বাধ্য করতে পারে না। তবে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে আমরা যে কোন আন্তর্জাতিক উদ্যোগকে স্বাগত জানাব। বিএনপি মহাসচিব বলেন, সার্চ কমিটিতে ক্ষমতাসীন সরকারের ইচ্ছা পূরণে সহযোগিতায় পুরস্কৃত এবং আওয়ামী পরিবারের বিশ্বস্ত সদস্যদের অন্তর্ভুক্তি শুধু একে বিতর্কিতই করেনি, এর মাধ্যমে জনমতকে অগ্রাহ্য করার আরেকটি অগণতান্ত্রিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে। সার্চ কমিটির প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন সম্পর্কে ফখরুল বলেন, তিনি ২০১২ সালে গঠিত সার্চ কমিটিরও প্রধান ছিলেন। যে কমিটির প্রস্তাবক্রমে রকিব উদ্দীন কমিশনের মতো একটি অযোগ্য, অনুগত, মেরুদ-হীন ও বিতর্কিত কমিশন নিযুক্ত হয়। সেই কমিটির প্রধানকেই নতুন সার্চ কমিটির প্রধান করার অর্থ হলো, সরকার রকিব উদ্দীন কমিশনের মতোই আরেকটা অনুগত ও অযোগ্য নির্বাচন কমিশন নিয়োগ করতে চায়। মির্জা ফখরুল বলেন, সার্চ কমিটির সদস্য বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের (বাকশালের ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্রলীগ) কেন্দ্রীয় নেতা এবং ওকালতি জীবনে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার পিতা ডাঃ আখলাকুল হোসাইন ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা এবং নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থেকে ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। তার ছোট ভাই এখন প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব হিসেবে কর্মরত। পিএসসি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় ইসি সচিবের দায়িত্বে ছিলেন। নানা অনিয়মে ভরা ওই নির্বাচনকে নিয়মসিদ্ধ করার পুরস্কার হিসেবে অবসর গ্রহণের পর তাকে রাজনৈতিক বিবেচনায় চুক্তি ভিত্তিতে পিএসসির চেয়ারম্যান করা হয়েছে। অনুগ্রহভাজন এবং সহকর্মীদের কাছে আওয়ামী ঘরানার সক্রিয় সমর্থক হিসেবে পরিচিত এই আমলা সরকারের ইচ্ছা পূরণে সচেষ্ট থাকবেন, এটাই স্বাভাবিক। মির্জা ফখরুল বলেন, সার্চ কমিটির একমাত্র নারী সদস্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উপউপাচার্য অধ্যাপক শিরীণ আখতারের পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগ পন্থী শিক্ষক হিসেবে ২০১৪ সালের শিক্ষক সমিতির সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। তার পিতা মরহুম আফসার কামাল চৌধুরী কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তিনি নিজেও কক্সবাজার মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী ছিলেন। আর সিএজি মাসুদ আহমেদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা না থাকলেও একজন সরকারী কর্মকর্তা হয়ে তিনি সরকারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করতে পারবেন না। তবে সার্চ কমিটির অন্য সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের বিষয়ে কোন আপত্তি তোলেননি মির্জা ফখরুল। খালেদা জিয়ার দেয়া প্রস্তাব অনুসারে অবসরপ্রাপ্তদের দিয়ে সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাবের যৌক্তিকতা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, এর উদ্দেশ্য ছিল, সার্চ কমিটির কোন সদস্য সরকারের অধীনস্থ হবেন না, দায়বদ্ধ থাকবেন না, অনুগ্রহভাজন হবেন না এবং স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতি খালেদা জিয়ার প্রস্তাব গ্রহণ না করেই সার্চ কমিটি গঠন করলেন। সার্চ কমিটি বিতর্কিত করলে বিএনপিরই ক্ষতি হবে বলে আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ যে কথা বলেছেন তার প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, তোফায়েল আহমেদ আমাদের বলছেন অপেক্ষা করার জন্য। আসলে এরকম কথাবার্তা বলে তারা আমাদের ভুল পথে পরিচালিত করতে চান। তবে সেটা আমরা হচ্ছি না, নিশ্চিত থাকতে পারেন। আমরা মনে করি, এই সার্চ কমিটি কোনদিনই নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করতে পারবে না। তাই নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ছাড়া কি করে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে জনমনে সে আশঙ্কা থেকেই যাবে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, ডাঃ এজেডএম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
×