ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম দফায় সোমবারের মধ্যে মনোনয়নপত্র দাখিল

ইউপি নির্বাচন নিয়ে সরগরম তৃণমূলের রাজনীতি

প্রকাশিত: ০৫:০০, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ইউপি নির্বাচন নিয়ে সরগরম তৃণমূলের রাজনীতি

শাহীন রহমান ॥ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে বইছে নির্বাচনী আমেজ। চায়ের চুমুক থেকে শুরু করে হাটবাজারসহ তৃণমূলে আলোচনার মুখ্য বিষয় হয়ে উঠেছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। সাধারণ মানুষের আলোচনায় উঠে আসছে কেমন হবে প্রথমবারে মতো দলীয় ভিত্তিতে ইউপি নির্বাচন। দলের প্রার্থী কারা হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের পরেই সাধারণ মানুষের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। তাই এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের আগ্রহ অনেক বেশি। তাই তফসিল ঘোষণার পর তৃণমূলে রাজনীতিও এখন অনেক চাঙ্গা। রাজনীতি আবর্তিত হচ্ছে মূলত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই। ইসির তফসিল অনুযায়ী আগামী সোমবারের মধ্যে প্রথম দফায় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে। ফলে ইউপি নির্বাচনে শেষ মুহূর্তে প্রার্থী বাছাই নিয়েও রাজনৈতিক দলের মধ্যে জোর প্রচেষ্টা চলছে। আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে তাদের প্রার্থী বাছাই সম্পন্ন করেছে। তবে জানা গেছে, প্রার্থী বাছাই নিয়ে বিএনপিতে কিছুটা জটিলতা দেখা দিয়েছে তৃণমূল থেকে একাধিক প্রার্থীর নাম সুপারিশ করে পাঠানোর কারণে। এছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ চলছে। দলের প্রত্যয়ন পেতে আগ্রহী প্রার্থীরাও তাকিয়ে আছেন কেন্দ্রের দিকে। প্রথমবারের মতো ইউপি নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন প্রার্থীদের মধ্যে বাড়তি উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। আইন অনুযায়ী দলীয় প্রার্থী হতে হলে দলীয় প্রত্যয়নপত্র থাকতে হবে। তবে কেউ দলের প্রার্থী হতে না পারলে স্বতন্ত্র নির্বাচনের সুযোগ রয়েছে। ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে ইসির পক্ষ থেকে বড় কোন শর্ত আরোপ করা হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে দলীয় প্রত্যয়ন পেতে ব্যর্থ হলে অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। আর দলের এ বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে পৌরসভার মতো ইউনিয়ন পরিষদে শঙ্কার মধ্যে রয়েছে বড় দুটি রাজনৈতিক দল। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে দু’ দফায় তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। প্রথম দফায় ৭৩৯ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের আগামী সোমবারের মধ্যে তাদের মনোনয়পত্র দাখিল করতে হবে। তবে এ নির্বাচনে যারা দলীয় প্রার্থী হবেন তাদের জন্য শর্ত হিসেবে রয়েছে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দলের প্রত্যয়ন পত্র জমা দিতে হবে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মেনে ইসির নিবন্ধত বড় রাজনৈতিক দলগুলোসহ ২১টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনের জন্য ইসিতে তাদের প্রার্থীর প্রত্যায়নের ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম, পদবি ও নমুনা স্বাক্ষর জমা দেয়া হয়েছে। ইসি বলছে প্রার্থী প্রত্যয়নের ক্ষমতা যাদের দেয়া হয়েছে রিটার্নিং কর্মকর্তারা মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে প্রত্যয়নপত্রে ব্যক্তির নাম, পদবিও যাচাই করে দেখবেন। পৌরসভার মতোই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রত্যয়নের ক্ষমতা দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ হাতেই রেখে দিয়েছেন। তবে বিএনপির প্রার্থী প্রত্যয়নে এবারে পরিবর্তন আনা হয়েছে। দলের নেতারা বলছেন, পৌরসভা নির্বাচনের সময় ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জেলে থাকায় যুগ্ম মহাসচিব মোঃ শাজাহান প্রার্থীদের প্রত্যয়নপত্র দেন। কিন্তু ইউপিতে প্রার্থী প্রত্যয়নের দায়িত্ব এবারে দেয়া হয়েছে দলীয় ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে। এছাড়া পৌরসভা নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর প্রত্যয়নের ক্ষমতা দলের চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের কাছে থাকলেও ইউনিয়ন পরিষদের সে ক্ষমতা দেয় হয়েছে দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হওলাদারের ওপর। ইসি জানিয়েছে, গত ১১ ফেব্রুয়ারি প্রথম দফায় ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে তাদের দলের প্রার্থী মনোনয়নে ক্ষমতা প্রাপ্ত ব্যক্তির, নাম, পদবি ইসিতে জমা দেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। এজন্য গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় সীমা বেঁধে দেয়া হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গত বৃহস্পতিবার ৪০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মাত্র ২১টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম পদবি ইসিতে জমা দিয়েছে। তবে ইসি জানিয়েছে ইউপিতে অংশ নেয়া রাজনৈতিক দলগুলোর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ইউপিতে অংশ নিতে যাওয়া এসব দলের মধ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, গণফোরাম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, জাতীয় পার্টি- জেপি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। তবে ২১টি রাজনৈতিক দল এখন পর্যন্ত ইউপিতে তাদের অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও আগের সব নির্বাচনের মতো এ নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগের নৌকার মার্কার সঙ্গে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের। বিগত পৌরসভা নির্বাচনেও মূলত এ দুটি দলের মধ্যেই প্রতিযোগিতা সীমাবদ্ধ ছিল। জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল পৌরসভায় অংশ নিলেও ফলাফলে তারা সুবিধা করতে পারেনি। বেশিরভার পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়লাভ করলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিল বিএনপির প্রার্থীরা। এবার তার কোন ব্যতিক্রম দেখছেন না বিশ্লেষকরা।
×