ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসে দিনব্যাপী কর্মসূচী পালন

মানব পাচারে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:২১, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫

মানব পাচারে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিরাপদ অভিবাসন ও প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেয়া হবে। নিরাপদ অভিবাসন নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে একটি আইনের খসড়া তৈরিও করেছে। নতুন আইনের ওপর সুশীল সমাজের মতামতও নেয়া হয়েছে। এখন এটি আইন মন্ত্রণালয়ে ‘ভেটিং’র জন্য পাঠানো হবে। ভেটিং শেষে আইনটি সংসদে পাস করার কথা রয়েছে। নতুন আইনে কর্মীদের সঙ্গে প্রতারণা করলে ৫ বছরের সর্বোচ্চ শস্তি ও জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া মানব পাচারের ক্ষেত্রে মৃত্যুদ-ের বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস-২০১৫ উপলক্ষে শুক্রবার রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ কথা উঠে এসেছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় অভিবাসী দিবস উপলক্ষে শুক্রবার দিনব্যাপী কর্মসূচী পালন করেছে। সকাল ৮টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা থেকে র‌্যালি বের করা হয়। আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন বিদেশে থাকার পর ফিরে আসা প্রবাসী কর্মীরা নিজেদের সামাজিক অবস্থার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারেন না। সরকার তাদের পুনঃএকত্রীকরণের কথা ভাবছে। দেশে ফিরে আসা প্রবাসী কর্মীদের সামাজিক ও আর্থিকভাবে সংশ্লিষ্ট করার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে সরকার। অনেক প্রবাসী বিদেশে তাদের কষ্টার্জিত অর্থ সঠিকভাবে বিনিয়োগ করতে ব্যর্থ হওয়ায় আর্থিক ঝুঁকির মধ্যে পড়েন। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর চার-পাঁচ লাখ কর্মী বিভিন্ন দেশে কাজে যাচ্ছেন। এর ফলে একদিকে যেমন দেশের বেকারত্ব কমছে, অন্যদিকে তাদের পাঠানো রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে চলেছে। সরকারের আইন ও নীতিমালার কারণে পুরুষ কর্মীদের পাশাপাশি নারীরাও বিদেশে যাচ্ছেন। প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেয়ায় এখন অধিকহারে প্রশিক্ষিত জনবল বিদেশে যাচ্ছে। অভিবাসী কর্মীদের স্বাস্থ্য, রেমেটিন্সে প্রেরণ, তথ্যপ্রবাহ, সচেতনতা বৃদ্ধি, দক্ষতা উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। একই সঙ্গে প্রবাসী কর্মীদের কল্যাণে ও সেবা প্রদানে বাংলাদেশ মিশনের শ্রম উইংগুলোকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রয়োজনে উইংগুলোকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি’র সভাপতিত্বে ওই অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন এবং জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষ্যণ ব্যুরোর মহাপরিচালক বেগম শামসুন নাহার প্রমুখ। নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, এবারের অভিবাসন দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘বিশ্বময় অভিবাসন, সমৃদ্ধ দেশ, উৎসবের জীবন’। আমরা এই সেøাগানের ওপর ভিত্তি করেই কর্মসংস্থানের সব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অভিবাসনের গুরুত্ব আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি এবং আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অভিবাসী কর্মীদের অবদান অপরিসীম। বর্তমানে প্রায় ৯৬ লাখ বাংলাদেশী নাগরিক অভিবাসী হিসেবে ১৬০টি দেশে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স জাতীয় উন্নয়নের অগ্রগতিকে আরও ত্বরান্বিত করছে। এবছর প্রবাসী ভাই- বোনদের পাঠানো রেমিটেন্স ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদেশে কর্মসংস্থানের বর্তমান ধারা অব্যাহত রাখার জন্য বিদ্যমান শ্রমবাজার ধরে রাখাসহ আমরা নতুন নতুন সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার অনুসন্ধান করছি। থাইল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় কর্মী পাঠানো বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। আশা করা যাচ্ছে এই দুই দেশে কর্মী পাঠানো সম্ভব হবে। আলোচনায় বক্তারা বলেন, প্রবাসী কর্মীদের জন্য এক কেন্দ্রিক সেবা চালু করা হবে। যারা বিদেশে চাকরি নিয়ে যাবেন, তাদের সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার জন্যই সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বর্তমানে প্রবাসী কল্যাণভবনে মন্ত্রণালয়ের দু’টি অনুবিভাগ, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, বায়োমেট্রিক ফিঙ্গার প্রিন্টের কাজ চালু করা হয়েছে। বিএমইটির কার্যক্রম, ইমিগ্রেশন সার্ভিস, পাসপোর্ট অধিদফতরের শাখা, রিক্রুটিং এজেন্সি বায়রার শাখা, ট্রাভেল এজেন্সির অফিস, স্বাস্থ্য পরীক্ষার বুথ, প্রবাসী কর্মীদের জন্য ব্রিফিং সেন্টারসহ বিদেশে যেতে আগ্রহীদের সব সেবামূলক কাজ করা হবে। বর্তমানে ৯০ লাখ মানুষ প্রবাসে কাজ করছেন। এই হিসাব আসলে আরও বেশি। কারণ অনেকে বিভিন্ন দেশে নাগরিত্ব নিয়েও বসবাস করছেন। সব মিলে প্রায় এক কোটি লোক প্রবাসে আছেন। প্রবাসীদের টাকায় সচল রয়েছে দেশের অর্থনীতির চাকা। ১৯৭৩-৭৪ সালে এই খাতে বছরে ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা রেমিটেন্স আসত। আর এবার এসেছে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিটেন্স। আর্থিক বিবেচনায় এই খাত থেকে বৈদেশিক সাহায্যের ১০ গুণ, বৈদেশিক বিনিয়োগের ১৩ গুণ বেশি অর্থ উপার্জন হচ্ছে। জিডিপিতে এ খাতের অবদান শতকরা ১৩ ভাগ। বাস্তবে এটা ২০ ভাগেরও বেশি। কর্মসংস্থানের জন্য এটাই সবচেয়ে বড় খাত। এই খাতের উন্নয়ন করতে সরকার নানা কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। অভিবাসন প্রক্রিয়া নিরাপদ করতে হবে ॥ সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে অবৈধ অভিবাসন প্রক্রিয়া বন্ধ করতে নিরাপদ অভিবাসন শীর্ষক এক ছায়া সংসদ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিত যৌথভাবে আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বোয়েসেল এবং আইএলও। ‘শুধুমাত্র আইনের প্রয়োগ নয়, সামাজিক সচেতনতাই পারে অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করতে’ শীর্ষক এ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ও গ্রিন ইউনিভার্সিটি। অনুষ্ঠানে বক্তা ও বিতার্কিকরা বলেন, অভিবাসন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্তদের নৈতিকতা ও মূল্যবোধে আবদ্ধ হয়ে বিদেশে কর্মী প্রেরণ করতে হবে। অধিক মুনাফা লাভের আশায় অনৈতিকভাবে কোন কর্মীকে বিদেশে পাঠিয়ে বিপদে ফেলা যাবে না। বৈদেশিক আয়ের বড় একটি অংশের যোগানদাতা বাংলাদেশ। ফলে দেশের প্রতিটি মানুষকে অভিবাস প্রক্রিয়া সম্পর্কে আরও সচেতন হতে হবে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে সার্বিক ও সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করেত হবে। শুধু আইন প্রয়োগের মাধ্যমেই অবৈধ অভিবাস বন্ধ করা সম্ভব নয়, প্রয়োজন সকলের সমন্বিত সচেতনতা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। অনুষ্ঠানে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ সচিব খন্দকার মোঃ ইফতেখার হায়দার, জনশক্তি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক বেগম শামছুন নাহার এবং বোয়েসেল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আব্দুল হান্নান প্রমুখ।
×