স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর রামপুরায় স্বামীকে আটকে রেখে গৃহবধূ গণধর্ষণের ঘটনায় মূল আসামিদের আড়াল করার চেষ্টা করছে পুলিশ। তিনদিনেও তাদের গ্রেফতার করতে পারেনি এমন অভিযোগ করেন ভিকটিমের পরিবার। তবে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রামপুরা থানার ওসি মোঃ আলমগীর হোসেন জানান, গণধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত শরিফুল ইসলাম (২৩) ও আবদুর রহমানকে (১৮) ভিকটিমের মুখোমুখি করা হবে। রিমান্ডে নিয়ে আসামিদের মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করলেই আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে। ধর্ষক কারা তাও জানা যাবে। এদিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসির সম্বন্বয়কারী ডাঃ বিলকিস বেগম জানান, সোমবার ভিকটিমের কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। এর আগে রবিবার ভিকটিমের প্রাথমিক পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এখনও রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।
রামপুরা থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ আলমগীর ভূঁইয়া জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করেনি। রিমান্ড এনে তাদের ভিকটিমের মুখোমুখি করলে আসল রহস্য বের হয়ে আসবে। তিনি জানান, ভিকটিমের স্বামী বাদী হয়ে মোট নয়জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। তাদের মধ্যে পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে। অভিযান চালিয়ে এজাহারভুক্ত দু’জনকে রবিবার গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীর ভূঁইয়া জানান, রবিবার সকালে রামপুরা থেকে শরিফুল ইসলামকে এবং আবদুর রহমানকে একই দিন বিকেলে বাড্ডা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রবিবার গ্রেফতারকৃদের মধ্যে আব্দুর রহমানকে দশ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। সোমবার শরিফুলকে আদালতে পাঠানো হবে। আব্দুর রহমানের বাবার নাম আব্দুল মান্নান। গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থানায়। আর শরিফুলের বাবার নাম সেলিম মিয়া। গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে।
রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানান, কয়েকদিন আগে ওই গৃহবধূ তার স্বামীকে নিয়ে রামপুরার উলন রোড এলাকায় তার খালার বাসায় বেড়াতে আসেন। শুক্রবার বিকেলে খালা বাসায় না থাকায় স্থানীয় কয়েক যুবক বাসায় ঢুকে তার স্বামীর হাত-পা বেঁধে বাথরুমে আটকে রাখে। পরে তারা ওই গৃহবধূকে গণধর্ষণ করে পালিয়ে যায়। শনিবার রাতে তার স্বামী বাদী হয়ে থানায় ধর্ষণ মামলা করেন। তিনি আরও বলেন, ধর্ষণের শিকার গৃহবধূকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে। ভিকটিমের স্বামী মোমিন জানান, কয়েক দিন আগে তারা চট্টগ্রাম থেকে রামপুরার উলন রোড এলাকায় তার খালার বাসায় বেড়াতে আসেন। খালা অন্যের বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করেন। শুক্রবার সকালে তাদের দু’জনকে রেখে কাজে চলে যান খালা। এর কিছুক্ষণ পর স্থানীয় কয়েকজন দুর্বৃত্ত ঘরে ঢুকে তাদের সম্পর্কে জানতে চায়। কাবিনমার কাগজ চায়। তারা হুমকি-ধমকি দেয়ার একপর্যায়ে তাকে হাত-পা বেঁধে বাথরুমে আটকে রাখে। পরে তার স্ত্রীকে গণধর্ষণ করে ওই দুর্বৃত্তরা। প্রতিবেশী একজনের মাধ্যমে জানতে পেরে খালা বাসায় ফিরে আসে। এ সময় ওই দুর্বৃত্তরা তাকেও আটকে রাখে। মোমিন আরও জানান, পুলিশ দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। ভিকটিমের পরিবার অভিযোগ করেন, শুক্রবার রাতে রামপুরা থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। ভিকটিম ও তার স্বামীকে থানায় বসিয়ে রেখে মামলা না নিয়ে রাতে ৫ হাজার টাকা দিয়ে বিদায় করেছেন থানার দুই পুলিশ কর্মকর্তা। আর এ বিষয়ে কোন উচ্চবাচ্য না করার জন্য ভিকটিমকে হুমকি দেয়া হয়। ধর্ষিতার স্বামী আরও জানায়, শুক্রবার দুপুরে কয়েকজন সন্ত্রাসী তার খালা বাসায় প্রবেশ করে তাদের সম্পর্কের বিষয় জানতে চায়। তিনি সন্ত্রাসীদের কাছে নিজেদের স্বামী-স্ত্রীর কথা বললেও ওই সন্ত্রাসীরা তাদের চ্যালেঞ্জ করে। সন্ত্রাসীরা ঘরের ভেতরে লুটতরাজ চালায়। তাদের কাছে থাকা নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে নেয়। এমনকি বিকাশের মাধ্যমে দু’দফা চারহাজার টাকা নেয়। তাকে বাথরুমে আটকে রেখে তার স্ত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায়। এরপর পাশের ঘরের লোকজন তাদের উদ্ধার করে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। তাদের দুই জনকে থানায় নিয়ে যায়। গৃহবধূ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে তথ্য দিলেও পুলিশ ধর্ষকদের গ্রেফতার তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়নি। গৃহবধূর স্বামী অভিযোগ করেন, সারাদিন তাদের থানায় আটক রেখে ধর্ষকদের সঙ্গে দেনদরবারে ব্যস্ত থাকেন। ওই অভিযানে অংশ নেয়া রামপুরা থানার এসআই মামুন ও এএসআই মাহমুদসহ পুলিশের একটি দল। তার স্ত্রীকে মেডিক্যালে নেয়ারও ব্যবস্থা করেনি। পুলিশকে অনুরোধ করেও তারা থানা থেকে বের হতে পারেনি। এরপর কয়েক ঘণ্টা থানা বসিয়ে রেখে তাদের ছেড়ে দিলে হালিমা নামের ওই খালার বাসায় ফেরেন তারা। এরপর রাতে পাশের বাসার লোকজন তাদের মামলা করতে পরামর্শ দেন। কিন্তু পুলিশ তাদের কোন অভিযোগ গ্রহণ করেনি। মোমিন জানান, ওই বাসা থেকে পুলিশ বিভিন্ন আলামত (রক্তামাখা কাপড়) সংগ্রহ করেন। সেগুলো ফেলে দিয়েছে বলে পুলিশের ওই দুই কর্মকর্তা তাকে জানিয়েছে। আবার এ নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য বলে দেন ওই কর্মকর্তা। পরে থানা থেকে ফিরে দুজনই যান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। তিনি জানান, অবশ্য পরেরদিন পুলিশ থানায় মামলা নিয়েছে। আমি পাঁচ আসামির নাম বলেছি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, স্থানীয় সন্ত্রাসী সুজন (২২), মইন (১৯), কালা আরিফ (২০) ও রাহাত (১৮) ও এসআই মামুনের সোর্স ফজলু। এরা বাড়িতে ঢুকে ওই গৃহবধূর স্বামীকে বাথরুমের আটককে করেখে গৃহবধূ গণধর্ষণ করেন। সরকারদলীয় প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় এরা এলকায় বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: