ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সব সমস্যার দ্রুত সমাধান চায় দিল্লী ॥ জয়শঙ্কর

প্রকাশিত: ০৫:২২, ৩ মার্চ ২০১৫

সব সমস্যার দ্রুত সমাধান চায় দিল্লী ॥ জয়শঙ্কর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সব অমীমাংসিত সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে চায় দিল্লী। দুই দেশের মধ্যে সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে চায় ভারত। এছাড়া প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক জোরদারে ভারতের পররাষ্ট্র নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ। এদিকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। সোমবার ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুব্রামানিয়াম জয় শংকরের সঙ্গে বৈঠকের পর পররাষ্ট্রসচিব এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের এ সব তথ্য জানিয়েছেন। ভারতের নতুন পররাষ্ট্রসচিব সুব্রামানিয়াম জয় শংকর সোমবার ঢাকায় আসেন। ঢাকা সফরকালে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হকের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের সফর নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালক তারেক আরিফুল ইসলাম ও বহিঃপ্রচার বিভাগের মহাপরিচালক এস বদিরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। পররাষ্ট্রসচিব এম শহীদুল হক সংবাদ জানান, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে উদ্বেগের কথা ভারতের নতুন পররাষ্ট্রসচিব সুব্রামানিয়াম জয় শংকরকে জানিয়েছে বাংলাদেশ। তারা এটাকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। এ সমস্যা সমাধান করতে চায় তারা। সচিব এম শহীদুল হক বলেন, ভারতের নতুন সরকারের বিশেষ একটি দিক লক্ষ করেছি। তারা প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করতে চায়। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সব অমীমাংসিত সমস্যাগুলো সমাধান করতে চায়। তিনি বলেন, ভারতের বর্তমান সরকার আঞ্চলিক সম্পর্ক উন্নয়নে বিশেষ নজর রয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, নরেন্দ্র মোদি সরকার চাইছে, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সব ধরনের সমস্যার সমাধান করে নিতে। সে হিসেবে স্থল সীমান্ত ও তিস্তাসহ বিভিন্ন বিষয় দ্রুতই সুরাহা হতে পারে। শহীদুল হক জানান, নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সফরে আসার জন্য আগ্রহও প্রকাশ করেছেন। তবে এ সফরের তারিখ এখনও নির্ধারণ হয়নি বলে তিনি জানান। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুব্রামানিয়াম জয় শংকর সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে জয় শংকর সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠক গঠনমূলক এবং ফলপ্রসূ হয়েছে। তবে আমরা আরও সহযোগিতার আশা প্রকাশ করছি। এর আগে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুলের হকের সঙ্গে বৈঠকের পর ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সাংবাদিকদের বলেন, দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। এ সব বিষয়ের মধ্যে সার্ক, বিমসটেক ও দ্বিপক্ষীয় বিষয়ও ছিল। দু’পক্ষের মধ্যে খুবই ভাল আলোচনা হয়েছে বলেও তিনি জানান। ভারতের নতুন পররাষ্ট্রসচিব সুব্রামানিয়াম জয় শংকর একদিনের শুভেচ্ছা সফরে সোমবার সকালে ঢাকা আসেন। এ সময় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক জয় শংকরকে স্বাগত জানান। ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরন উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন ভারতের নতুন পররাষ্ট্র সচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর। ঢাকায় এসে জয়শঙ্কর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রথমে পররাষ্ট্রসচিব ও পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পৃথক বৈঠকে মিলিত হন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব। এ বৈঠকের মাঝে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন। ভারতের নতুন পররাষ্ট্রসচিবের দায়িত্ব পাওয়ার পর বাংলাদেশে এটাই তার প্রথম সফর। ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দায়িত্ব নেয়ার ছয় মাসের মাথায় গত মাসের শেষ দিকে সুজাতা সিংকে সরিয়ে জয় শংকরকে পররাষ্ট্রসচিব করেন। দায়িত্ব নেয়ার পর ঢাকা সফরের মধ্যে দিয়েই বাংলাদেশের সঙ্গে প্রথম আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ শুরু হলো জয়শঙ্করের। ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের এ সফরের বিষয়ে ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইট বার্তায় মোদি বলেছেন, দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও জোরদার করতে সত্ত্বর আমরা নতুন পররাষ্ট্রসচিবকে ‘সার্ক যাত্রায়’ পাঠাচ্ছি। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশও সফর করবেন উদীয়মান পরাশক্তি ভারতের এ পররাষ্ট্রসচিব। এর আগে জয় শংকরের ঢাকা সফরের বিষয়ে অবহিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন মোদি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জয় শংকর ঢাকায় সফরের সময় দুই দেশের সচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়। এ বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে মানবপাচার প্রতিরোধ, সীমান্ত হত্যা বন্ধ, সীমান্তে চোরাচালান প্রতিরোধ তিস্তা চুক্তি, স্থলসীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন, দুই দেশের অমীমাংসিত বিষয়গুলো আলোচনা হয়েছে।
×