ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

একনেকে ১৮ হাজার কোটি টাকার ১৯ প্রকল্প অনুমোদন

পানির অপচয় রোধে সচেতনতা বাড়াতে হবে ॥ প্রধানমন্ত্রী 

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:০৭, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

পানির অপচয় রোধে সচেতনতা বাড়াতে হবে ॥ প্রধানমন্ত্রী 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পানি ব্যবহারে আমরা অনেকেই সচেতন না। পানির অপচয় বন্ধ করতে হবে। অপচয় রোধে সচেতনতা বাড়াতে হবে। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনগুলো তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ওয়াসার পানির উৎপাদন খরচে সমন্বয় করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সবাইকে পানির অপচয় বন্ধ করতে বলেছেন। অনেকে পানির কল ছেড়ে রাখেন এটা যেন না হয় এই বিষয়ে সচেতন হতে বলেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ট্যাক্স সংক্রান্ত মামলা পড়ে আছে এটাকে আইন মেনে ফয়সালা দিতে হবে। কর সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।  তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন খাতে ১ বিলিয়ন ডলার পাওয়া যাবে। ডেলটা প্ল্যানের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রকল্প নিতে হবে। সুন্দরবন গুরুত্ব পাবে। এছাড়া, জলাভূমি অঞ্চলে সড়ক সংস্কার করতে হবে। পানির চাপ বাড়লে অধিক কালভার্ট ও ব্রিজ বানাতে হবে। সেতু বানালে উচ্চতা খেয়াল করবেন নকশা ভালো হতে হবে কাজ করতে গিয়ে আবার ভুল যেন না ধরা পড়ে।
আগস্টে খাদ্য খাতে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, মূল্যস্ফীতি একটু বেড়েছে এটা আমাদের নজরে আছে। নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করব, আগস্টে মূল্যস্ফীতির নায়ক ছিল মুরগি ও ডিম। তবে এটি কমে আসবে। এম এ মান্নান বলেন, আমাদের যে বৃদ্ধি এটি টেকসই মানের। শ্রীলঙ্কায় এক লাফে সব কিছুর দাম উঠেছিল, এখন নেমেছে। আমাদের এখানেও সব পণ্যের দাম কমে সহনীয় হবে।
একনেক সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে সরকার বেশি ধার নিয়েছে। আমরা মূল্যস্ফীতির চক্রে পড়েছি। একবার মূল্যস্ফীতি বাড়লে আর কমে না। তিনি বলেন,  একদিন সব টাকা প্লাস্টিক নোট হবে। কাগজের টাকা দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। তাই ভবিষ্যতে কাগজের টাকার নোট বাদ দিয়ে প্লাস্টিকের নোট ব্যবহার করা হবে। সরকার বেশি করে টাকা ছাপাচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে ড. শামসুল আলম বলেন, অনেকে বলে সরকার অনেক টাকা ছাপায়। বাস্তবে সরকার অধিক টাকা ছাপায় না। যতটুকু প্রয়োজন হয় ততটুকুই ছাপায়। সরকার বাজারে বেশি টাকা ছাড়ে এমন কথাটাও সঠিক নয়।
একনেকে ১৯ প্রকল্প অনুমোদন ॥ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ১৯টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনুমোদিত ১৯টি প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৬৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে পাওয়া যাবে ১২ হাজার ৬০ কোটি ১৯ লাখ টাকা, বৈদেশিক ঋণ হিসেবে পাওয়া যাবে পাঁচ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে পাওয়া যাবে ৪৫০ কোটি ৭২ লাখ টাকা। অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো- সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের তিনটি প্রকল্প যথাক্রমে ‘জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (খুলনা জোন)’ প্রকল্প, ‘ফেনী (মোহাম্মদ আলী বাজার)-ছাগলনাইয়া-করেরহাট সড়ক (ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরাতন মহাসড়ক) (জেড-১০৩১) প্রশস্তকরণ এবং ফেনী নদীর ওপর শুভপুর সেতু নির্মাণ’ প্রকল্প এবং ‘২০২২ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ সড়ক বিভাগাধীন বিভিন্ন সড়ক, সেতু ও কালভার্টগুলোর জরুরি পুনর্বাসন ও পুনর্নির্মাণ’ প্রকল্প।
স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের চারটি প্রকল্প যথাক্রমে ‘নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৫নং গুদারাঘাটের নিকট শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর কদমরসুল ব্রিজ নির্মাণ’ প্রকল্প, ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন (রাস্তা ও ড্রেন)’ প্রকল্প, ‘রায়েরবাজার এলাকায় পয়ঃশোধনাগার নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ’ প্রকল্প এবং ‘উৎপাদনশীল ও সম্ভাবনাময় কর্মের সুযোগ গ্রহণে নারীর সামর্থ্য উন্নয়ন (স্বপ্ন)-২য় পর্যায়’ প্রকল্প।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে অবস্থিত মাজার মসজিদ নির্মাণ’ প্রকল্প; নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ‘মোংলা বন্দরের সুবিধাদির সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্প; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রকল্প যথাক্রমে ‘চট্টগ্রাম বিভাগের দক্ষিণাঞ্চল এবং কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটির সঞ্চালন অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প এবং ‘হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপ শতভাগ নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন’ প্রকল্প।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের ‘সার সংরক্ষণ ও বিতরণ সুবিধার জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৩টি নতুন বাফার গোডাউন নির্মাণ’ প্রকল্প; কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘কৃষক পর্যায়ে বিএডিসির বীজ সরবরাহ কার্যক্রম জোরদারকরণ’ প্রকল্প; মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘মানিকগঞ্জ, ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর জেলার নদীবিধৌত চরাঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন’ প্রকল্প। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তিনটি প্রকল্প যথাক্রমে ‘মেঘনার শাখা নদীর ভাঙন হতে হিজলা উপজেলাধীন পুরাতন হিজলা, বাউশিয়া ও হরিনাথপুর এলাকা রক্ষা’ প্রকল্প, ‘শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার পদ্মা নদীর ডান তীরের ভাঙন হতে মাঝিরঘাট জিরো পয়েন্ট এলাকা রক্ষা’ প্রকল্প এবং ‘চাঁদপুর শহর সংরক্ষণ পুনর্বাসন’ প্রকল্প; মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ’ প্রকল্প; শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন’ প্রকল্প।

×