ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ঘাটতি মোকাবিলায় তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু

জনকণ্ঠ রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২২:৫৬, ৬ জুন ২০২৩

ঘাটতি মোকাবিলায় তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কয়েকটি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করেছে

পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন সাময়িক বন্ধ থাকায় ঘাটতি মোকাবিলায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কয়েকটি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করেছে। এসব কেন্দ্রের বিদ্যুৎ দিয়ে পায়রা পুনরায় উৎপাদনে আসার আগে পর্যন্ত দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা হবে।
কয়লা সংকটে গত ৫ জুন সাময়িক বন্ধ হয়ে গেছে দেশের বৃহত্তম পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন। গত ২৫ মে কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ হওয়ার পর থেকেই লোডশেডিং বাড়ছিল, দ্বিতীয় ইউনিট তথা পুরোপুরি পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোডশেডিং আরও বেড়ে যায়। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় পায়রা সংলগ্ন তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় গতবছরের জুলাই মাসে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সেগুলো বন্ধ করার ফলে তখন প্রায় দেড় হাজার থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়। বর্তমান বিদ্যুৎ উৎপাদনের এই পরিস্থিতি শীঘ্রই উন্নত হওয়ার কোনো আভাস নেই। ডলার সংকট না কাটায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো প্রয়োজনীয় জ্বালানি আমদানি করতে পারছে না। ফলে বর্তমান সংকট নিরসনে তেলভিত্তিক প্লান্টগুলোতে ফের উৎপাদন শুরু করতে যাচ্ছে পিডিবি।
রামপাল ও পায়রাসহ খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলে মোট বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে ২০টি। এরমধ্যে খুলনা অঞ্চলে ফার্নেস অয়েলভিত্তিক কেন্দ্র আছে ছয়টি। এগুলো হলো- খুলনা ১১৫ পিপি মেগাওয়াট, চাঁদপুর ৫০ মেগাওয়াট পিকিং পিপি, গোপালগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট, নোয়াপাড়া ৪০ মেগাওয়াট, রূপসা ১০৫ মেগাওয়াট ও মধুমতি ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
ডিজেলভিত্তিক আছে তিনটি কেন্দ্র। সেগুলো হলো, খুলনা ২২৫ মেগাওয়াট সিসিপিপি, নোয়াপাড়া ১০০ মেগাওয়াট ও খুলনা ৩৩০ মেগাওয়াট সিসিপিপি।
গ্যাসভিত্তিক আছে দুটি কেন্দ্র। সেগুলো হলো, খুলনা ২২৫ মেগাওয়াট (উৎপাদনে আসেনি) ও ভেড়ামারা ৪১০ মেগাওয়াট। এছাড়া মোংলায় অরিয়ন ১০০ মেগাওয়াটের সোলার প্লান্ট আছে একটি।
অপরদিকে বরিশাল অঞ্চলে ফার্নেস তেলভিত্তিক প্লান্ট আছে দুটি। সেগুলো হলো সামিটের মালিকানাধীন বরিশাল ১১০ মেগাওয়াট পিপি ও ১৫০ মেগাওয়াট ইউনাইটেড পায়রা পাওয়ার লিমিটেড।
বরিশালে গ্যাসভিত্তিক তিনটি কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে ভোলা ৩৩ মেগাওয়াট পিপি, ভোলা ২২৫ মেগাওয়াট সিসিপিপি ও ২২০ মেগাওয়াট ভোলা নতুন বিদ্যুৎ লিমিটেড। একটিমাত্র কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র হলো বানসাল ৩০৭ মেগাওয়াট।
কেন্দ্রগুলোর মোট উৎপাদন সক্ষমতা (খুলনার ২২৫ ও ৩৩০ মেগাওয়াট বাদে) ২ হাজার ৩৮০ মেগাওয়াট। যদিও রামপাল ও পায়রা একত্রে ২ হাজার ৫৬৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। এ দুটো বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার আগে ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো খুলনা, বরিশালসহ আশপাশের অঞ্চলের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতো।
ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে তেলের অভাবে খুলনা ২২৫ মেগাওয়াট, রূপসা ১০৫ মেগাওয়াট, মধুমতি ১০০ মেগাওয়াট এবং সামিটের ১১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ ছিল। তবে পিজিসিবির সর্বশেষ রিপোর্টের (৫ জুন) তথ্যানুসারে, খুলনা ২২৫ মেগাওয়াট প্লান্ট থেকে ১২০ মেগাওয়াট, রূপসা ১০৫ মেগাওয়াট থেকে ১৭ মেগাওয়াট ও সামিটের ১১০ মেগাওয়াট থেকে ১৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কাছে তেলের চাহিদাপত্র পাঠায় পিডিবি। চলতি বছরের জুন মাসে পিডিবির তেলের চাহিদা ছিল ৫৫ হাজার মেট্রিক টন। যা এরইমধ্যে তাদেরকে সরবরাহ করা হয়েছে। তবে লোডশেডিং মোকাবিলায় বিপিসির কাছে পিডিবি অতিরিক্ত তেল চেয়েছে কি না, তা জানা যায়নি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য (উৎপাদন) এস এম ওয়াজেদ আলী বলেন, ‘পায়রার ঘাটতি মেটানোর জন্য আমরা কয়েকটি তেলভিত্তিক প্লান্ট চালু করেছি। এর মধ্যে সামিটসহ বেশ কয়েকটি প্লান্ট রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি পায়রা উৎপাদনে আসার আগে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও লোডশেডিং পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে।’

×