ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১

ধরাছোঁয়ার বাইরে তালিকাভুক্ত ৯০ শতাংশ অপরাধী

শংকর কুমার দে

প্রকাশিত: ১৪:৩০, ৪ আগস্ট ২০২২

ধরাছোঁয়ার বাইরে তালিকাভুক্ত ৯০ শতাংশ অপরাধী

ক্যাসিনো

বহুল আলোচিত ক্যাসিনোকান্ডে তালিকাভুক্ত রাজনীতিবিদ, আমলা, ব্যবসায়ীসহ মোট অপরাধীর তালিকা ২০০ জন। বিগত তিন বছরে ধরা ছোয়ার বাইরে রয়ে গেছে তালিকাভুক্ত অপরাধীর ৯০ শতাংশ। অবৈধ সম্পদ অর্জনকারী ও বিদেশে অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইন শৃংখলা বাহিনীর ছিল শুদ্ধি অভিযান। আইন শৃংখলা বাহিনীর পরিচালিত শুদ্ধি অভিযানে এখন পর্যন্ত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও জি কে শামীমসহ শীর্ষ ২৪ জনের বিরুদ্ধে ২৩টি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে ১২ মামলায় চার্জশিট দেয়া হয়েছে। অভিযোগ-সংশ্লিষ্ট ২৪ আসামির প্রায় ৫৮২ কোটি টাকার সম্পদও জব্দ করেছে দুদক। তবে অজানা কারনে এতদিনের ব্যাবধানে এখন কার্যত ক্যাসিনো কাণ্ডের শুদ্ধি অভিযানটিও এতদিনে মুখ থুবড়ে পড়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ খবর জানা গেছে।

২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে সারাদেশে শুরু হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শুদ্ধি অভিযান। শুদ্ধি অভিযানের পাশাপাশি ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে অবৈধ সম্পদ অর্জনকারী ও বিদেশে অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ক্যাসিনোসহ বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত এমন প্রায় ২০০ রাজনীতিবিদ, আমলা ও ব্যবসায়ীকে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানও শুরু করে দুর্নীতি দমন সংস্থা-দুদক। সংস্থাটির এমন উদ্যোগ সর্বমহলে বেশ সমাদৃত হলেও কোনো এক অজানা কারণে শেষ পর্যন্ত তদন্ত কার্যক্রম হিমাগারে চলে গেছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ক্যাসিনোকান্ডসহ বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও কর্মকান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন রাজনীতিবিদ, আমলা ও ব্যবসায়ীসহ মোট ২০০ জনের তালিকা নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রাথমিক পর্যায়ে দুই সংসদ সদস্য, যুবলীগের শীর্ষনেতা ও গণপূর্তের চার প্রকৌশলীসহ ৪৩ জনের তালিকা নিয়ে অনুসন্ধান শুরু হলেও ধীরে ধীরে তা পর্যায়ক্রমে ২০০-তে দাঁড়ায়। ধীরে ধীরে অভিযোগের তালিকা ক্রমেই দীর্ঘ হতে থাকে। সর্বশেষ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনারসহ ১৬ জনের একটি তালিকা সেখানে যুক্ত হয়। ফলে অভিযোগ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সংখ্যা ২০০ পার হয়ে যায়। অভিযুক্তদের তালিকায় সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সামশুল হক চৌধুরী, নজরুল ইসলাম বাবু,ও পঙ্কজ দেবনাথসহ প্রভাবশালী পাঁচ সংসদ সদস্যের নাম আসে যা তখনকার গনমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়। এছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটসহ বেশ কয়েকজন সাবেক নেতাকর্মী, ব্যবসায়ী, গণপূর্ত অধিদফতরের প্রকৌশলী, ঠিকাদার, কাস্টম ও পুলিশ কর্মকর্তাদের নামও রয়েছে এ তালিকায়। এছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটসহ বেশ কয়েকজন সাবেক নেতাকর্মী, ব্যবসায়ী, গণপূর্ত অধিদফতরের প্রকৌশলী, ঠিকাদার, কাস্টম ও পুলিশ কর্মকর্তাদের নামও রয়েছে এ তালিকায়। তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে- ক্যাসিনো ব্যবসাসহ অবৈধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা, সরকারি কর্মকর্তাসহ প্রভাবশালীদের ঘুষ দিয়ে বড় বড় ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, পরে তা বিদেশে পাচার এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন। 

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে অনুসন্ধানে নামার পর প্রায় তিন বছর পার হতে চললেও ওই তালিকার ৯০ ভাগের বিরুদ্ধে এখনও কোনো মামলা বা চার্জশিটের মতো আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেনি পুলিশ ও দুদক। ফলে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন অনেকে। উল্টো এক অফিস আদেশে গণপূর্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীসহ শীর্ষ পদে থাকা ১৩ জনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি (দায়মুক্তি) দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। এখন পর্যন্ত ক্যাসিনোকান্ডের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও জি কে শামীমসহ শীর্ষ ২৪ জনের বিরুদ্ধে ২৩টি মামলা দায়ের করেছে সংস্থাটি। এর মধ্যে ১২ মামলায় চার্জশিট দেয়া হয়েছে। 
অভিযোগ-সংশ্লিষ্ট ২৪ আসামির প্রায় ৫৮২ কোটি টাকার সম্পদও জব্দ করেছে দুদক। তবে তালিকায় থাকা প্রভাবশালী পাঁচ সংসদ সদস্যের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি কমিশন।

ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট : ক্যাসিনোকান্ডের ঘটনায় গ্রেফতার ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর দায়ের করা মামলায় দুই কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার ৮৭ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু চার্জশিটে তার বিরুদ্ধে প্রায় ২২৩ কোটি টাকা সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় পাচার এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। স¤্রাট এখন কারাবন্দি সাজাপ্রাপ্ত আসামী।

জি কে শামীম : অবৈধভাবে ২৯৭ কোটি আট লাখ ৯৯ হাজার ৫৫১ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর প্রভাবশালী ঠিকাদার জি কে শামীমের (এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম) বিরুদ্ধে মামলা হয়। তদন্ত শেষে আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় মামলার চার্জশিট জমা দেয়া হয়। চার্জশিটে ২৯৭ কোটি ৩৯ লাখ ১২ হাজার ৭৮৯ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। চার্জশিটে জি কে শামীমের সঙ্গে তার মা আয়েশা আক্তারকেও আসামি করা হয়েছে। এর বিচারকাজও শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। 

সেলিম প্রধান : অবৈধভাবে ১২ কোটি ২৭ লাখ ৯৫ হাজার ৭৫৪ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বাংলাদেশে অনলাইন ক্যাসিনোর মূলহোতা মো. সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর দুদকের উপ-পরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে মামলাটি করেন। তদন্ত শেষে আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় মামলার চার্জশিট দেয়া হয়। এটিরও বিচার কাজ শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। 

খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া : পাঁচ কোটি ৫৮ লাখ ১৫ হাজার ৮৫৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে মামলা হয়। ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর দুদকের উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম মামলার বাদী হন। তদন্ত শেষে চার্জশিট দেয়া হয়। চার্জশিটে ৪২ কোটি ৭৫ লাখ ৭০ হাজার ৭৫৬ টাকার সম্পদের অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া তার বিরুদ্ধে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে পৃথক তিনটি ব্যাংকে মোট আট কোটি ৭৪ লাখ ৩৩ হাজার ৯৬ টাকা পাচারেরও অভিযোগ আনা হয়েছে।

জাকির হোসেন : যুবলীগ নেতা সম্রাটের কথিত ডানহাত জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে পাঁচ কোটি ৪৯ লাখ তিন হাজার ৯৩৮ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা হয়। ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর দুদকের সহকারী পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। তদন্ত শেষে আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় চার্জশিট দাখিল করা হয়। চার্জশিটে পাঁচ কোটি ৮৬ লাখ সাত হাজার ৬৯ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। 

কাজী আনিছুর রহমান ও সুমি রহমান : ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর দায়ের করা মামলায় যুবলীগের বহিষ্কৃত দফতর সম্পাদক কাজী আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে ১২ কোটি ৮০ লাখ ৬০ হাজার ৯২০ টাকা এবং তার স্ত্রী সুমি রহমানের বিরুদ্ধে এক কোটি ৩১ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। প্রায় ১৮ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ১২৩ কোটি ৫৪ টাকা পাচারের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে পৃথক চার্জশিট দাখিল করে সংস্থাটি।

এনামুল হক এনু : গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি এনামুল হক এনুর বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর ২১ কোটি ৮৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী। এনুর বিরুদ্ধে দাখিল করা চার্জশিটে সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৪৭ কোটি ৩৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৭৮ টাকা। চার্জশিটে তার দুই সহযোগী হারুনুর রশিদ ও আবুল কালাম আজাদকেও আসামি করা হয়। 

রুপন ভূঁইয়া : গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সম্পাদক রুপন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ১৪ কোটি ১২ লাখ ৯৫ হাজার ৮৮২ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা হয়। ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর দুদকের সহকারী পরিচালকমোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী বাদী হয়ে মামলাটি করেন। তবে চার্জশিটে রুপম ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ৩৭ কোটি ৫৭ লাখ ১৬ হাজার ৯৮৭ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।

শফিকুল আলম ফিরোজ : দুই কোটি ৬৮ লাখ দুই হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর রাজধানীর কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজের বিরুদ্ধে মামলা হয়। আদালতে চার্জশিট দেয় দুদক। 

লোকমান হোসেন ভূঁইয়া : বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে চার কোটি ৩৪ লাখ ১৯ হাজার ৬৪৮ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর মামলা হয়। মামলাটি তদন্তের শেষ পর্যায়ে রয়েছে, যা চার্জশীট দেয়ার পর বিচার কাযক্রম চলার প্রক্রিয়াধীন। 

ক্যাসিনো সাঈদ : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বরখাস্ত হওয়াকাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ ওরফে ক্যাসিনো সাঈদের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ২০ নভেম্বর চার কোটি ৪৭ লাখ ৬৬ হাজার ২৬১ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আতাউর রহমান বাদী হয়ে মামলা করেন। তদন্ত এখনও চলমান। এছাড়া সাঈদের স্ত্রী ফারহানা আহম্মেদ বৈশাখীর বিরুদ্ধেও অবৈধ সম্পদ অর্জনের পৃথক অনুসন্ধান চলছে। 

তারেকুজ্জামান রাজীব : ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. তারেকুজ্জামান রাজীবের বিরুদ্ধে ২৬ কোটি ১৬ লাখ ৩৫ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। ২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী বাদী হয়ে মামলাটি করেন। বর্তমানে এটিও তদন্তাধীন রয়েছে। 

পাগলা মিজান : ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজানের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর ৩০ কোটি ১৬ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা হয়। এর তদন্তকাজ এখনও শেষ হয়নি। 

এনামুল হক আরমান : সম্রাটের ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি এনামুল হক আরমানের বিরুদ্ধে দুই কোটি পাঁচ লাখ ৪০ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর মামলা করে দুদক। মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম এখনও চলমান।

প্রশান্ত কুমার হালদার : ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি প্রায় ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এনআরবি গেøাবাল ব্যাংক লিমিটেড ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) বিরুদ্ধে মামলা হয়। যা এখনও তদন্তনাধীন। 
প্রকৌশলী উৎপল : প্রায় আট কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগে গণপূর্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে ও তার স্ত্রী গোপা দের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ৫ আগস্ট পৃথক দুটি মামলা করে দুদক। মামলায় উৎপলের বিরুদ্ধে এক কোটি ১৮ লাখ ১৭ হাজার ৯০৩ টাকা এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ছয় কোটি ৬২ লাখ ৬৮ হাজার ৭৫৪ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। যার তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। 

মুমিতুর রহমান : প্রায় সোয়া পাঁচ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ঠিকাদার জি কে শামীমের ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা শাখার সিনিয়র সহকারী প্রধান মুমিতুর রহমান ও তার স্ত্রী জেসমিন আক্তারের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর মামলা হলেও এখনও চার্জশিট দেয়া হয়নি।

অপরাধ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ হলে তারা জানান, দুদকের হাতে বিপুলসংখ্যক অভিযোগ রয়েছে। সেটার চাপে এমনিতেই দুদকের লেজেগোবরে অবস্থা। তবে এর মধ্যে বড় বড় বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিয়ে দুদকের যে কাজ করার কথা ছিল, সেটা কতটুকু করতে পেরেছে তা আমার জানা নেই। যে কারণে ক্যাসিনো ও অর্থপাচার সংক্রান্ত আলোচিত ঘটনার বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। তাহলে দুদকের দুর্বলতা কোথায়- জবাবে তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত অপরাধে অপরাধী চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে দুদকের সক্ষমতা ও কারিগরি দক্ষতার ঘাটতি থাকতে পারে। সার্বিকভাবে আমি মনে করি, এক ধরনের সদিচ্ছা ও সৎ সাহসের ঘাটতি রয়েছে। 

এছাড়া এ ধরনের বড় অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত তারা ক্ষমতার বলয়ে থাকেন। তাদের ধরতে গেলে হাত পুড়ে যাওয়ার আশংকাও কাজ করে। 
দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নন, কাউকে ছাড় দেয়া হচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না। তবে নিরপরাধ কাউকে জোর করে যেন আসামি করা না হয়, সেদিকে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে। পাশাপাশি কোনো অপরাধী যাতে ছাড় না পায়, সে বিষয়েও আমরা সচেষ্ট। অপরাধ ও অপরাধী শনাক্তে আমরা শতভাগ নির্মোহভাবে দায়িত্ব পালন করছি। রাগ-অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী হয়ে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি না, করবও না। 

×