ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

ডাবল হ্যাটট্রিকে অনন্য উচ্চতায় বোল্ট

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২০ আগস্ট ২০১৬

ডাবল হ্যাটট্রিকে অনন্য উচ্চতায় বোল্ট

আবারও বিদ্যুত-বোল্টে উদ্ভাসিত হয়ে উঠল অলিম্পিক পার্ক। রিও অলিম্পিকসে ডাবল হ্যাটট্রিক পূরণ করে উসাইন বোল্ট নিজেকে নিয়ে গেলেন অনন্য উচ্চতায়। ১০০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণপদক জেতার চারদিনের মধ্যে ২০০ মিটারেও একই ঝলক। জ্যামাইকার বিশ্ববিখ্যাত এ্যাথলেট যেন বনে গেলেন ভিন গ্রহের বাসিন্দা। অলিম্পিক গেমসের ১২০ বছরের ইতিহাসে এমন অর্জন যে আর কারও নেই। যা করে দেখিয়ে দিলেন ২৯ বছর বয়সী ছয় ফুট পাঁচ ইঞ্চি উচ্চতার বোল্ট। ২০০ মিটার রেস শেষ হতে না হতেই রিওর আকাশে মেঘ। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। আমেরিকা আর ইউরোপে বৃষ্টি মানে ধপ করে তাপমাত্রা একেবারে নিচে নেমে যাওয়া। অলিম্পিক পার্কের জায়ান্ট স্ক্রিনে হঠাৎ ভেসে উঠল বাইরের তাপমাত্রা ২২ থেকে নেমে ১৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ততক্ষণে অবশ্য সেরার সেরা বনে গেছেন উসাইন বোল্ট। ১৯ দশমিক ৭৮ সেকেন্ড সময় নিয়ে ২০০ মিটার স্প্রিন্টে সোনার মেডেল জিতে স্থান করে নিলেন মহাতারকার আসনে। বেজিং থেকে লন্ডন, টানা দুই অলিম্পিকসের স্প্রিন্টে তিনিই ছিলেন সেরা। রিওতেও একই দ্যুতি ছড়িয়ে হ্যাটট্রিকের পর হ্যাটট্রিক পূরণ করে বোল্ট এখন একটি নাম, একটি ইতিহাস। ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ডের অবিসংবাদিত সম্রাট যেন তিনিই, সিলমোহর মেরে দিলেন নিজেই। সামনে আর মাত্র একটি লক্ষ্য, ৪ল্প১০০ মিটার রিলেতে স্বর্ণ। সেটা পূরণ করতে পরলে এই রেকর্ড আগামীতে কে ভাঙবেন সেটাই দেখার। বিশেষজ্ঞদের মতে আগামী দুই শ’ বছরেও নাকি সেটা সম্ভব নয়। আবার বলতে হচ্ছে, প্রতিভা কখনও ঝাঁকে ঝাঁকে জন্মায় না। সময়ের বিবর্তনে পৃথিবীতে তারা আসেন কালেভদ্রে। আর এ কারণে তারা ক্ষণজন্মা। উসাইন বোল্ট তাদেরই একজন। ক্ষনজন্মা ক্রীড়াবিদ। এমন প্রতিভা আবার কবে জন্ম নেবে কে জানে। ক্যারিয়ারের টানা তিন অলিম্পিকসে আট স্বর্ণপদক জিতে ইতোমধ্যে ‘অমরত্ব’ পেয়ে গেছেন তিনি। যতদিন বেঁচে থাকবেন বা পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিলেও অমর হয়ে থাকবে তার এই কীর্তি। ব্রাজিল সময় আজ রাতে ফয়সালা হয়ে যাবে রিলে রেসের ভাগ্য। মূলত এরপর গেমসের আকর্ষণ বলতে আর কিছু থাকছে না। আমেরিকার সর্বকালের সেরা সাঁতারু মাইকেল ফেলপস পাঁচ স্বর্ণপদক জিতে জলে ঝড় তুলে বিদায় নেয়ার পর রিও গেমসের মূল ফোকাসে চলে আসে এ্যাথলেটিক্স। আর ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ডের লড়াই মানে উসাইন বোল্ট। তার পালাও শেষ হচ্ছে। ফেলপস আর বোল্টই ছিলেন রিও অলিম্পিকসের অন্যতম আকর্ষণ। তাদের দুইজনের পর্ব শেষ মানেই গেমসের আকর্ষণ বলতে আর কিছু থাকে না। যদিও ব্রাজিল সময় আগামীকাল পর্দা নামবে ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো আর্থ’-অলিম্পিক গেমসের। উল্লেখ্য, ২০০ মিটার রেসে বোল্টের ঠিক পেছনে থেকে রৌপ্য জিতেছেন কানাডার তরুণ এ্যাথলেট আন্দ্রে ডি গ্রাসে। আর ব্রোঞ্জ পেয়েছেন ফ্রান্সের আরেক তরুণ ক্রিস্টোফে লেমিট্রি। বোল্টের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিন গ্যাটলিন সবাইকে হতাশ করে সেমিফাইনালে ছিটকে পড়ায় ফাঁকা হয়ে যায় বোল্টের মাঠ। বলতে গেলে হেসেখেলেই তিনি জিতে নিয়েছেন ২০০ মিটারের স্বর্ণ। বিষয়টা যেন, এলাম, দেখলাম, জয় করলাম। দুই হ্যাটট্রিক তো হয়েই গেছে। বোল্টের শেষ দৃষ্টি এখন রিলে রেসের দিকে। আর এ সুযোগটা তিনি কোনভাবে হাতছাড়া করতে চান না। দৌড় শেষে ট্র্যাকে চুমু খেয়ে বোল্ট জ্যামাইকার জাতীয় পতাকা গায়ে জড়িয়ে চক্কর দেন গোটা মাঠ। সাফল্যের আনন্দে নানা অঙ্গভঙ্গি, শরীর দুলিয়ে অদ্ভুত নৃত্য, প্রিয় পোজ- ‘দ্য লাইটনিং বোল্ট’- এসব পর্ব শেষে মুখোমুখি হন বিশ্বমিডিয়ার। অলিম্পিক পার্কের কনফারেন্স রুমে, শুরুটা করলেন তিনি এভাবে, দু’টোতে শতভাগ সাকসেস, সাফল্যের বৃত্তপূরণ করতে এখন রিলের স্বর্ণপদকটা বাকি। সেটা আমার চাই-ই চাই। রিওতে পা রাখার আগেই বলেছিলাম, ‘টিপল-ট্রিপল’ই আমার মূল লক্ষ্য। ১০০ ও ২০০ মিটার স্প্রিন্টে সেটা করে দেখিয়ে দিয়েছি। অবশিষ্ট রিলে রেসেও একই স্বপ্ন। আশা করি পেরে যাব। দলের অন্যদের প্রতি আমার আস্থা আছে। সন্দেহ নেই রিলেটা একটু কঠিন পরীক্ষা। যুক্তরাষ্ট্রের দলটি সবচেয়ে সমীহ জাগানো। গ্যাটলিনের মতো পরীক্ষিত তারকা রয়েছে। বাকিরাও খুব ভালমানের দৌড়বিদ। লড়াইটা হয়ে উঠতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। তবু আমি আশাবাদী, জ্যামাইকা দল নিয়ে। সবকিছু ঠিকঠাক মতোই এগোচ্ছে। রিলেতেও এর ব্যত্যয় ঘটবে না। দুইটি লড়াইয়ে ট্রিপল মারতে পারায় আমি খুবই আনন্দিত। আমি যখন ট্র্যাকে দৌড় শুরু করি, দর্শকরা তখন করতালি দিয়ে আমাকে অনুপ্রেরণা যোগায়। আমার সাফল্যের ভাগীদার দর্শক-ভক্তরাও। বলে রাখা দরকার, রিওই হতে যাচ্ছে গতিদানবের শেষ অলিম্পিক। এ ইঙ্গিত তিনি আগেই দিয়ে রেখেছিলেন। এদিন আবারও বললেন, ২০১৭ বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ খেলে বিদায় নিতে চাই। মা জেনিফার ইতোমধ্যে ছেলের পাত্রী খুঁজতে শুরু করেছেন। তিনি মনে করছেন উসাইনের বয়স হয়েছে। বিয়ে করে সংসারী হোক। বিয়ে প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে, এক গাল হাসি দিয়ে বোল্ট বললেন, সেটা মা ভাল জানেন। আমি কখনও তার কথার বাইরে যাই না। এ বিষয়েও যাব না। মা যখন চাইবেন তখনই আমি বিয়ের পিঁড়িতে বসতে চাই। ছেলের দৌড় দেখতে গর্বিত মা জেনিফার এদিনও উপস্থিত ছিলেন অলিম্পিক পার্কের বিশেষ আসনে।
×