ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিবন্ধী দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

প্রতিবন্ধীরা বোঝা নয় দেশের সম্পদ, সহযোগিতা করুন

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৪ ডিসেম্বর ২০১৫

প্রতিবন্ধীরা বোঝা নয় দেশের সম্পদ, সহযোগিতা করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রতিবন্ধীদের প্রতি সহানভূতিশীল হয়ে তাদের সহযোগিতায় সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি সবাইকে আবেদন করব যে, প্রতিবন্ধীরা আমাদের সংসার, সমাজ, দেশের একটা অংশ। তাদের অবহেলা নয়, তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে, সংবেদনশীল হতে হবে, তাদের সহযোগিতা করতে হবে। কারণ তারাও যে আমাদের দেশের মূলস্রোতের সেটা সবসময় মনে রাখতে হবে। আর বিশেষ করে, সমাজের যারা বিত্তবান ব্যক্তি আছেন, তারা প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষায় ও সহযোগিতায় এগিয়ে আসবেন- সেই আহ্বান আমি জানাচ্ছি। প্রতিবন্ধী কিন্তু সমাজের বোঝা নয়। বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রতিবন্ধী দিবসের অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। ২৪তম আন্তর্জাতিক ও ১৭তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবসের এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন বিভিন্ন বয়সের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. মোজাম্মেল হোসেন এতে সভাপতিত্ব করেন। অন্যদের মধ্যে প্রতিবন্ধী জাতীয় ফোরামের সভাপতি সাইফুল হক এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব তরিকুল ইসলাম অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একটা সময় ছিল প্রতিবন্ধী বাচ্চাদের জন্য অভিভাবকরা নিজেদের লজ্জিত মনে করতেন। বাচ্চাদের সামনে আনতে পারতেন না। নানা ধরনের যন্ত্রণায় ভুগতেন। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। মানুষ এখন তাদের সমাজের অংশ বলে মনে করে। শেখ হাসিনা বলেন, একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রতিবন্ধীসহ দেশের প্রতিটি মানুষই তাদের অধিকার নিয়ে বাঁচতে হবে। প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা মোটেও কম নয়। প্রাথমিক জরিপে বলা হয়েছে, দেশে ১৪ লাখ ৮২ হাজার প্রতিবন্ধী রয়েছে। সঠিক সংখ্যা বের করে প্রতিবন্ধীদের একটি ডেটাবেজ তৈরির কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রী জানান, সরকার বর্তমানে ছয় লাখ প্রতিবন্ধীকে মাসিক ৫০০ টাকা হারে ভাতা দিচ্ছে। একইসঙ্গে ৬০ হাজার প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীকে শিক্ষা উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে। প্রতিবন্ধীদের মাসিক ভাতার পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে। প্রতিবন্ধীদের আরও উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী খাতের উদ্যোগের প্রয়োজনের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি একটা কথা বলতে চাই, সরকার তার পক্ষ থেকে অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, কর্পোরেট সেক্টর, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান তাদেরও আমরা আহ্বান জানাব যে, তারাও যেন প্রতিবন্ধীদের চাকরি দেন, কাজ দেন, তাদের যেন সুযোগ দেন। তাদের মেধা যেন কাজে লাগে সে উদ্যোগ যেন তারা নেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই এমন একটি সমাজ গড়ে উঠবে যেখানে কোন ভেদাভেদ থাকবে না। প্রতিবন্ধী, দল-মত, ধর্ম-বর্ণ, সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা দেশের জন্য কাজ করবÑ সেটাই আমাদের লক্ষ্য। কাজেই প্রতিবন্ধীরা বোঝা নয়, আমি মনে করি, তারা দেশের জন্য সম্পদ। প্রতিবন্ধী সন্তানের বাবা-মা ও অভিভাবকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবন্ধী শিশুর জন্য কখনই মনে কোন কষ্ট রাখবেন না। বরং তাদের সহযোগিতা করবেন, সাহায্য করবেন। তিনি নববর্ষ বা ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য যে কার্ড ছাপান সেটা প্রতিবন্ধীদের আঁকা ছবি দিয়ে তৈরি করা হয় বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ যথাযথভাবেই এসডিজি কর্মসূচীতে প্রতিবন্ধীদের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করেছে যাতে আগামী ১৫ বছরের জন্য গৃহীত বিশেষ উন্নয়ন কর্মসূচী থেকে কেউ বাদ না পড়ে। বাংলাদেশ এ ব্যাপারে যতœশীল। প্রতিবন্ধীদের সক্ষমতার ভিত্তিতে তাদের প্রত্যেকের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিবন্ধী দিবসের এ বছরের প্রতিপাদ্যে ‘অন্তর্ভুক্তির’ বিষয়টি রাখা হয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা। এবারের প্রতিবন্ধী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘একীভূতকরণ সক্ষমতার ভিত্তিতে সকল প্রতিবন্ধী মানুষের ক্ষমতায়ন’। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসায় মোবাইল থেরাপি ভ্যান ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন এবং প্রতিবন্ধীদের মধ্যে পরিচয়পত্র বিতরণ করেন।
×