ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

সিডনিতে নৃত্যাঞ্জলির আয়োজনে নববর্ষ ও হালখাতা উদযাপন

প্রকাশিত: ২০:৩৪, ১৫ এপ্রিল ২০২৪; আপডেট: ২০:৪৬, ১৫ এপ্রিল ২০২৪

সিডনিতে নৃত্যাঞ্জলির আয়োজনে নববর্ষ ও হালখাতা উদযাপন

পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে আগত অতিথিরা। 

নৃত্যাঞ্জলি ডান্স একাডেমির আয়োজনে রবিবার (১৪ এপ্রিল) বাংলা নববর্ষ বরণ ও বৈশাখী হালখাতা উদযাপন করা হয়েছে। সিডনির ল্যাকেম্বায় নৃত্যাঞ্জলি একাডেমি হল রুমে বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে এই আয়োজন।অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিল মেহেদী সাজ, শাড়ি-গহনার প্রদর্শনী, ফটোবুথ ও বৈশাখী আমেজে দেশজ পান্তা ইলিশসহ প্রায় ২৫ রকমের খাবার, পানীয় ও হরেক প্রকার মিষ্টান্ন। বিশেষ আয়োজনে ছিল শুটকি ভর্তা দিয়ে চিতই পিঠাসহ মুখোরচক জলখাবার। আরো ছিল কদবেল ভর্তা, বরই ভর্তা, পেয়ারা মাখা, ঝালমুড়ি ও চা।নৈশভোজে কাঁচা মরিচ-পান্তা ভাত, ইলিশ ভাজা, রুই মাছের ঝোল, লাউ চিংড়ি, মুড়ি ঘন্ট, মুগ ডাল, চিংড়ি দিয়ে কুমডা শাক, বেগুন ভর্তা, কুমড়ো ভর্তা, আলু ভর্তা, করলা ভর্তা, কচু ভর্তা, পটল ভাজি, কাকরোল ভাজি সাথে বরই চাটনী।
 মিস্টান্নের বিশেষ আয়োজনে ছিল অভিনবত্ব। আম, দুধ, কলা, কাঠাল ও তাল শাস দিয়ে বানানো অম্বুবাচী ভোগ। এছাড়াও ছিল হরেক রকম দেশী মিষ্টি, মন্ডা, সেমাই, কেক, সুজির বরফি, গজা, নারকেল নাড়ু, মালপোয়া ও মুড়ির মোয়া।
 দিনব্যাপী পরিবেশিত হয়েছে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দেশজ সংস্কৃতির অনেকগুলো ধারা এই অনুষ্ঠানের সংযোজিত হয়েছিল। তার মধ্যে ছিল ছোট্ট সোনামনিদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগীতা, নাচ, গান, আবৃত্তি ও স্মৃতিচারণ।
নৃত্যাঞ্জলি ডান্স একাডেমি দীর্ঘ ১৯ বছর যাবত প্রশান্ত পাড়ের দেশ সিডনিতে দেশজ সাংস্কৃতির চর্চা করে আসছে। বৈশাখী হালখাতা অনুষ্ঠানটির মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন মৌসুমী ও রাজেশ সাহা।অনুষ্ঠানটি গ্রন্থনা ও সঞ্চালনা করেন ড. রতন কুন্ডু। তার সঙ্গে ছিলেন সিডনির আবৃত্তিকার ও উপস্থাপক মুনা মোস্তফা। শিশু কিশোর কিশোরীদের দুটো গ্রুপে প্রায় একডজন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। ছবি আঁকায় বিচারক হিসেবে ছিলেন মিলি রহমান, ডা. লাভলী রহমান ও ড. লায়লা আরজুমান। সাংস্কৃতিক পর্বের শুরুতেই সমবেত কণ্ঠে বৈশাখী আবাহনী সংগীত ‘এসো হে বৈশাখ’ পরিবেশন করা হয়। এতে অংশগ্রহণ করেন জ্যোতি বিশ্বাস, রিমা সাহা, পম্পা হাটি, মধুমিতা সাহা, ইমরান হোসাইন, সুহৃদ হক সহ অন্যান্য কণ্ঠশিল্পীরা। হারমোনিয়াম এবং লিড সিঙ্গার ছিলেন অমিয়া মতিন। তবলায় ও জিপসীতে সংগত দেন যথাক্রমে জন্মেজয় রায় ও সুহৃদ হক। কবিতা আবৃত্তি করেন ডা. লাভলী রহমান, নাহিদা হক উর্মি, মুনা মুস্তফা, দেবী সাহা, সুহৃদ হক ও পম্পা হাটি। সংগীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং রেডিওর নিয়মিত সংগীত শিল্পী ও ছায়ানটের প্রশিক্ষক ইমরান হোসাইন, মধুমিতা সাহা, রীমা সাহা, নিলুফা ইয়াসমীনসহ অন্যান্য শিল্পীবৃন্দ। শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার ঘোষণা এবং পুরস্কার প্রদান করেন ডা. লাভলী রহমান ও মিলি ইসলাম। বড়দের গ্রুপে পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্ষুদে আঁকিয়েরা হলো আমিরা আহসান, হাসান এবং এলমা।আগত অতিথিদের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অষ্ট্রেলিয়ার সভাপতি আইনজীবী ড. সিরাজুল হক, বঙ্গবন্ধু পরিষদ অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন সভাপতি ডা. নুর উর রহমান খোকন, বিডি হাব সিডনি ও অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ বিজনেস ফোরামের সভাপতি আব্দুল খান রতন, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ফটোগ্রাফার এ্যালেন খান, ওপার বাংলার বিখ্যাত সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব বাসব রায়, শ্রীমতি সুশীলা দেবী, একুশে একাডেমি অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি প্রকৌশলী আব্দুল মতিন, মাল্টি কালচারাল কমিউনিটি এণ্ড কালচারের কর্ণধার ও আরঙ্গ পত্রিকার সম্পাদক এলিজা আজাদ রহমান টুম্পা। ক্রিশ্চিয়ান ফেলোশিপ অব অস্ট্রেলিয়ার কর্মকর্তা পল সি মধু নৃত্যাঞ্জলিকে শুভেচ্ছা জানান এবং পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে ফ্যাশন অষ্ট্রেলিয়ার তাম্মি পারভেজ সহ আরো অনেক নারী উদ্যোক্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

মূল আকর্ষণ ছিল নৃত্যাঞ্জলি ড্যান্স একাডেমির পরিচালক নৃত্য পটিয়সী মৌসুমী সাহা ও সহশিল্পীদের নৃত্য। মৌসুমী তার টিম নিয়ে নাচে গানে বৈশাখ বন্দনা করেন। একক, দ্বৈত ও দলিয় নৃত্যে অংশগ্রহণ করেন মৌসুমী, তিশা, আমীরা, দিয়া, আরাধ্যা, এলমা ও আদ্রিতা। 

পরিশেষে সাহা দম্পতি তাদের সমাপনী বক্তব্যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তারা সবাইকে পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। মৌসুমী সাহা আগামী সেপ্টেম্বর মাসে অনুষ্ঠিতব্য বাঙালী সংস্কৃতির দ্বিতীয় প্রহর: নকশী নহর-২ এ সবাইকে আগাম আমন্ত্রণ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

এম হাসান

×