ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

তীব্র তাপদাহেও চলছে রমরমা কোচিং বাণিজ্য

নিজস্ব সংবাদদাতা, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ

প্রকাশিত: ১৮:৫৫, ২৩ এপ্রিল ২০২৪; আপডেট: ১৮:৫৬, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

তীব্র তাপদাহেও চলছে রমরমা কোচিং বাণিজ্য

রমরমা কোচিং বাণিজ্য 

সারাদেশে তীব্র দাবদাহ। আবহওয়া অফিস ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রেড এ্যালাট জারি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সব স্কুল ও কলেজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। 

কিন্তু এই নির্দেশ মানছেন না গফরগাঁও উপজেলা সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকসহ কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকরা। তারা বলছেন কোচিং সেন্টার বন্ধের কোনো নির্দেশনা নেই। এই তাপদাহে গফরগাঁওয়ে রবিবার রাতে হিট স্টোকে মারাও গেছে একজন। তবুও টনক নড়ছে না শিক্ষকদের। ইউএনও বলছেন খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেব।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। সকাল শুরু হওয়ার সাথে সাথেই বাড়তে থাকে গরমের তীব্রতা। তীব্র গরমে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহে গরম আরও বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন সরকারের উর্ধ্বতন ব্যক্তিরা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও অভিভাবকদের পক্ষ থেকে চলমান তাপদাহ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার দাবি ওঠে। 

শনিবার (২০ এপ্রিল) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, আগামী ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের বিদ্যালয় ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর লার্নিং সেন্টারগুলো বন্ধ থাকবে। একই সময়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরেও এই নির্দেশনা জানিয়েছে।

কিন্তু সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গফরগাঁও উপজেলা স্কুল -কলেজ বন্ধ থাকলেও চলছে স্কুল -কলেজের শিক্ষকদের মাধ্যমে পরিচালিত রমরমা কোচিং বাণিজ্য ও প্রাইভেট পড়ানো। গত সোমবার, মঙ্গলবার বিভিন্ন স্কুল ও কোচিং সেন্টারে শিক্ষার্থীদের কোচিং করতে দেখা যায় এই তীব্র তাপদাহেও।  কোচিং সেন্টারের রুমগুলোতে অনেকটাই চাপাচাপি করে শিক্ষকদের পিড়াপীড়িতে বাধ্য হয়ে কোচিং করছেন শিক্ষার্থীরা। তার উপর ঘন ঘন লোডশেডিং কারনে অনেকটা হিট স্টোকের মতো জীবন ঝুঁকির আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল ।

উপজেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজগুলোতে কোচিং সেন্টারের মতো চালু রয়েছে শিক্ষকদের ব্যাচ ভিত্তিক পাইভেট কোচিং। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সকালে উপজেলার নামকরা কোচিং সেন্টার মডেল একাডেমী পরিচালক আলাউদ্দিন বাদলের কাছে সরকারি নির্দেশ অমান্য করে কোচিং খোলা রাখছেন কেন? জানতে চাইলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, কোচিং সেন্টার বন্ধের সরকারের কোনো নির্দেশনা নাই। 

তাই আমরা সকাল থেকে ৯ টা সাড়ে ৯ টা পর্যন্ত কোচিং করাচ্ছি। খায়রুল্লাহ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে তিনি বলেন, দূর্বল ছাত্রদের বাসায় একটু দেখাচ্ছি। এসময় তীব্র গরমে ইস্কুলে পাইভেটের কথা জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর না দিয়ে আমতাআমতা করে এড়িয়ে যান বিষয়টি। 

গফরগাঁও উপজেলা কলেজ রোড, হাসপাতাল রোড, জামতলা মোড়, পশু হাসপাতাল রোড, পৌর শহরের ৮নং ওয়ার্ড, ষ্টেশন রোড, কাচারী রোডসহ উপজেলার শতাধিক প্রতিষ্ঠান এখনো চালু রয়েছে। 

একটি কোচিং সেন্টারে পড়তে আসা অষ্টম শ্রেনীর শিক্ষার্থী জান্নাত, হুসনে আরা, আরিফা আক্তার বলেন, অনেক টা বাধ্য হয়ে এই গরমে কোচিং করতে হচ্ছে। স্যারেরা বলেছেন কোচিং বন্ধ রাখলে সিলেবাস শেষ করা যাবে না। তাই বাধ্য হয়েই আমরা গরমে প্রাইভেট ও কোচিং করতে যাচ্ছি। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল মালেক বলেন, তীব্র তাপদাহে যে সকল কিন্ডারগার্টেন প্রতিষ্ঠান চালু রাখা হয়েছে। তাদের খোঁজ খবর নিয়ে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। সরকারের নির্দেশ অমান্যকারীকে ছাড় দেওয়া কোনো সুযোগ নেই।

এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম ভূইয়া জনকণ্ঠকে বলেন, অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের কোচিং এ কেন পাঠায়। এটা আপনারা লিখতে পারেন। আমরা এদের বিরুদ্ধে অনেকটা এক রকম উত্তেজিত হয়েই বলেন, আপনারা সিনিয়র সাংবাদিক। যা খুশি লেখতে পারেন। তবে উপজেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব। 

এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়া ইয়াসমিন জনকণ্ঠকে বলেন, এবিষয়ে খোঁজ নিয়ে সত্যতা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শহিদ

×