ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য

শহরের তুলনায় গ্রামে কাজের সুযোগ বাড়ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০১:১২, ২৭ মার্চ ২০২৪

শহরের তুলনায় গ্রামে কাজের সুযোগ বাড়ছে

দ্রুত নগরায়ণের প্রভাবে শহরের পরিধি বাড়ছে

দ্রুত নগরায়ণের প্রভাবে শহরের পরিধি বাড়ছে। তবে শহর ছেড়ে মানুষের গ্রামে ফিরে যাওয়ার প্রবণতাও বেড়েছে। ২০২৩ সালে প্রতি হাজারে প্রায় ১৪ জন গ্রামে ফিরেছে। পাঁচ বছর আগে এ হার ছিল গড়ে একজনেরও কম। গত পাঁচ বছরে বিদেশ গমনের হার বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য। 
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূল্যস্ফীতির প্রভাবে জীবনযাত্রার মান কমে যাওয়ায় মানুষ শহরে টিকতে না পেরে গ্রামে চলে যাচ্ছে। বর্তমানে বিনিয়োগ কম থাকায় নতুন কর্মসংস্থানের অভাবে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এটি সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির চিত্র সামনে নিয়ে আসছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, শহরের তুলনায় গ্রামে এখন কৃষি, মৎস্য চাষসহ নানা ধরনের কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে। তাই মাটির টানে মানুষ গ্রামে চলে যাচ্ছে। 
বিবিএসের তথ্যমতে, ২০২৩ সালে প্রতি হাজারে শহর ছেড়ে গ্রামে গেছে ১৩ দশমিক ৮ জন। আগের বছর এ হার ছিল ১০ দশমিক ৯। ২০২১ সালে প্রতি হাজারে শহর ছেড়ে গ্রামে গেছে ৫ দশমিক ৯ জন। ২০২০ সালে এ হার ছিল ৮ দশমিক ৪। ২০১৯ সালে প্রতি হাজারে শহর ছেড়ে গ্রামে গেছে একজনেরও কম বা দশমিক ৭ জন।

মানুষের গ্রামমুখী হওয়ার পেছনে দুটি কারণ থাকতে পারে বলে মনে করছেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘শহরের পুশ ফ্যাক্টর বা গ্রামের পুল ফ্যাক্টর এখানে কাজ করে থাকতে পারে। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতির কারণে দ্রব্যমূল্য বাড়ায় মানুষ হয়তো শহরে চলতে পারছে না। কাজ করতে পারছে না বা কাজের আয় দিয়ে এখানে টিকতে পারছে না।

আবার গ্রামে হয়তো শোভন কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে, তাই মানুষ গ্রামে যাচ্ছে। তবে গ্রামে তেমন কাজের সুযোগ নেই এখন। বরং বিনিয়োগ পরিবেশ ভলো না হওয়ায়, শহরে নতুন কর্মসংস্থান না থাকায় মানুষ গ্রামে চলে যাচ্ছে। 
খাদ্যনিরাপত্তাহীন লোকের সংখ্যাও বাড়ছে। অর্থাৎ বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বিরূপ প্রভাব সামনে আসছে।’ 
বিবিএসের জরিপের তথ্যানুযায়ী, গত বছর প্রতি হাজারে বিদেশে গেছে ৮ দশমিক ৭৮ জন। ২০২২ সালে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৬১। আগের বছর প্রতি হাজারে বিদেশে গেছে ৩ দশমিক শূন্য ৪ জন। ২০২০ সালে এ হার ছিল ১ দশমিক ৫৯ ও ২০১৯ সালে ২ দশমিক ৯৪। এ বিষয়ে অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কাজের সন্ধানে মানুষ ঝুঁকি নিয়েও বিদেশে যাচ্ছে। সেখানে কম মজুরি পাচ্ছে বা বেকার থাকছে।

আবার ইউরোপে সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক আশ্রয়ও চাচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ।’ সার্বিক বিষয়ে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ‘গ্রামে এখন কৃষি ছাড়াও মৎস্য, পোলট্রি, বনায়ন, কুটির শিল্প এবং নানা ধরনের অকৃষিকাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ব্যাংকিং সেবা, ফার্নিচারের দোকান, ইলেকট্রিক, সিলিন্ডারের দোকান দিচ্ছে মানুষ। 
জমি কেটে পুকুর তৈরি করে মাছ চাষ করছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে। রাস্তাঘাট উন্নত হয়েছে। ফলে শহরের সঙ্গে গ্রামের মানুষের বৈষম্য কমে এসেছে। আর মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই গ্রাম পছন্দ করে। কাজের সন্ধানে তারা শহরে এসেছিল। কিন্তু শহরে এখন নতুন কোনো কর্মসংস্থান নেই বললেই চলে। তাই মানুষ গ্রামে চলে যাচ্ছে। এটা ভালো লক্ষণ।’

তিনি আরও বলেন, ‘শহরে এখন পরিবহন বা গৃহায়ন খাতে নিরাপত্তা কর্মী ছাড়া তেমন কোনো নতুন কর্মসংস্থান নেই। আর গ্রামের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেশি হওয়ায় সেখানে মূল্যস্ফীতি বেশি হলেও মানুষ চলে যাচ্ছে। সেখানে বহু কাজের সুযোগ পাচ্ছে তারা।’

×