ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

দেশের অর্থনীতির সক্ষমতা, বাংলাদেশী পণ্য ও সেবা, শেয়ারবাজার এবং বন্ড মার্কেটকে তুলে ধরা হচ্ছে

বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ 

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:২৯, ২ আগস্ট ২০২৩

বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ 

বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা

চলতি বছর দক্ষিণ আফ্রিকা, মরিশাস, ফ্রান্স, জার্মানি এবং বেলজিয়ামে রোড শোর আয়োজন

বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা তুলে ধরতে ধারাবাহিকভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রোড শো ও বিনিয়োগ সম্মেলন আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এর অংশ হিসেবে এবার দক্ষিণ আফ্রিকা, মরিশাস, ফ্রান্স, জার্মানি এবং বেলজিয়ামে রোড শোর আয়োজন করেছে সংস্থাটি।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের শেয়ারবাজারের ব্যাপ্তি এবং বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয় সংস্থাটি। কমিশন মনে করছে, পুঁজিবাজারে এনআরবি ও বিদেশীদের বিনিয়োগ থাকলেও তা খুব কম। কাজেই এখন এই বিনিয়োগ বাড়ানো গেলে পুঁজিবাজারের গভীরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি গতিশীলতাও বাড়বে বলে মনে করছেন তারা। 
বর্তমান পুঁজিবাজারে শেয়ার কেনাবেচায় যে বেনেফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট (বিও) রয়েছে, তার মাত্র ৬ শতাংশ এনআরবি ও বিদেশীদের। আর প্রায় ৯৪ শতাংশই দেশীয় বিনিয়োগকারীর, যার মধ্যে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টই বেশি।

অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তির বিবেচনায় বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলোতে বাংলাদেশকে তুলে ধরে রোড শোতে দেশের অর্থনীতির সক্ষমতা, বিনিয়োগ, বাণিজ্য, বাংলাদেশী পণ্য ও সেবা, শেয়ারবাজার এবং বন্ড মার্কেটকে তুলে ধরা হচ্ছে। বিদেশী ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিনিয়োগ আকর্ষণই এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য। বিশেষ করে প্রবাসীরা যাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে, সে বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সেখানে প্রবাসীরা কীভাবে পুঁজিবাজারে সরাসরি বিনিয়োগ করবে তার কৌশল ও সার্বিক নিরাপত্তার বিষয় তুলে ধরা হয়।
এই আয়োজনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের মূলত কয়েকটি বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এরমধ্যে আছে-বাংলাদেশ উদীয়মান ও সম্ভাবনাময় অর্থনীতির দেশ। গত দশ বছরে অর্থনৈতিক ও সামাজিক খাতে অগ্রগতি, অভ্যন্তরীণ বাজার বড়, অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে। এখানে শ্রমের মূল্য কম, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো এবং বিনিয়োগ করলে মুনাফা সহজে দেশে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এর আগে দেশের বাইরে দুবাই, যুক্তরাষ্ট্রে, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, কাতার ও জাপানে সফলতার সঙ্গে রোড শো সম্পন্ন করেছে বিএসইসি। সেই ধারাবাহিকতায় এবার ২৩ আগস্ট দক্ষিণ আফ্রিকায় এবং ২৮ আগস্ট মরিসাসে এবং আগামী অক্টোবরে ইউরোপের বিনিয়োগ আকৃষ্টে ফ্রান্স, জার্মান এবং বেলজিয়ামে রোড শো করতে যাচ্ছে সরকার।
সূত্র জানিয়েছে, এবারের রোড শো’তে বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারী এবং স্টেকহোল্ডাররা অংশ নেবেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অতিথিরা বিভিন্ন সেক্টর নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন। সেখানে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকা-, সরকারের বিনিয়োগবান্ধব নীতি, শেয়ারবাজার ও সার্বিক অর্থনীতির পরিস্থিতি এবং এফডিআই’র বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা অতিথিদের সামনে তুলে ধরা হবে। এ ছাড়া, দেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী করে তুলতে বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হবে। বিশেষ করে প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কীভাবে শেয়ারবাজারে সরাসরি বিনিয়োগ করবেন তার কৌশল ও সার্বিক নিরাপত্তার বিষয় তুলে ধরা হবে।
কমিশন মনে করে, গত ১০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ঈর্ষণীয় অগ্রগতি হয়েছে। ইতোমধ্যে সব সূচকে আমরা এগিয়েছি। সামগ্রিকভাবে মূল্যায়ন করলে আগামীতে বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাবনা বিশাল। কিন্তু আমাদের অর্থনীতি যে অর্জন ও সম্ভাবনা আছে, উন্নত দেশগুলোর বিনিয়োগকারীদের কাছে তা তুলে ধরা হয়নি। যে কারণে আমাদের দেশে সেভাবে বিদেশী বিনিয়োগ আসেনি। 
এ কারণে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে এ ধরনের রোডশো বড় ভূমিকা রাখবে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান হাফিজ মোঃ হাসান বাবু বলেন, কমিশনের চেয়ারম্যান বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং অগ্রগতির বিষয়টি রোডশোর মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরছেন এটি উদ্ভাবনী উদ্যোগ। এর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ীদের সাথে আমাদের সেতুবন্ধন তৈরি হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনীতি এর সুফল পাবে।
সিডিবিএলের ভাইস চেয়ারম্যান একেএম নূরুল ফজল বুলবুল বলেন, বর্তমান কমিশনের নেতৃত্বে যে কয়টি রোডশো হয়েছে সেগুলো খুবই ভালো হয়েছে। এতে নিঃসন্দেহে দেশের ইমেজ বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক দেশ বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে জানে না। রোডশোর মাধ্যমে তারা জানতে পারছেন। এতে দেশের জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও সুফল পাওয়া যাবে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ রশিদ লালী বলেন, দেশের অর্থনৈতিক বিভিন্ন সূচকে নানা অগ্রগতি হয়েছে। এ বিষয়ে অনেক দেশ এবং দেশের মানুষ এমনকি প্রবাসীরাও অনেক বিষয়ে জানেন না। বিএসইসির চেয়ারম্যান রোডশোর মাধ্যমে দেশের উন্নয়নগুলো তুলে ধরেছেন। এর সুফল ভবিষ্যতে পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যে অনেক বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছেন।

×