হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির মহাপরিকল্পনায় দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে দেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল ‘মীরসরাই ইকোনমিক জোন।’ এক বছরের মধ্যেই উৎপাদনে যাওয়ার পরিকল্পনায় অগ্রসর হচ্ছে এর বাস্তবায়ন কার্যক্রম। ইতোমধ্যেই দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সেখানে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ভূমি বরাদ্দও পেয়ে গেছে অনেক কোম্পানি। দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হতে ১০ কিলোমিটার চার লেন সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ। বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) অধীনে ওই জোনে ১১৫০ একর জায়গার ওপর গড়ে উঠবে ইপিজেড। আগামী ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে ভিডিও কনফারন্সের মাধ্যমে উন্মোচন করবেন বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভিত্তিপ্রস্তর ফলক।
মীরসরাই ইকোনমিক জোন বাস্তবায়নে সাগর পাড়ে এখন ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। ভূমি ভরাট কাজ, সড়ক নির্মাণ, বেড়িবাঁধ সড়ক তৈরি, বিদ্যুত ও গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থাসহ জোনটিকে শিল্প স্থাপনের উপযোগী করতে দিনরাত চলছে কর্মকা-। প্রায় ২০ হাজার একর জমিজুড়ে দেশের বৃহত্তম এই অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি সম্পন্ন হলে প্রাথমিক পর্যায়ে অন্তত ৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। তবে এই শিল্প জোনকে মীরসরাই সংলগ্ন সীতাকু- ও সোনাগাজাী উপজেলা পর্যন্ত সম্প্রসারণ করে ৩০ হাজার একরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। যদি তা হয় এটি হবে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় শিল্পজোন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৪ জানুয়ারি বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে ভিডিও কনফারন্সের মাধ্যমে বেপজার ভিত্তিফলক উন্মোচন করবেন। এ উপলক্ষে গ্রহণ করা হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। এলাকার মানুষের মধ্যেও দেখা দিয়েছে প্রাণচাঞ্চল্য এবং তারা অনুভব করছেন অপার সম্ভাবনার হাতছানি। মীরসরাই ইকোনমিক জোনে মোট ১ হাজার ১৫০ একর ভূমির ওপর গড়ে উঠবে বেপজার শিল্পজোন। এছাড়া চীন, ভারত, জাপানসহ বিভিন্ন দেশ এবং দেশীয় বিনিয়োগকারীদের শিল্পায়ন তো থাকছেই। প্রাথমিক পর্যায়ে অন্তত ১২ শ’ শিল্পকারখানা গড়ার টার্গেট রয়েছে বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন কর্তৃপক্ষের (বেজা)। বেপজাকে ভূমি বরাদ্দের মধ্য দিয়ে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়নের কাজে গতি এসেছে।
চট্টগ্রাম রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলের (সিইপিজেড) মহাব্যবস্থাপক খোরশেদ আলম জনকণ্ঠকে জানান, চট্টগ্রাম ইপিজেডে মোট ভূমির পরিমাণ ৪৫৩ একর। মীরসরাইতে ভূমি পাওয়া গেছে প্রায় তিনগুণের কাছাকাছি। সারাদেশের আটটি ইপিজেডের ভূমির পরিমাণ মোট ২৪শ একর। আর শুধু মীরসরাইতে পাওয়া গেছে ১১৫০ একর। এটি হবে বেপজার অধীনে সবচেয়ে বড় শিল্পজোন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর মাটি ভরাট, সড়ক নির্মাণসহ অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ পুরোদমে শুরু হবে এবং দ্রুততার সঙ্গে শেষ করা হবে। তিনি আরও জানান, বর্তমানে অনেক বিদেশী বিনিয়োগকারী শিল্প স্থাপনের জন্য ভূমি বরাদ্দ চাইলেও প্রদান করা সম্ভব হচ্ছিল না। মীরসরাইয়ে এতবড় জায়গা পাওয়ায় আমরা বিনিয়োগকারীদের ধরে রাখতে পারব।
মীরসরাই ইকোনমিক জোন শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর অন্যতম। এটি নির্মিত হচ্ছে সাগর পাড়ে ইছাখালি, চরশরৎ, চর মোশাররফ এবং সাধুর চর এলাকায়। দেশে মোট একশটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এর মধ্যে মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ এগোচ্ছে দ্রুতগতিতে। ইতোমধ্যে অনেক বিনিয়োগকারীকে ভূমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ভরাট হওয়া ভূমিতে স্টিল স্ট্রাকচারে শিল্পের স্থাপনা গড়ার কাজও শুরু হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বড়তাকিয়া হতে ইকোনমিক জোন পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার চার লেনের সড়ক নির্মাণের কাজ দ্রুততার সঙ্গে এগুচ্ছে। অনেকগুলো ব্রিজ, কালভার্টের কাজ এর মধ্যেই শেষ হয়েছে। সড়কটির নাম হবে শেখ হাসিনা সড়ক। ইকোনমিক জোনে থাকছে লেকসদৃশ্য বেশ কয়েকটি বিশাল জলাধার। সেগুলোর নামকরণ হবে শেখ হাসিনা সরোবর।
অর্থনৈতিক জোন বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করে সেখানে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। চরাঞ্চলে নেমেছে স্কেভেটর এবং উন্নতমানের যন্ত্রপাতি। শিল্পের জন্য বিদ্যুত, গ্যাস, এবং পানি সরবরাহের প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে। এই শিল্পাঞ্চলকে সেবা দেয়ার লক্ষে মীরসরাই এবং সীতাকু-ের মাঝামাঝি এলাকায় নির্মিত হবে মাঝারি আকারের একটি বন্দর। এছাড়া ছোটখাট একটি বিমানবন্দরও নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
মীরসরাইয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল যতই দৃশ্যমান হচ্ছে ততই এলাকাবাসী আশায় বুক বাধছে উন্নত জীবনযাত্রার। যুবকরা আশায় রয়েছে কর্মসংস্থানের। প্রাথমিকভাবে ৫ লাখ কর্মসংস্থানের টার্গেট থাকলেও অর্থনৈতিক অঞ্চল যদি ৩০ হাজার একরে সম্প্রসারিত করা যায় তাহলে সেখানে কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সম্ভব। ফলে দেশের অন্যান্য জেলার মানুষও এই জোনে কর্মসংস্থান ও জীবিকার সুযোগ পাবে। অবহেলিত এক চরাঞ্চল পরিণত হচ্ছে শিল্পাঞ্চলে। স্থানীয়রাও এত বিপুলসংখ্যক শ্রমিক কর্মচারীর আবাসনের কথা চিন্তা করে গড়ে তুলছে নানা ধরনের বাড়িঘর।