ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে মোবাইল ফোন তৈরির উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:২২, ৩ মে ২০১৭

দেশে মোবাইল ফোন তৈরির উদ্যোগ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, আইটি বা আইসিটি পণ্যেও দ্রুত উঠে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে বস্ত্র, ওষুধ, সিরামিক এবং ইলেক্ট্রনিক্স খাত উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। দেশেই মোবাইল হ্যান্ডসেট তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছে অনেকেই। আর তাতেই এই সেক্টরের অগ্রযাত্রা ব্যবহত করতে অপতৎপরতা চালাচ্ছে একটি চক্র। জানা গেছে, বাংলাদেশেই মাল্টিলেয়ার মাদারবোর্ড তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে ওয়ালটন। ঘোষণা দিয়েছে দেশেই তৈরি করবে মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপসহ আইসিটি পণ্য। সম্প্রতি ভারত মোবাইল ফোন উৎপাদন শুরু করেছে। তারা বেশ কিছু স্থানীয় ব্র্যান্ড ডেভেলপ করেছে। উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা ঘোষণা করেছে। ফলে সেখানকার বিদেশী ব্র্যান্ডগুলো টার্গেট করেছে বাংলাদেশকে। নিম্নমানের বিদেশী পণ্যের ডাম্পিং স্টেশন বানাতে বানাতে চায় এদেশকে। এদিকে বাংলাদেশেও বেশি কিছু স্থানীয় ব্র্যান্ড ডেভেলপ করেছে। সিংহভাগ মার্কেট শেয়ারও তারা নিজেদের করে নিয়েছে। ওয়ালটন এভং সিম্ফনি তাদের মধ্যে অন্যতম। এখন বাংলাদেশী উদ্যোক্তারা এদেশে মোবাইল হ্যান্ডসেট তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাাযোগ এবং আইসিটি মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ইতিবাচক নীতি তৈরির উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। এ অবস্থায় দেশীয় ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোনের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার চালাচ্ছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মোবাইল ফোন কারখানা স্থাপন করলেও বাংলাদেশে এখনও এ শিল্প গড়ে উঠেনি। অথচ, বাংলাদেশে বছরে ৩ কোটিরও বেশি হ্যান্ডসেট বিক্রি হয়। মোট বাজার ১০ কোটি হ্যান্ডসেটের। সেই সঙ্গে বিক্রি হয় হ্যান্ডসেটের বিপুল পরিমাণ এক্সেসরিজ। সবমিলিয়ে বছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার বাজার। যদিও বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এ্যাসোসিয়েশন বলছে, সবমিলিয়ে ২০ হাজার কোটি টাকার বাজারের কথা। যার পুরোটাই আমদানি নির্ভর। এই নির্ভরতা কমাতে দেশেই মোবাইল ফোন ও এক্সেসরিজ উৎপাদন শিল্প স্থাপনে ওয়ালটনসহ কয়েকটি দেশীয় প্রতিষ্ঠান সক্ষমতা অর্জন করেছে। ইতোমধ্যে, নিজস্ব কারখানায় মোবাইল ফোনের ডিসপ্লে, মাল্টি-লেয়্যার মাদারবোর্ড তৈরিতে পুরোপুরি প্রস্তুত ওয়ালটন। স্থাপন করেছে ডিজাইন ডেভেলপ, গবেষণা ও উন্নয়ন এবং মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগ। সম্প্রতি, ওয়ালটন কারখানা পরিদর্শন করে বেসিসের সভাপতি মোস্তফা জব্বার বলেন, মাল্টিলেয়্যার মাদারবোর্ড তৈরির জন্য ওয়ালটন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আশা করছি, চলতি বছরের শেষেই মাদারবোর্ডসহ বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইস তৈরি শুরু করবে তারা। তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে সরকার নীতি সহায়তা দিয়েছিল বলেই ওয়ালটনসহ আরও বেশকয়েকটি ফ্রিজ উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। ওই সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, বাংলাদেশে একটি অগ্রগামী ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্প প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিটি খুচরা যন্ত্রাংশ ও কাঁচামাল এখন দেশেই তৈরি করছে। তারা দেশের অন্য প্রতিষ্ঠানের জন্যও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে মোবাইল হ্যান্ডসেট তৈরি হলে লাভবান হবে সরকার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং জনগণ। কারণ বছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। রফতানি আয় বাড়বে। ব্যাপক কর্মসংস্থান ও দক্ষ জনবল তৈরি হবে। আনুষঙ্গিক ব্যাকওয়ার্ড শিল্প গড়ে উঠবে। সর্বোপরি ফোন ব্যবহারকারীরা সাশ্রয়ী মূল্যে পাবেন উন্নতমানের হ্যান্ডসেট। উল্লেখ্য, ২০১০ সাল পর্যন্ত স্থানীয় বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য ছিল বিদেশী ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোনের। ওয়ালটন ও সিম্ফনির মতো দেশীয় ব্র্যান্ড বাজারে আসলে পাল্টে যায় চিত্র। সাশ্রয়ী মূল্যে উচ্চমানের হ্যান্ডসেট সরবরাহ করে দ্রুতই গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করে নেয় স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলো। মূলত, ২০১২ সাল থেকে স্থানীয় বাজারে একদিকে দেশীয় ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোনের মার্কেট শেয়ার দ্রুত বাড়তে থাকে, অন্যদিকে মার্কেট শেয়ার কমতে থাকে বিদেশী ব্র্যান্ডের।
×