এম শাহজাহান ॥ ডি-৮ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বেশি বাণিজ্য রয়েছে এমন কয়েকটি সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) করার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। এর লক্ষ্য হচ্ছে- এক শ’ কোটিরও বেশি মুসলিম জনসংখ্যার বাকি সাত দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা। রুলস অব অরিজিনের ক্ষেত্রে ভিন্ন মত থাকার কারণে বাংলাদেশ ডি-৮ পিটিএ এতদিন অনুসমর্থন করেনি। যদিও ডি-৮ সদস্য দেশগুলোর কাছ থেকে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি রফতানি আয়ের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ মূল্য সংযোজন করা জরুরী হয়ে পড়ছে বলে মনে করছে সরকার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সুবিধা নিশ্চিত হলে তৈরি পোশাকসহ দেশের অপ্রচলিত পণ্যগুলোর রফতানি বাড়বে।
জানা গেছে, ডি-৮ অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি অনুসমর্থনের জন্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া গত মে মাসে কায়রোতে ডি-৮ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে যেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা বাস্তবায়নেও সরকারের পক্ষ থেকে করুনীয় নির্ধারণ করা হবে। ইতোমধ্যে পোশাকসহ ১২টি খাতের বাইরে ওষুধ, প্রিন্টিং ও পাবলিকেশন্স, প্লাস্টিক, চামড়া এবং পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি পণ্যের তালিকায় যোগ করার প্রস্তাব করবে বাংলাদেশ।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, ডি-৮ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে রুলস অব অরিজিনে ভিন্নমত থাকার কারণে এতদিন পিটিএ অনুসমর্থন করা হয়নি। রফতানিতে ৩০ শতাংশ মূল্য সংযোজন করা জরুরী হয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, সদস্য কয়েকটি রাষ্ট্রের সঙ্গে পিটিএ করা যায় কি না তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। এছাড়া ডি-৮ভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এজন্য স্টেকহোল্ডারদের মতামত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে সরকার।
জানা গেছে, ডি-৮ মূলত ৫টি খাতে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ করে। এগুলো হচ্ছে- বাণিজ্য, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা, শিল্পখাতে সহযোগিতা ও এসএমই, যোগাযোগখাত এবং জ্বালানি ও খনিজখাত। বাংলাদেশে এসব খাতে এখন বিনিয়োগ বাড়ানো হচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতে আরও বিদেশী বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। বিশ্বের শতকরা প্রায় চৌদ্দভাগ জনসংখ্যার এই জোটের দেশগুলোর মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি ডলার। অথচ আট দেশের নিজেদের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ শতকরা মাত্র ছয় ভাগ। আর জোটের বাকি সাত দেশে মাত্র ৮০ লাখ ডলার রফতানির বিপরীতে বাংলাদেশ এসব দেশ থেকে আমদানি করে ৩০০ কোটি ডলার।
জানা গেছে, চুক্তি অনুযায়ী স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও পাকিস্তানসহ অন্য সদস্য দেশগুলো তাতে খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিশ্ব অর্থনীতিতে নিজেদের তুলে ধরাসহ নতুন সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো একত্রিত হয়ে যে আন্তর্জাতিক গ্রুপ তৈরি করেছিল তা এখন অকার্যকর হওয়ার পথে। নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে শুরু হলেও তাতে খুব একটা অগ্রগতি নেই।
জানা গেছে, সদস্য দেশগুলোর মোট জনসংখ্যার কমপক্ষে ৬০ ভাগ মুসলিম এবং বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ বসবাস করে এ দেশগুলোয়। এ দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ ১২ শতাংশ আমদানি করলেও রফতানি করে মাত্র ৪ শতাংশ। ধর্মকে পুঁজি করে এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের আটটি দেশ আন্তর্জাতিক ফোরামের মাধ্যমে নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হলেও বাণিজ্য সম্প্রসারণের নীতিতে ঐক্যবদ্ধ না হতে পারায় সদস্য দেশগুলোর আমদানি ও রফতানি বাণিজ্যে বৈষম্য কমাতে ডি-এইট কোন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রসঙ্গত বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল ৮টি মুসলিম দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে গঠিত হয় ডি-৮। ১৯৯৭ সালের ১৫ জুন তুরস্কের ইস্তাম্বুলে বাংলাদেশ, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ও তুরস্কের প্রধানরা মিলিত হয়ে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থনৈতিক একটি জোট হিসেবে ডি-৮ অনেক সম্ভবনাময়। বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য এ সংগঠনটি বড় ধরনের সুযোগ তৈরি করতে পারে। বাংলাদেশের রয়েছে স্বল্পমূল্যে ভালমানের পোশাক তৈরি ও রফতানির সুযোগ। এছাড়া জনবহুল একটি দেশ হিসেবে বাংলাদেশের প্রয়োজন জনশক্তি রফতানি করা। ডি-৮-এর সদস্য দেশগুলোতে বাংলাদেশী পোশাকের সর্বাধিক বাজার তৈরির চেষ্টা যেমন করা দরকার তেমনি মালয়েশিয়ার মতো অন্য দেশগুলোতে যথাসম্ভব শ্রমিক রফতানির ক্ষেত্র তৈরি করা প্রয়োজন। শুধু রফতানিই নয়, বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সদস্য দেশগুলোকে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে বাংলাদেশ অর্থনীতিতে বড় ধরনের ইতিবাচক ক্ষেত্রে তৈরি হতে পারে।