লালমনিরহাটের দুর্গম গ্রামের শিক্ষক দম্পতি মিষ্টি সুস্বাদু কমলাচাষে সাফল্য পেয়েছে। বাগানে থোকায় থোকায় ধরেছে কমলা। স্বাদে অতুলনীয় মিষ্টি। আকারেও বেশ বড়। বাগানভিত্তিক বাণিজ্যিক এই কমলা চাষের সাফল্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। পাহাড়ী অঞ্চল, নুড়িপাথর ও চুনসমৃদ্ধ বালুমাটি ছাড়া মিষ্টি সুস্বাদের কমলা চাষ সম্ভব নয়। এই ধারণা ভুল প্রমাণ করেছে। সমতলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কমলা চাষের সম্ভাবনা উঁকি মারছে। জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার পশ্চিম সারডুবি গ্রাম। এখানে মোজাম্মেল হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ খলিলুর রহমান ও তার স্ত্রী পূর্বপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মোছাঃ ফাতেমা খাতুন মজুমদার মিলে একটি কমলা বাগান রোপণ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। কমলা চাষে তারা পেয়েছেন সাফল্য। সমতলে মিষ্টি ও সুস্বাদু কমলা চাষ সম্ভব তার প্রমাণ করে দিয়েছেন। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কমলা উৎপাদন হচ্ছে। তাদের এই সাফল্যে অনেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কমলা চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠেছে। এতদিন সাধারণ মানুষ ও কৃষকের মাঝে ধারণা ছিল বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা লালমনিরহাট কমলা চাষের উপযোগী নয়। কমলা চাষ সিলেট ও পার্বত্য অঞ্চলে সম্ভব। কমলা চাষ করতে হলে মাটিতে বালু, নুড়িপাথর ও চুনের পরিমাণ বেশি থাকতে হবে। এই ধারণাটি ছিল দেশের সাধারণ মানুষের কাছে। পারি না, হবে না, হচ্ছে না বলে উত্তরাঞ্চলের কৃষক পিছিয়েছিল। শুধু গতানুগতিক ধান, পাট, গম ও ভুট্টা চাষ করে কৃষক তার জীবনের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসাসহ পরিবারের নানা দৈনন্দিন চাহিদা মিটিয়ে থাকত। তাই অভাব তাদের ছাড়ত না। এই শিক্ষক দম্পতি। গতানুগতিক চাষাবাদের বাইরে নতুন কিছু করার স্বপ্ন নিয়ে ২০০৫ সালে একটি কমলার চারা বাজার হতে সংগ্রহ করে। কমলা গাছটি পরম মমতায় বাড়ির আঙ্গিনায় রোপণ করে। কয়েক বছর পরে ২০১১ সালে গাছটিতে ফল আসে। গাছের কমলা আকারে বেশ বড়। সাধারণ কমলারমতো রং। স্বাদেও মিষ্টি। সেই কমলার বীজ হতে চারা তৈরি করা শুরু হয়। এভাবে একে একে ৩৫০টি কমলার গাছ রোপণ করা হয়। এতে জমি লেগেছে ১.৫০ শতাংশ। মা গাছটিতে এবারে শতাধিক কমলা ধরে পেকেছে। বাগানের অন্য প্রায় ৫০টি গাছে কমলা ধরেছে। পাকা কমলাগুলো মিষ্টি ও সুস্বাদু। বাজারে বিক্রির সময় কেউ ধারণা করতে পারে না। কমলাগুলো লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার কোন গ্রামের বাগানে কৃষক ফলিয়েছে। হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, একজন সফল কৃষি উদ্ভাবক হিসেবে প্রধান শিক্ষক মোঃ খলিলুর রহমান ২০১৪ সালে কৃষি মেলায় পুরস্কৃত হয়েছে।
লালমনিরহাট জেলা কৃষি অফিসার সাফায়াত হোসেন জানান, হাতীবান্ধার প্রদান শিক্ষক মোঃ খলিলুর রহমান ও তার স্ত্রী কমলা বাগান করে কমলা চাষের সম্ভাবনা জুগিয়েছে। শত শত বছর ধরে মানুষের ও কৃষিবিদদের ধারণা ছিল শীতার্থ আবহাওয়া, পাহাড়ী অঞ্চল, বালু, নুড়িপাথর ও চুনামাটির সমৃদ্ধ অঞ্চল ছাড়া মিষ্টি ও সুস্বাদু কমলা চাষ সম্ভব নয়। সেই ধারণা পাল্টে দিয়েছে। বাংলাদেশ দিনে দিনে কৃষি, নতুন নতুন ফলমুল ও বিদেশী জাতের নানা ফল চাষের সম্ভাবনার দেশ হয়ে উঠেছে।
নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: