ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

উপভোগ করলেন প্রধানমন্ত্রীও

এআর রহমানের সঙ্গীতের জাদু, বঙ্গবন্ধুকে নিবেদন

প্রকাশিত: ২৩:২২, ৩০ মার্চ ২০২২

এআর রহমানের সঙ্গীতের জাদু, বঙ্গবন্ধুকে নিবেদন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অপেক্ষা, অপেক্ষা আর অপেক্ষা। অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হতে চাইছিল না। হঠাৎ বৃষ্টিতে বড় বাধা। এ কারণে নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে মঞ্চে ওঠেন এআর রহমান। হ্যাঁ, সঙ্গীতের এ মহাতারকার জন্যই মঙ্গলবার অপেক্ষা করছিল ঢাকার শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম। খেলার মাঠটি যত বড়। ততই বড় মাপের শিল্পী। সেইসঙ্গে বিশাল দল। দলে অন্য গায়ক গায়িকা যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলেন বিখ্যাত যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পীরা। গানের সঙ্গে আরও ছিল আকর্ষণীয় কোরিওগ্রাফিও। সব মিলিয়ে অপেক্ষার ফল সুমিষ্টই হলো। শুধু সঙ্গীত নয়, সঙ্গীতের মহাযজ্ঞ দেখলেন রাজধানীর সঙ্গীতপ্রেমীরা। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বিসিবি এ কনসার্টের আয়োজন করে। ‘ক্রিকেট সেলিব্রেটস মুজিব হান্ড্রেড’ উপভোগ করতে গ্যালারিতে উপস্থিত হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। বৃষ্টি থামলে রাত সাড়ে ৮টার কিছু পর স্টেডিয়ামের ভিভিআইপি গ্যালারিতে প্রবেশ করেন তিনি। এর কিছু সময় পর মঞ্চে উঠে এআর রহমান ও তার দল। মঞ্চের চেহারা ততক্ষণে বদলে গেছে। বিশাল মিউজিক এ্যারেঞ্জমেন্ট। চেনা অচেনা অনেক শিল্পী। একটা চোখ ধাঁধানো ব্যাপার পরিলক্ষিত হচ্ছিল। কণ্ঠসঙ্গীত যন্ত্রসঙ্গীত লাইট সাউন্ড কোরিওগ্রাফি সবই অপূর্ব। আন্তর্জাতিক মানের কনসার্ট বলতে যা বোঝায়, ঠিক তাই। অনুষ্ঠানে এআর রহমান নিজে অনেকগুলো গান পরিবেশন করেন। তার কণ্ঠের কারুকাজ, সুরের বৈচিত্র্য আর কম্পোজিশনের মাধুর্য এদিন সামনে বসেই উপভোগ করেন শ্রোতা। শুরু করেন সূফী গান দিয়ে। ‘দম মাস্ত কালান্দার’ গাওয়ার সময় পোশাকেও সূফী ভাবটা দেখা যায়। ‘মাওলা মেরে মাওলা’ বা ‘খাজা মেরে খাজা’ গানগুলো গাওয়ার সময় শ্রোতারাও তার সঙ্গে গাইতে থাকেন। সিনেমার জন্য করা এআর রহমানের গানগুলো বিশেষ জনপ্রিয়। এসব জনপ্রিয় গানের তালিকা থেকে অনেকগুলো এদিন গাওয়া হয়। কিছু শিল্পী নিজেই গান। কিছু ছিল অন্য শিল্পীদের কণ্ঠে। আবার অনেকে মিলেও গেয়েছেন। ‘তুম সাথ হো’, ‘তেরে বিনা’ ‘বন্দে মাতরম’ ইত্যাদি গান শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, এর চেয়ে সুন্দর রাত আর হয় না। মুজিবকে নিয়ে যে দুটি গান ॥ এদিনের আয়োজনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল মুজিবকে নিয়ে করা দুটি গান। গান দুটি শোনার জন্য অন্য রকম কৌতূহল ছিল শ্রোতাদের মধ্যে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অপেক্ষা করছিলেন। রাত ১১টা ৩২ মিনিটে প্রথম গানটি ধরেন এআর রহমান। এ সময় নিজের সুর ও সঙ্গীতায়োজনে তিনি গেয়ে শোনান ‘আজও শুনি বজ্রধ্বনি’ গানটি। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তৈরি গানটি প্রথমবারের মতো তার কণ্ঠে শোনা যায়। পরের গানটি ছিল হিন্দীতে। কথাগুলো এরকম: ‘আমার সোনার বাংলা, হে লাল হারায়ে বাংলা/ বলো জয় বঙ্গবন্ধু, বলো জয় জয় বাংলা, বাঙলা/এক দোস্ত মুজিব হে, দিল মে বাঙলা...।’ গানের সঙ্গে ছিল চমৎকার কোরিওগ্রাফি। এ গানের ভিডিও গত বছর স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে প্রদর্শিত হয়। তবে এদিন গানটি সরাসরি করেন এআর রহমান। গান দুটি শুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ভীষণ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। এ সময় দাঁড়িয়ে নিজের মোবাইল ফোনে ভিডিও করতেও দেখা যায় তাকে। গান গাওয়ার আগে এআর রহমান বাঙালীর নেতাকে ‘ফাদার অব দ্য নেশন’ ও ‘বঙ্গবন্ধু’ বলে উল্লেখ করার পাশাপাশি ‘আন প্যারালাল লিডার’ হিসেবে বর্ণনা করেন। সেইসঙ্গে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান তোলেন শিল্পী। অনুষ্ঠানে অন্য শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন হরিহরণ। জনপ্রিয় এ শিল্পীর পরিবেশনাও মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেন সবাই। পারকাশনিষ্ট সিভামনিও মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখেন শ্রোতাদের। বিখ্যাত পারকাশনিষ্ট সিভামনি এদিনও অনেক রকমে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে শোনান। তবে ঢাকায় এসে তিনি খুঁজে নেন খাবার পানির জার। প্লাস্টিকের জারে আঙুল চালিয়ে এমন দারুণ তাল তুলে মুগ্ধ করেন শ্রোতাদের। এ সময় করতালিতে ফেটে পড়েন দর্শক শ্রোতা। রাত ১টার পর পর্যন্ত চলে অনুষ্ঠান। এর আগে এআর রহমানের পরিবেশনা উপভোগ করতে বিপুল শ্রোতা উপস্থিত হন স্টেডিয়ামে। বিকেল ৩টা থেকেই মাঠে ঢুকতে শুরু করেন শ্রোতা। তার আগে তিন ক্যাটাগরিতে বিক্রি হয় টিকেট। সর্বনিম্ন মূল্য ছিল এক হাজার টাকা। পাঁচ হাজার টাকায় গোল্ড এবং ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হয় প্লাটিনাম ক্যাটাগরির টিকেট। অনুষ্ঠান শুরুর আগেই সব টিকেট বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। বড় শিল্পীর কনসার্টের জন্য বিরাট মঞ্চ গড়া হয় স্টেডিয়ামের মাঝখানে। মঞ্চের সামনে ও দুই পাশে ছিল ¯্রােতাদের বসার জায়গা। এর বাইরে স্টেডিয়ামের গ্যালারিতেও ছিলেন ¯্রােতা। প্রচুর দর্শকের উপস্থিতিতে বিকেলে শুরু হয় প্রথম পর্ব। জাতীয় সঙ্গীত দিয়ে শুরু। সূচনা পর্বে দেশীয় শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। প্রথমে মঞ্চে আসে দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড মাইলস। অনেক দিন পর জনপ্রিয় এ ব্যান্ডটিকে এত বড় কনসার্টে পান ভক্তরা। ফলে পরিবেশনা দারুণ উপভোগ করেন তারা। মাইলস নিজেদের বিপুল জনপ্রিয় গানগুলো গেয়ে শোনায়। প্রতিটি গান বারবার শোনা। তাই সব গানের সঙ্গে কণ্ঠ মেলাতে দেখা যায় ভক্তদের। পরে একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন জনপ্রিয় ফোক শিল্পী মমতাজ। ‘জয় মুজিবুর জয় স্বাধীনতা’ গানের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি। এটি ছিল তার নতুন গান। পরে নিজের জনপ্রিয় কিছু গান গেয়ে শোনান। গানগুলোর মধ্যে ছিল ‘আমারে ডুবাইতে তোমার এত আয়োজন’, ‘আমার ঘুম ভাঙ্গাইয়া গেল গো মরার কোকিলে’, ‘নান্টু ঘটকের কথা শুইনা।’
×