ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর ৯৭ এলাকায় করোনা রোগী ॥ ১৬টি রেডজোন

ঢাকার পর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ১০:৪৪, ১৭ এপ্রিল ২০২০

ঢাকার পর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ নারায়ণগঞ্জ

রাজন ভট্টাচার্য ॥ দেশে প্রতিদিন করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। পরিসংখ্যান বলছে, সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ঢাকা। এরপর পাশের জেলা নারায়ণগঞ্জ। এরপর চট্টগ্রাম মহানগরী। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রোগী পাওয়া গেছে ঢাকা মহানগরীতে। দিন দিন আক্রান্তের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন নাম। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জানা গেছে, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম থেকে শ্রমজীবী মানুষ এখন ছড়িয়েছে বিভিন্ন জেলায়। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের একটা বড় অংশ এই তিন জেলার। অথচ লকডাউনের মধ্যেও এসব জেলা থেকে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় মানুষের স্রোত যেন কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না। সড়ক, নৌপথে নানা কায়দায় মানুষ এখন গ্রামের পথে। মাছের ড্রাম, এ্যাম্বুলেন্সসহ নানা কৌশলে বাড়িমুখী মানুষের যাত্রা ঠেকাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। এদিকে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় রাজধানীর ১৬টি এলাকা রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে। এসব এলাকায় লকডাউনের মাত্রা আরও বেশি কড়াকড়ি করার চিন্তা করা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে। সব মিলিয়ে নগরীর প্রায় শতাধিক এলাকায় মিলেছে করোনার রোগী। এই বিবেচনায় গোটা রাজধানীই এখন করোনার ঝুঁকিতে। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ১ হাজার ৫৭২জন। তাদের মধ্যে ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গেল ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের, শনাক্ত ৩৪১। এখন পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা এটি। বুধবার পর্যন্ত আক্রান্তদের মধ্যে রাজধানী ঢাকায় সর্বোচ্চ ৫১৮ জন রোগী পাওয়া যায়। আর ঢাকার উপকণ্ঠে নারায়ণগঞ্জে ২১৪ জনসহ ঢাকা বিভাগে ৪১৬ জন রোগী পাওয়া গেছে। ঢাকা ছাড়া অন্য বিভাগওয়ারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চট্টগ্রামে ৬২, সিলেটে ৫, রংপুরে ৩৪, খুলনায় ৩, ময়মনসিংহে ২৬, বরিশালে ২৩ ও রাজশাহী বিভাগে ৪ জন করোনা পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, ঢাকার মোট ৯৭টি এলাকায় করোনা পজিটিভ রোগী শনাক্ত করা গেছে। তবে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়েছে ওয়ারীতে। এর পরেই অধিক সংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়েছে মোহাম্মদপুর, মিরপুর, টোলারবাগ, যাত্রাবাড়ী, লালবাগ, ধানম-ি, উত্তরায়। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ ঢাকা বিভাগে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা অব্যাহতভাবে বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা বিভাগের নির্বাচিত প্রতিনিধিসহ অন্যদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পরীক্ষার মাধ্যমে রোগী শনাক্তকরণসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেন। তাছাড়া বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, করোনা প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ হলো টেস্ট টেস্ট আর টেস্ট। পরীক্ষার মাধ্যমে রোগী শনাক্ত করা সম্ভব হলে অন্যদের নিরাপত্তার বিষয়ে আরও সচেতন হওয়া সম্ভব। তেমনি আক্রান্তের হার কমাতে পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়। ঢাকার ৯৭টি এলাকার কোথায় করোনা রোগী ॥ আদাবর ৫, আগারগাঁও ২, আরমানিটোলা ১, আশকোনা ১, আজিমপুর ৬, বাবুবাজার ১১, বাড্ডা ৬, বেইলি রোড ৩, বনানী ৮, বংশাল ৭, বানিয়ানগর ১, বাসাবো ১৪, বসুন্ধরা ৪, বেগুনবাড়ী ১, বেগমবাজার ১, বেড়িবাঁধ ১, বকসিবাজার ১, বসিলা ১, বুয়েট এরিয়া ১, সেন্ট্রাল রোড ১, চানখাঁরপুল ৫, চকবাজার ৬, ঢাকেশ্বরী ১, ধানমন্ডি ১৮, ধোলাইখাল ১, দয়াগঞ্জ ১, ইস্কাটন ১, ফার্মগেট ১, গে-ারিয়া ১৩, গোপীবাগ ১, গ্রীন রোড ১০, গুলিস্তান ২, গুলশান ৮, হাতিরঝিল ১, হাতিরপুল ৩, হাজারীবাগ ৯, ইসলামপুর ২, জেলগেট ২, যাত্রাবাড়ী ১৯, জিগাতলা ৫, জুরাইন ১, কল্যাণপুর ১, কামরাঙ্গীরচর ৩, কাজীপাড়া ১, খিলগাঁও ১, কদমতলী ১, কোতোয়ালি ৩, কুড়িল ১, লালবাগ ১৮, লক্ষ্মীবাজার ২, মালিবাগ ৪, মানিকদি ১, মাতুয়াইল ১, মীর হাজিরবাগ ২, মিটফোর্ড ১, মগবাজার ১০, মহাখালী ১০, মোহাম্মদপুর ২০, মতিঝিল ১, মুগদা ২, নবাবপুর ১, নারিন্দা ২, নাখালপাড়া ৫, নিকুঞ্জ ১, পীরেরবাগ ২, পুরানা পল্টন ২, রাজারবাগ ৬, রামপুরা ৩, রমনা ১, রায়েরবাগ ১, রায়েরবাজার ১, সবুজবাগ ১, সায়েদাবাদ ২, শাহ আলীবাগ ৪, শান্তিবাগ ১, শ্যামপুর ১, শান্তিনগর ৬, শ্যামলী ১, সোয়ারিঘাট ৩, সিদ্ধেশ্বরী ৩, শনিরআখড়া ১, সূত্রাপুর ৭, তেজগাঁও ১৬, তেজতুরি বাজার ১, টোলারবাগ ১৯, উর্দু রোড ১, উত্তরা ১৭, ভাটারা ১ ও ওয়ারীতে ২৬ জন করোনা পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়। ১৬ এলাকা রেড জোন ॥ রাজধানীর ১৬ এলাকা করোনাভাইরাসের রেড জোন। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার ওই এলাকাগুলো অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। এসব এলাকায় ইতোমধ্যে ১০ জনেরও বেশি কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা লকডাউন করেছে প্রশাসন। আইইডিসিআরের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে ১০ জনের অধিক করোনা আক্রান্তের মধ্যে ওয়ারীতে ২৬, মোহাম্মদপুরে ২০, টোলারবাগে ১৯, যাত্রাবাড়ীতে ১৯, ধানম-িতে ১৮, লালবাগে ১৮, উত্তরায় ১৭, তেজগাঁওয়ে ১৬, বাসাবোতে ১৪, গে-ারিয়ায় ১৩, মগবাজারে ১০, মহাখালীতে ১০, মিরপুর ১১-১১, মিরপুর ১২- ১০, গ্রীন রোড-১০ ও বাবুবাজারে ১১ জন রোগী আছেন। এছাড়া বনানী, গুলশান, বাড্ডা, আজিমপুর, আদাবর, নাখালপাড়া, রাজারবাগ, ঝিগাতলাসহ রাজধানীর ৯৮টি এলাকায় ৫১৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। যা দেশের মোট রোগীর ৪৫ শতাংশের বেশি। আইইডিসিআর বলছে, করোনার রেড জোন রাজধানীর অন্তত ১৬টি এলাকা। তাই নাগরিকদের লকডাউন মেনে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছে সরকারের এই প্রতিষ্ঠানটি। তেমনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বার বার ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়ে চলছে রাতদিনের মাইকিং। সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত ঘর থেকে বের হওয়া নিষেধ করা হলেও অনেকেই বিনা কারণে ঘোরাফেরা করেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করেও মানুষকে শতভাগ ঘরে রাখা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। যা সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি দেখছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
×