ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে ১১৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

প্রকাশিত: ১১:১৬, ৪ ডিসেম্বর ২০১৯

কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে ১১৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কার্গোতে দুর্নীতির অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে বিমানের সাবেক পরিচালক আলী আহসান বাবু এবং ডিজিএম ইফতেখার হোসেন চৌধুরীকে। তাদের বিরুদ্ধে কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের ১১৮ কোটি টাকা আদায় না করে আত্মসাতের অভিযোগ এনে মামলা করা হয়। এতে আসামি করা হয়- বিমানের ১৬ কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে। বাকি আসামিরা হলো- ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক হাবিবুল্লাহ আকন্দ, সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক (বর্তমানে সৌদি আরবে বিমানের কান্ট্রি ম্যানেজার) মোঃ শহিদুল ইসলাম, সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক (বর্তমানে সৌদি আরবের রিয়াদে রিজিওনাল ম্যানেজার) আমিনুল হক ভূঁইয়া, সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক মোঃ লুতফে জামাল, সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক মোশাররফ হোসেন তালুকদার, সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক রাজীব হাসান, সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক নাসির উদ্দিন তালুকদার, সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক অনুপ কুমার বড়ুয়া, সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক কে এন আলম, সহকারী ব্যবস্থাপক মোঃ ফজলুল হক, সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক সৈয়দ আহমেদ পাটওয়ারী, সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক মনির আহমেদ মজুমদার, সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক এ কে এম মনজুরুল হক ও সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক মোঃ শাহজাহান। দুদক জানায়, মঙ্গলবার সকালে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মোহাম্মদ আলী আহসান ও ইফতেখার হোসেন চৌধুরীসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলার বাদী হলেন উপপরিচালক মোঃ নাসির উদ্দিন। আসামিদের বিরুদ্ধে বিমানের কার্গো হ্যান্ডলিং চার্জ বাবদ ১১৮ কোটি টাকা আদায় না করে সরকারের ক্ষতি করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এ বিষয়ে আলী আহসান বাবু সাংবাদিকদেরকে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার দুপুরে তারা ওই মামলার কাগজপত্র নিয়ে দুদকে হাজির হলে তাদেরকে গ্রেফতার দেখানো হয়। বিমানের কার্গোতে জিএম হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন ২০১২ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত। তারপর পরিচালক গ্রাহক সেবার দায়িত্ব নেয়ার পর তিনিই প্রথম কার্গোতে নন সিডিউল ফ্লাইটের অনিয়ম সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ দায়ের করেন এবং অনিয়ম তদন্তের উদ্যোগ নেন। এরপর তিনি বিমান থেকে অবসর নেয়ার পর এ বিষয়ে তদন্ত চলে। এসব অভিযোগ সম্পর্কে আলী আহসান বাবু বলেন- আমার বিরুদ্ধে ২০০৮ সাল থেকে আর্থিক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে। অথচ সে সময় আমি কর্মরত ছিলাম দুবাইয়ে। যে অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে সেই অভিযোগ তদন্ত করতে হলে- নন সিডিউল ফ্লাইট শুরু হওয়ার পর থেকেই করতে হবে। এ ধরনের ফ্লাইটের কোন নীতিমালা বিমানে কখনোই ছিল না। গত বিশ বছর ধরেই এভাবে চলে আসছে এ জাতীয় ফ্লাইট। আমিই সর্বপ্রথম নীতিমালা তৈরি করে নন সিডিউল ফ্লাইট থেকে চার্জ আদায় শুরু করলে হঠাৎ কার্গোর রাজস্ব বৃদ্বি পায় বিপুলাংশে। এখন আমাকেই তার জন্য দায়ী করা হয়েছে। এটা নিয়তি ছাড়া আর কিছুই নয়। এদিকে ১৬ আসামির মধ্যে বাকি আসামিরা মঙ্গলবার দুপুরেই আকস্মিকভাবে অফিস ত্যাগ করেন। তাদের মধ্যে ৬ জন ছুটির আবেদন জানিয়েছেন। এ মামলার অন্যতম আসামি রিয়াদে বিমানের রিজিওনাল ম্যানেজার আমিনুল হক ভূঁইয়া ঢাকায় ফোন করে স্বজনদেরকে আগাম জামিন নেয়ার পরামর্শ দেন। বিমানে কার্গো দুর্নীতির আলোচিত এই আসামিকে ঢাকা থেকে রিয়াদে পদায়ন করার সময় ব্যাপক সমালোচনা দেখা দেয়। রিয়াদে যাওয়ার পরও কার্গো টিকেট ও কার্গোতে কালোবাজারিতে প্রকাশ্যে জড়িয়ে পড়লে তার অফিস ঘেরাও করেন সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশীরা। উল্লেখ্য, এর আগে গত ২৬ নবেম্বর বিমানের সাবেক দুই ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন মোসাদ্দেক আহমেদ ও ক্যাপ্টেন ফারহাত হাসান জামিলসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। পাইলট নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে সোমবার দুদকের সহকারী পরিচালক মোঃ সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে এ মামলা করেন। অন্য দুই আসামি হলেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সাবেক পরিচালক (প্রশাসন) বর্তমানে এয়ারলাইন্স ট্রেনিং সেন্টারের অধ্যক্ষ পার্থ কুমার পান্ডে ও ব্যবস্থাপক (নিয়োগ) ফখরুল হোসেন চৌধুরী। মঙ্গলবার বিমানের দুই কর্মকর্তা গ্রেফতার হওয়ার সংবাদে গ্রেফতার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিমানে। বিশেষ পাইলট নিয়োগ মামলার আসামি মোসাদ্দিক আহমেদ ও ফারহাত সহ বাকিরা গা ঢাকা দেন। তারা খুব শীঘ্র আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন বলে জানিয়েছেন বাপার এক নেতা।
×