ম্যালওয়্যার থেকে কতটা নিরাপদ গুগল প্লে স্টোর

এ্যান্ড্রয়েড সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞদের মতে, গুগল প্লে স্টোর থেকে এ্যাপ ডাউনলোড করলে এবং কোন সাইড লোডিং বা তৃতীয়পক্ষ এ্যাপ স্টোর ব্যবহার না করলে আপনি ম্যালওয়্যার থেকে নিরাপদ থাকতে পারবেন। এতে আপনার এ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে ভাইরাস আক্রমণ হবে না। এ বিষয়ে রয়েছে অনেক মতের পার্থক্য। ২০১৮ সালে ফর্বস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হওয়া একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, প্লে­ স্টোরে এক রেসিং গেম মনে করে প্রায় ৫ লাখ ব্যবহারকারী প্লে স্টোর থেকে ভাইরাস ডাউনলোড করেছিল। চেক পয়েন্ট সফটওয়্যার টেকনোলজি নামের ইসরাইলি একটি সিকিউরিটি ফার্ম ২০১৭ সালের দিকে প্লে­স্টোরে লুকিয়ে থাকা এমন কিছু এ্যাপ খুঁজে পায় যেগুলো ব্যবহারকারীদের ফোন থেকে প্রতারণাপূর্ণ টেক্সট মেসেজ সেন্ড করছিল। পরে অবশ্য প্লে­স্টোর থেকে সেই ভাইরাস আক্রান্ত এ্যাপগুলোকে সরিয়ে নেওয়া হয়, কিন্তু প্লে­স্টোর থেকে এদের সরিয়ে ফেলার আগেই ২ কোটিবার ডাউনলোড করা হয়েছিল এ্যাপগুলো। সম্প্রতি দ্য নেক্সট ওয়েবের একটি রিপোর্টের হেডিং ছিল; ‘গুগল প্লে­স্টোরে ২০৫টি ক্ষতিকর এ্যাপ খুঁজে পাওয়া গেছে যেগুলো ইতোমধ্যে ৩ কোটির বেশি ডাউনলোড করেছে ব্যবহারকারীরা। এ্যান্ড্রয়েড বনাম ম্যালওয়্যার উইন্ডোজ পিসির মতো কিন্তু এ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে নিজে থেকেই ম্যালওয়্যার প্রবেশ করতে পারে না। এ্যান্ড্রয়েড ঠিক তখনই আক্রান্ত হতে পারে, যদি আপনি নিজে থেকে ফোনে ম্যালিসিয়াস এ্যাপ ডাউনলোড করে ইন্সটল করে এবং এ্যাপটিকে তার কাজের পার্মিশনগুলো এ্যালাউ করে দেন। বর্তমানে সাইবার ক্রিমিনালরা আরও বেশি চালাক হয়ে গেছে। তারা কোনভাবে লেজিট দেখতে লাগা এ্যাপের সঙ্গে ম্যালিসিয়াস কোড এম্বেড করে দেয় এবং এ্যাপটিকে প্লে স্টোরে আপলোড করে দেয় যাতে ব্যবহারকারীরা বিনা দ্বিধায় সেটা ডাউনলোড করে আর পার্মিশনগুলো এ্যালাউ করে দেয়। আপনি বুঝতেই পারবেন না, আপনার ডিভাইসে ম্যালওয়্যার রয়েছে। আপনি হয়তো সাধারণ ফটো এডিটর এ্যাপ ডাউনলোড করেছেন, কিন্তু সেটা আপনার ফোনকে স্লো করা থেকে শুরু করে আপনার পার্সোনাল তথ্যগুলো যেমন- পার্সোনাল ডাটা চুরি, ফোন নম্বর চুরি, ইমেইল এ্যাড্রেস চুরি, আপনার জিপিএস লোকেশন ডাটা এক্সেস, ইত্যাদি নানান টাইপের ম্যালিসিয়াস কাজকর্ম করাতে পারে। আপনার ফোনটি একবার ম্যালওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত করানো গেলে আরও নতুন ম্যালওয়্যার ইন্সটল করানো যেতে পারে সঙ্গে নতুন নতুন এ্যাটাকের জন্য ফোন রেডি হয়ে যায়। এ্যাপলের এ্যাপ স্টোরের চেয়ে গুগল প্লে স্টোর বেশি কলঙ্কিত। এ্যাপেলের সিস্টেম অনেক বেশি হার্ড, ডেভেলপারদের এ্যাপ স্টোরে এ্যাপ আপলোড করতে চাইলে এ্যাপেলের অনেক নিয়ম, টার্মস এ্যান্ড কন্ডিশনস মেনে কাজ করতে হয়। আপনি যদি একজন ডেভেলপার হন, সেক্ষেত্রে অনেক ব্যাপারে সহমত হওয়ার পরেই আপনার এ্যাপটি এ্যাপেল এ্যাপ স্টোরে পাবলিশ হবে। এ্যান্ড্রয়েডের সিস্টেমকে গুগল যতটা সম্ভব ওপেন রাখার চেষ্টা করে। ফলে ডেভেলপাররা সহজেই (এ্যাপ স্টোরের তুলনায় অনেক সহজে) এ্যাপগুলোকে প্লে স্টোরে আপলোড করার সুবিধা পায়। গুগল তাদের সিস্টেমকে যতটা সম্ভব ওপেন করে রাখতেই হয়, কেনোনা ডেভেলপাররা তৃতীয়পক্ষ এ্যাপ স্টোরে এ্যাপ পাবলিশ করতে পারে বা সাইড লোডিংয়ের ও সিস্টেম রাখতে পারে, এতে গুগল, এ্যান্ড্রয়েড এ্যাপগুলোর ওপর থেকে আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ হারয়ে ফেলবে। অনেকটা সহজেই এ্যান্ড্রয়েড এ্যাপ প্লে­ স্টোরে আপলোড করা যায়, ফলে এ্যাপেলের এ্যাপ স্টোরের চেয়ে প্লে স্টোরে ম্যালওয়্যার ছড়ানো অনেক সহজ হয়ে দাঁড়ায়। গুগলে ম্যালওয়্যার গুগল তাদের প্লে স্টোরকে ম্যালওয়্যার থেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য ২০১২ সালে বাউন্সার নামক একটি এ্যান্ড্রয়েড সিকিউরিটি ফিচার লঞ্চ করে। বাউন্সার গুগল প্লে স্টোরে ম্যালিসিয়াস এ্যাপ খুঁজে বের করে এবং ব্যবহারকারীরা সেটাকে ডাউনলোড করার পূর্বেই প্লে স্টোর থেকে সরিয়ে ফেলে। কিন্তু যে বছর বাউন্সার উন্মুক্ত হয়েছিল, এ্যাপ স্টোরে ম্যালওয়্যার ইনফেকশন কেবল ৪০% কমানো সম্ভব হয়েছিল। গুগল পরে একটি বিল্ডইন সিকিউরিটি ফিচার এ্যাড করে ‘প্লে প্রটেক্ট’- কিন্তু বাউন্সারের তুলনায় এতেও বিশেষ করে উন্নতি দেখা যায়নি ম্যালওয়্যার ডিটেক্ট করার ক্ষেত্রে। আলাদা এ্যান্টিম্যালওয়্যার সফটওয়্যারগুলোর সঙ্গে তুলনা করে দেখা যায় গুগল প্লে প্রটেক্টের স্কোর সবচাইতে পেছনে আসে। এরপরে ২০১৬ সালের দিকে গুগল মানুষ দ্বারা ম্যানুয়ালভাবে এ্যাপ রিভিউ প্রসেস চালু করে। কিন্তু সাইবার ক্রিমিনালরা দিনের পর নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে আসে আর নতুন নতুন ভাবে ম্যালিসিয়াস এ্যাপগুলোকে সবার নজর এড়িয়ে প্লে স্টোরে আপলোড করে দেয়। প্লে স্টোর ব্যবহারে যে বিষয়ে সাবধান থাকতে হবে গুগল প্লে স্টোরও শতভাগ নিরাপদ নয়। মানে প্লে স্টোর থেকে যে কোন এ্যাপ ডাউনলোড করবেন আর কিছুই হবে না, এমনটা নয়। কয়েকটি বিষয়ে উল্লেখ করা হলো, যেগুলো অনুসরণ করলে মোটামুটি বেশি নিরাপদ থাকতে পারবেন। প্লে স্টোরে কেবল নামী পাবলিশারদের থেকেই এ্যাপ ডাউনলোড করুন। ডাউনলোড করার পূর্বে অবশ্যই লক্ষ্য করে দেখুন কোন ডেভেলপারের এ্যাপ ডাউনলোড করছেন। আপনার ব্যাংকের এ্যাপ হলে চেক করুন সেটার পাবলিশার আপনার ব্যাংক নিজেই না অন্য কেউ। গুগল প্লে স্টোর শতভাগ নিরাপদ নয়। কিন্তু আন-অফিসিয়ালভাবে এ্যাপ ডাউনলোড করা বা সাইড লোডিং করা থেকে এটা এখনো বেশি নিরাপদ। যে কোন নতুন এ্যাপ ডাউনলোড করার আগে অবশ্যই একটু সময় নিয়ে-এর রিভিউগুলো পড়ে ফেলবেন। আসল ব্যবহারকারীরা কি মন্তব্য করেছে। এ্যাপটি সত্যিই কতটা কাজের বা এতে কি টাইপের সমস্যা রয়েছে সেগুলো ইউজার রিভিউ থেকে ধারণা পেতে পারবেন। যদি বেশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চান সেক্ষেত্রে ভাল এ্যান্টিভাইরাস যেমনÑ মোবাইল সিকিউরিটি ব্যবহার করতে পারেন। অনেক ফোনের সঙ্গে এগুলো বিল্ডইনভাবেই ইন্সটল করা থাকে। আর একটি বিষয় হলোÑ আপনি যদি এ্যান্ড্রয়েডে নিরাপদ থাকতে চান তাহলে আপনার ফোনটি কখনোই রুট করবেন না।