ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

ত্যাগের কোরবানি

প্রকাশিত: ১০:৩৬, ১১ আগস্ট ২০১৯

ত্যাগের কোরবানি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ত্যাগের উৎসব কাল। বাংলাদেশসহ বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়ের বড় দুটি ধর্মীয় উৎসবের অন্যতম; যা কোরবানির ঈদ নামে পরিচিত। আরবীতে ঈদ-উল-আজহা। যার মূল প্রতিপাদ্য হলো ত্যাগ করা। এদিন মুসলমানরা ফজরের নামাজের পর ঈদগাহে গিয়ে দুই রাকাত ঈদ-উল-আজহার নামাজ আদায় করবেন। এরপর যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী কোরবানিতে শরিক হবেন। এদিকে পবিত্র ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপ্রতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাণীতে তারা দেশবাসীকে পবিত্র ঈদ-উল-আজহার শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি মুসলিমউম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন এবং কোরবানির মহান ত্যাগে বলীয়ান হয়ে দেশ সেবায় আত্মনিয়োগ করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান। এদিকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনের পক্ষ থেকে দেশবাসীকে পবিত্র ঈদ-উল-আজহার শুভেচ্ছাও জানানো হয়েছে। কোরবানি উপলক্ষে সারাদেশে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরাও সর্বোচ্চ ত্যাগের জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করছেন। যার যার সাধ্য অনুযায়ী গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ এমনকি মরুভূমির জাহাজ নামে খ্যাত উটও কোরবানির প্রস্তুতি রয়েছে। সারাদেশে কোরবানির পশুরহাটের কেনাবেচা এখন জমজমাট। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতর জানিয়েছে, এবার কোরবানির জন্য সারাদেশে ১ কোটি ১৭ লাখ পালিত গবাদিপশু প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে গরু, মহিষের সংখ্যা ৪৫ লাখ ৮২ হাজার। ছাগল-ভেড়ার সংখ্যা ধরা ৭১ লাখ। তারা জানায়, দেশীয় বাজারের এই চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে গত বছর যত পশু জবাই করা হয়েছিল তার সঙ্গে ৫ শতাংশ যোগ করে। সেই হিসাবে গত বছর ১ কোটি ৫ লাখের বেশি গরু, ছাগলসহ অন্যান্য পশু কোরবানি করা হয়েছিল। ত্যাগের মহিমা ও খুশির বারতা নিয়ে দুয়ারে অপেক্ষা করছে ঈদ-উল-আজহা। রাত পোহালেই সুখের আশরাফ আর দুখের আতরাফ সব ভেদাভেদ ভুলে এককাতারে শরিক হবেন। কোরবানির মধ্য দিয়ে আল্লাহ্র প্রতি অপার আনুগত্য ও সর্বোচ্চ ত্যাগের বহির্প্রকাশ ঘটাবেন। এর মধ্য দিয়ে নিজের ভেতরের পশুত্বকেও কোরবানি করবেন। এর আগে ঈদগায় গিয়ে নামাজ আদায় করবেন। কোরবানির আগে নামাজের খুতবায় তুলে ধরা হবে কোরবানির তাৎপর্য। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধনী-গরিব নির্বিশেষে একত্রে নামাজ আদায় করবেন। শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন কোলাকুলির মাধ্যমে। পবিত্র শহর মক্কায় ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে হজের আনুষ্ঠানিকতা। শনিবার হজ শেষে আজ রবিবার সৌদি আরবে ঈদ উৎযাপন করছেন হাজীরা। আর এদেশে কাল সোমবার পালিত হবে ঈদ-উল- আজহা। হাদিসে বর্ণিত নিয়ম অনুযায়ী মুসলমানদের আগে ঈদের নামাজ পড়তে হবে। তারপরই কোরবানি দিতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর হাদিস অনুযায়ী কেউ নামাজের আগে কোরবানি করতে পারবে না। যদি ঈদের নামাজের আগেই কেউ পশু কোরবানি করে তাহলে সেটা কোরবানি হিসেবে বিবেচিত হবে না। কোরবানি করতে হলে তাকে অবশ্যই ঈদের নামাজে শরিক হতে হবে। তারপর কোরবানিতে অংশ নিতে হবে। এদিকে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে উৎযাপন করার জন্য ভোগান্তি মাথায় নিয়ে লাখ লাখ লোক রাজধানী ছেড়ে গেছেন। সারাদেশে এখন চলছে কোরবানি পশু কেনাকাটার উৎসব। পছন্দমতো পশু কিনতে সবাই হাটে ভিড় জমাচ্ছে। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন হাটে এখন গরু, মহিষ, ছাগল, ভোড়ায় ভরপুর। যাদের এখনও কোরবানির পশু কেনা হয়নি তারা আজকের মধ্যেই পছন্দমতো পশু কেনার কাজ শেষ করবেন। এমনকি কাল নামাজ শেষেও অনেকে কোরবানির পশু কিনবেন। বিধান অনুযায়ী ঈদ-উল-আজহার দিন ও পরের ২ দিনও পশু কোরবানি করা যাবে। আজ থেকে প্রায় ৪ হাজার বছর আগে আল্লাহতা’আলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য হজরত ইব্রাহিম (আ.) তার ছেলে হজরত ইসমাইলকে (আ.) কোরবানি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এটা ছিল মূলত ইবাহিমের (আ.) জন্য আল্লাহ্র পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষা। সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে পরম করুণাময়ের অপার কুদরতে হজরত ইসমাইলের (আ.) পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। তারপর থেকে বিশ্বের মুলমানদের মধ্যে কোরবানি ও ত্যাগের এই ধারা আজও চালু রয়েছে। ইসলামী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোরবানি হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বৈধ পথে উপার্জিত অর্থের মাধ্যমে পশু কেনা, জবাই করে ভক্ষণ করা, অপরের জন্য মাংস বণ্টনের মাধ্যমে নিজের আনন্দ ও স্বার্থকে অন্যের সঙ্গে অংশীদার ও ভাগাভাগি করে মানবতা প্রতিষ্ঠা করা। ইসলামী বিশেষজ্ঞদের মতে, ঈদ-উল-আজহার অন্যতম শিক্ষা হচ্ছে, মনের পশু অর্থাৎ কুপ্রবৃত্তিকে পরিত্যাগ করা। জাতীয় কবির ভাষায় : মনের পশুরে কর জবাই, পশুরাও বাঁচে, বাঁচে সবাই...’। রাজধানীতে ঈদের জামাত -কখন কোথায় ॥ এদিকে ঈদ-উল-আজহার নামাজের জন্য সারাদেশে ঈদগাহ প্রস্তুত করা হয়েছে। রংবেরঙের ফেস্টুন ও আলোকসজ্জা দিয়ে তা সজ্জিত করা হয়েছে। জাতীয় ঈদগাহে ঈদের জামাত ॥ ঈদ-উল-আজহায় দেশের প্রধান ঈদের জামাত সকাল ৮টায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে। তবে আবহাওয়া খারাপ থাকলে ঈদের প্রধান জামায়াত সকাল সাড়ে আটটায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে বলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। প্রধান ঈদের জামাতে শরিক হবেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতি, সংসদ সদস্যসহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষ এতে অংশ নেবেন। ঢাকায় উচ্চ আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থিত জাতীয় ঈদগাহ ময়দানসহ আশপাশের এলাকায় এ উপলক্ষে কড়া নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে প্রধান জামাতে মহিলাদেরও ঈদের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ঈদের প্রধান জামাতে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদের ৫টি জামাত ॥ ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, এবারও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ৫টি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এখানে প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৭টায়। দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টায়, তৃতীয় জামাত সকাল ৯টায়, চতুর্থ জামাত সকাল ১০টায়, পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত অনুষ্ঠিত হবে বেলা পৌনে ১১টায়। সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ঈদ-উল-আজহার নামাজ আদায়ের জন্য মুসল্লিদের সুবিধার্থে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পর্যাপ্ত পানি ও নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। আহলে হাদিস-এর ঈদ জামাত ॥ বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদিসের ঈদ-উল-আজহার জামাত পুরান ঢাকাবাসীর অন্যতম প্রাণকেন্দ্র বংশাল আহলে হাদিস বড় জামে মসজিদ কমিটি ও বংশাল পঞ্চায়েত কমিটির সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে সকাল সাড়ে ৭টায় অনুষ্ঠিত হবে। এতে ইমামতি করবেন বংশাল আহলে হাদিস বড় জামে মসজিদের খতিব শাইখ মোস্তফা বাহাউদ্দিন আল কাশেমী। বংশাল বড় জামে মসজিদের মোতাওয়াল্লি হাজী মোঃ আনোয়ার হোসেন উপস্থিত থেকে ঈদ-উল-আজহার জামাতের সার্বিক বিষয় দেখাশোনা করবেন। বৃষ্টি হলে বংশাল আহলে হাদিস বড় জামে মসজিদে সকাল ৭.৩০ ঘটিকা ও ৮.৩০ ঘটিকায় পৃথক দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। জাকের পার্টির উদ্যোগে ঈদের জামাত ॥ এদিকে রাজধানী ঢাকায় বিশ্ব ওলির রেছালত মঞ্জিল বনানীর দরবার শরীফে সকাল ১০টায় ঈদ-উল-আজহার প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া সংগঠনের পক্ষ থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আরেক জামাত অনুষ্ঠিত হবে। সারাদেশে তাদের তিন শ’টি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয়েছে। রাজধানীতে অন্যান্য ঈদের জামাত ॥ পরিবাগ জামে মসজিদে ঈদ-উল-আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৭টায়, এলিফ্যান্ট রোডের এরোপ্লেন মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায়, পল্লীমা সংসদ ময়দানে প্রতিবারের ন্যায় এবারও সকাল সাড়ে ৭টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এখানে মহিলাদের জন্য পৃথকভাবে নামাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মগবাজার বিটিসিএল কলোনি জামে মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৭টায়, পল্লবী থানাধীন মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনে এ ব্লকে হারুণ মোল্লাহ ঈদগাহ, পার্ক ও খেলার মাঠে সাকাল সাড়ে ৭টায়, মীরবাড়ী আদি (মাদবর) জামে মসজিদ দারুস সালাম জামে মসজিদে সকাল ৭টায়, মিরপুর টোলারবাগ খানকায়ে মশুরিয়া জামে মসজিদে সকাল ৭টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
×