ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও ভাসানচর পরিদর্শনে আসছেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত

প্রকাশিত: ০৪:৫৬, ১৩ জানুয়ারি ২০১৯

  রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও ভাসানচর পরিদর্শনে আসছেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ নতুন বছরে গঠন হওয়া নতুন সরকারকে প্রধান দু’টি সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। ওই দু’টি সমস্যাই হচ্ছে মিয়ানমারের। সামাল দিতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। তবে এ সমস্যা দুটির সহজ সমাধানের পথই হচ্ছে মিয়ানমারের আন্তরিকতা। দেশটির সরকার আন্তরিক হলে বন্ধ হয়ে যাবে ইয়াবা কারবার। সহসা নিজ দেশে ফিরে যেতে ইচ্ছা পোষণ করবে রোহিঙ্গারা। সচেতন মহল জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নসহ সব বিষয়ে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে বড় ধরনের কোনো সমস্যা না থাকলেও রোহিঙ্গা এবং ইয়াবা কারবারকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। কারণ মিয়ানমারের সৃষ্টি এ দুইটি সমস্যার পেছনে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের হাত রয়েছে। ইতোপূর্বে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার বহু চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়েছে একটি বিশেষ মহল। ওই মৌলবাদী গোষ্ঠী দেশে অশান্তি সৃষ্টি করে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে হাত মেলাতে পারে বলে আশঙ্কা করেন অভিজ্ঞজনরা। তবে সরকার উল্লেখিত সমস্যা দুটি সমাধানে ব্যাপক তৎপর রয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে আলোচনা ও ওপারে স্থাপিত ইয়াবা কারখানাগুলো বন্ধ করতে দাবি জানিয়ে আসছে সরকার। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ পতাকা বৈঠকের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে না বলেই ওপারে প্রতিষ্ঠিত ৩৭টি ইয়াবা কারখানা এখনও চালু রয়েছে। সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা সঙ্কট ও ইয়াবা পাচার এই ঝামেলা দুইটি মিয়ানমারের, সমাধানও করতে পারে তারা। সমস্যা সমাধানে মিয়ানমার আন্তরিক হলে সহজ পন্থা বেরিয়ে আসবে। এখানে সমস্যা দু’টির মধ্যে রোহিঙ্গা সঙ্কট দৃশ্যমান। এ সমস্যাটি বিশ্ববিবেককে নাড়া দিয়েছে বলেই রাখাইন থেকে পালিয়ে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ চুক্তি সই করতে বাধ্য হয়েছে মিয়ানমার। তবে ইয়াবা কারখানাগুলো তাদের দেশের অভ্যন্তরে স্থাপিত বলেই অদৃশ্য থেকে গেছে। বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ইতোপূর্বে অনুষ্ঠিত একাধিক পতাকা বৈঠকে ওপারে স্থাপিত ইয়াবা কারখানাগুলো বন্ধ করতে দাবি জানিয়েছে। বৈঠকস্থলে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীদল পুলিশ (বিজিপি) প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেও পরে তা বাস্তবায়ন হয় না। রোহিঙ্গা সমস্যা ॥ রাখাইন রাজ্য থেকে অনুপ্রবেশকারী প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা। ২০১৭ সালের ২৭ আগস্ট থেকে মানবিক কারণে সরকার ছয় হাজার একরের বেশি বনভূমির ওপর তাদের থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। গত ১৬ মাস ধরে তারা থাকছে ৩০টি ক্যাম্পে। উখিয়া টেকনাফে ওই ৩০টি ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ত্যাগ করে পালিয়ে যাচ্ছে গোপনে। তারা ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশের আনাচেকানাচে। কোনভাবেই আটকে রাখা যাচ্ছে না তাদের। সুশীল সমাজের দাবি, রোহিঙ্গারা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া মানে স্থানীয় ও জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে। স্থানীয়দের দাবি, রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে বাইরে আসতে পারায় নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। স্থানীয়দের জনজীবনে তাদের একটা প্রভাব পড়ছে। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু না হওয়ায় দিনদিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে রোহিঙ্গারা। সময় যতই গড়াচ্ছে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের চেকপোস্ট অতিক্রম করে রোহিঙ্গারা নানা উপায়ে ক্যাম্প ছেড়ে বাইরে চলে যাবার চেষ্টা করছে। রোহিঙ্গাদের একটা নির্দিষ্টস্থানে কাঁটাতারের বেড়ার মধ্যে রেখে কঠোর নজরদারিতে রাখার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোঃ আবুল কালাম জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার বিষয়ে সরকারের একটা নির্দেশনা রয়েছে। সেই বিষয়েই এখন আমরা কাজ করছি। রোহিঙ্গাদের নির্দিষ্ট গণ্ডির ভেতরে রাখতে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলেন, দেশে রোহিঙ্গা সমস্যা জিঁইয়ে রাখতে একটি বিশেষ মহল ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিরোধী কলকাঠি নাড়ছে পুরনো রোহিঙ্গা জঙ্গীরা। স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশে তারা চাইছে রোহিঙ্গারা এদেশে থাকুক। রোহিঙ্গাদের কারণে বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত স্থানীয়রা। তারা না পারছে সইতে, না পারছে কইতে। অর্থনৈতিকসহ নানা সমস্যায় নিমজ্জিত হয়েও নীরবে জীবন অতিবাহিত করছে স্থানীয়রা। স্থানীয়দের সমস্যার কথা বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের জন্য সরকার ইতোপূর্বে ভাসানচরে নিরাপদ আবাসন নির্মাণ করেছে। তবে ষড়যন্ত্রকারীরা রোহিঙ্গাদের সেখানে যেতে বারণ করে। রোহিঙ্গারা অনিচ্ছা পোষণ করায় দিন তারিখ ঠিক হওয়া সত্ত্বেও ভাসানচর উদ্বোধন হয়নি। মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি মতে গত ১৫ নবেম্বর প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ষড়যন্ত্রকারীদের ইন্ধনে রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে রাজি না হওয়ায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুতে হোঁচট খায়। রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও ভাসানচর পরিদর্শন করতে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লি শীঘ্রই বাংলাদেশে আসছেন বলে জানা গেছে। জাতিসংঘের বিশেষ দূত ১৪ জানুয়ারি থাইল্যান্ড ও সেখান থেকে ১৯ জানুয়ারি বাংলাদেশে পৌঁছবেন। বাংলাদেশে অবস্থানকালে তিনি রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন ছাড়াও ভাসানচর পরিদর্শনে যাবার কথা রয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে। ইয়াবার আগ্রাসন ॥ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের আকিয়াব ও মংডু এলাকায় স্থাপিত কারখানাগুলো থেকে ইয়াবার চালান আসে বাংলাদেশে। কাখানামালিকরা এদেশের চিহ্নিত কিছু চোরাচালানিকে (গডফাদার) ইয়াবার ডিলার নিয়োগ ও বিপণন কেন্দ্র হিসেবে বাংলাদেশকে টার্গেট করে ইয়াবার চালান পাঠিয়ে থাকে। ইয়াবা গডফাদাররা হঠাৎ কোটি কোটি টাকা ও সম্পদের মালিক বনে যায়। দৈনন্দিন পরিবর্তন দেখে যুবসমাজের একটি অংশ ঝুঁকে পড়ে ইয়াবা কারবারে। উখিয়া টেকনাফে আশ্রিত কিছু রোহিঙ্গা স্বদেশে গিয়ে ইয়াবার চালান আনছে। ইয়াবা কারবারিদের মধ্যে অনেকে জনপ্রতিনিধিও নির্বাচিত হয়েছে। ইয়াবা প্রবেশ রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পালাবদল করে টহল দিচ্ছে। তারপরও মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান ঢুকছে। প্রতিদিন জব্দ করা হচ্ছে লাখ লাখ পিস ইয়াবা। মামলা এবং আটকও হয়েছে অনেকে। ইয়াবা প্রবেশ রোধ ও মাদকমুক্ত দেশ গড়তে বর্তমান সরকার মাদক বিরোধী নতুন আইন প্রণয়ন করেছে। শীর্ষ গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে ওই আইনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে গোপনে কলকাঠি নাড়ছে। ইতোপূর্বে রুজু হওয়া ও বিচারাধীন মামলা থেকে রেহাই পেতে গডফাদাররা বিভিন্ন স্থানে দৌড়ঝাঁপ দিচ্ছে। এদিকে ইয়াবা প্রবেশ রোধ ও মাদকমুক্ত দেশ গড়তে বর্তমান সরকার জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে কাজ করছে। মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রেখেছে র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ২০১৮ সালের মে মাস থেকে দেশজুড়ে শুরু হওয়া মাদকবিরোধী টানা অভিযানের ফলে মাদক চোরাচালান ও বিক্রি অনেকটা কমে গেলেও গডফাদাররা রয়েছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। মাদক ব্যবসায়ীরা নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে কক্সবাজারে ৩৫ জন ইয়াবা কারবারি নিহত হয়েছে। উল্লেখ্য গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর থেকে মাদকবিরোধী নতুন আইন কার্যকর হয়েছে। নতুন এ আইনে ইয়াবা পাচার মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ছাড়াও অন্য ক্ষেত্রে সাজার মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
×