ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

সংলাপের ফল না জেনে তফসিল ঘোষণা করবেন না

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৬ নভেম্বর ২০১৮

সংলাপের ফল না জেনে তফসিল ঘোষণা করবেন না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের চলমান সংলাপের ফল না জেনে তফসিল ঘোষণা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। একই সঙ্গে তারা একাদশ জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রদান এবং ইভিএম ব্যবহার না করারও দাবি জানিয়েছে। ইসি সচিব সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের বিষয়টি তফসিলে প্রতিফলিত হবে। তবে তফসিল পেছানো হবে কিনা সেটা এখনই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব হচ্ছে না। সোমবার জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রবের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের একটি প্রতিনিধি দল সিইসির সঙ্গে বৈঠকে এই দাবি জানিয়েছে। বৈঠক শেষে আসম আব্দুর রব বৈঠক প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, সংলাপ হচ্ছে। সংলাপের ফল না জেনে আমরা কমিশনকে তফসিল না দিতে বলেছি। ২৮ জানুযারি পর্যন্ত নির্বাচন করার সময় আছে। অতীতে অনেকবার এভাবে তফসিল পেছানো হয়েছে। জাতির স্বার্থে তফসিল পেছানো কোন বিষয় নয় বলে উল্লেখ করেন আসব রব। ৭ নবেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপ আছে। সেই সংলাপের ফল জেনেই তফসিল ঘোষণা করতে হবে। এর আগে বেলা পৌনে চারটায় আসম আব্দুর রবের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে জেএসডির সভাপতি আসম আব্দুর রব ছাড়াও আব্দুল মালেক রতন, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির গয়েশ্বর রায়, বরকত উল্লাহ বুলু, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, গণফোরামের মোকাব্বির খান, নঈম জাহাঙ্গীর, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জাফরুল্লাহ চৌধুরী অংশ নেন। অপরদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদাসহ অপর চার কমিশনার এবং কমিশন সচিব বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে আসম রব সাংবাদিকদের বলেন, কমিশনের সঙ্গে সুন্দর পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। তারা কিছু বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে; দুই-একটা বিষয়ে দিতে পারেনি। কমিশনকে বলেছি, আপনাদের অংশীজন হচ্ছে রাজনৈতিক দল। তাদের সম্মতি ছাড়া তফসিল ঘোষণা করলে প্রশ্নের সম্মুখীন হবেন। নির্বাচনের পরও অর্থাৎ ’১৯ সালের পরও তো দেশে আপনাদের থাকতে হবে। সেই কথাটা ভেবেই আপনারা দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি বলেন, আমরা গ্রেফতারি ও ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছি। সিইসি বলেছেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনী থাকবে না সে কথা ইসির পক্ষ থেকে কখনও বলা হয়নি। অতীতে নির্বাচনে সেনাবাহিনী ছিল। তবে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেয়ার ক্ষমতা তাদের নেই। তাদের সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। এ প্রসঙ্গে রব সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ, আনসারের তো যথেষ্ট ক্ষমতা নেই। কোন বিশৃঙ্খলা হলে সেনাবাহিনী যাতে গ্রেফতার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে সেটা আমরা বলেছি। ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে বলেছি, কেউ চায় না নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হোক। ভোটারদের মতো আমরাও চাই না নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হোক। রাজনৈতিক দলগুলো চায় না। আপনারা (কমিশন) এ বিষয়ে সিরিয়াস হবেন না। তবে কমিশন এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়নি উল্লেখ করেন। বলেন, নির্বাচনে কমিশন পোলিং এজেন্টদের নিরাপত্তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আমাদের প্রস্তাব উনারা (ইসি) বিবেচনায় নিয়েছেন। আমরা বলেছি- ইসি তো নিরপেক্ষ সংস্থা। আপনারা সিরিয়াস হবেন না। পোলিং এজেন্টদেরও নিরাপত্তা ছাড়া নির্বাচনের আগে ও পরে সাদা কাগজে তাদের কাছ থেকে কোন সই নেয়া যাবে না। ফল গণনার পর প্রথমেই তাদের দেখাতে হবে। তবে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা সুষ্ঠু নির্বাচনে কমিশনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। আগের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তারা বলেন, নির্বাচনের আগেরদিন পুলিশ বিরোধী দলের এজেন্টদের আটক করে নিয়ে যাচ্ছে। ইসি কিছু করতে পারেনি। ফলে আপনাদের দিয়ে কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে? এ সময় তারা কমিশনের প্রতি মানুষের কোন আস্থা নেই উল্লেখ করেন। তখন কমিশনের পক্ষ থেকে একজন কমিশনার ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিই মানুষের আস্থা নেই। এ সময় ইভিএম মেশিনে ভোট কারচুপির বিষয়টিও ঐক্যফ্রন্ট থেকে তোলা হয়। কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, এতে কারচুপির কোন সুযোগ নেই। এটা পরীক্ষিত। জবাবে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ইভিএম মেশিনে কারচুপির সুযোগ রয়েছে। বৈঠকে কমিশনের প্রতি উদ্দেশে করে আ স ম রব বলেন, নির্বাচনকালীন আপনারা সরকারের একটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে দেড় হাজার ব্যালট পেপার কম পড়ে। সেখানে আপনারা ব্যালট পেপার সরবরাহ করতে পারেননি বলেও তিনি অভিযোগ করেন। বিএনপিকে নিয়ে ড. কামালের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর সোমবারই প্রথম তারা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসল। যদিও এর আগে গত ৩ নবেম্বর ড. কামাল হোসেন স্বাক্ষরিত একটি চিঠি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের উদ্দেশে পাঠানো হয়। সেখানে চলমান সংলাপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তফসিল ঘোষণার বিষয়ে কমিশনের কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করার আহ্বান জানানো হয়। আগামী বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। গত রবিবারের বৈঠকে তারা এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর ঐক্যফ্রন্টের নেতারা নির্বাচন কমিশনে বৈঠকে তফসিল ঘোষণার সিদ্ধান্ত না নেয়ার আহ্বান জানায়। এদিকে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বৈঠক শেষে সোমবার সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, আগামীকাল বুধবারের সংলাপের বিষয়টি তফসিলে প্রতিফলিত হবে। ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধি দল ইসিকে সংলাপের বিষয়টি জানিয়েছে। কমিশন বলেছে, আগামী বৃহ্স্পতিবার ৮ নবেম্বর কমিশনের সভা আছে। ওই সভায় ৭ নবেম্বরের সংলাপের বিষয়টি প্রতিফলিত হবে। তবে তফসিল পেছানো হবে কিনা, সেটি এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন প্রসঙ্গে বলেন, কমিশন ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের জানিয়েছে সেনাবাহিনীর বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তফসিল ঘোষণার পর আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ঐক্যফ্রন্ট ইভিএম ব্যবহার না করার কথা জানিয়েছে। কমিশন বলেছে, সীমিত আকারে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। তবে কতটি কেন্দ্রে বা কোন্ কোন্ কেন্দ্রে ব্যবহার করা হবে তা চূড়ান্ত হয়নি। পোলিং এজেন্টদের নিরাপত্তা ও নির্বাচনের ফল ঘোষণার বিষয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে কমিশন একমত হয়েছে।
×