ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

সিঙ্গাপুর প্রবাসীদের মূল্যবান সামগ্রী পৌঁছে দেয়ার নামে প্রতারণা

প্রকাশিত: ০৭:৪০, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সিঙ্গাপুর প্রবাসীদের মূল্যবান সামগ্রী পৌঁছে দেয়ার নামে প্রতারণা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সিঙ্গাপুর প্রবাসী বাংলাদেশীদের মূল্যবান সামগ্রী পৌঁছে দেয়ার নামে অভিনব কায়দায় হাতিয়ে নেয়ার সঙ্গে জড়িত এক প্রতারককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন। উদ্ধার করা হয়েছে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত পারভেজের দুটি বাংলাদেশী পাসপোর্ট, প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া ১টি স্বর্ণের নেকলেস, ৪টি স্বর্ণের চেইন, ২টি স্বর্ণের নূপুর ও ২টি স্বর্ণের ব্রেসলেটসহ অন্যান্য মালামাল। গত ৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে রাজধানীর তুরাগ থানাধীন কামাড়পাড়ার নিশাতনগর এলাকা থেকে পিবিআইয়ের ঢাকা মেট্রোর অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার বশির আহমেদের তত্ত¡াবধায়নে একটি দল বিশেষ অভিযান চালিয়ে মোঃ নাছির উদ্দিন ওরফে পারভেজ (৩২) নামের ওই প্রতারককে গ্রেফতার করে। পারভেজের পিতার নাম মোঃ হাশেম আলী। মাতা-পারভীন আক্তার। গ্রাম-শিবেরপাড়া, পোস্ট-দেওপাড়া, থানা-ঘাটাইল, জেলা-টাঙ্গাইল। অন্য পাসপোর্টে তার ঠিকানা-সাং-মোহাম্মদপুর, থানা-সাঁথিয়া, জেলা-পাবনা উল্লেখ রয়েছে। পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার জানিয়েছেন, প্রবাসী বাংলাদেশীদের এ ব্যাপারে আরও সতর্ক হওয়া উচিত। কারণ বিদেশে অনেক বাংলাদেশীর এ ধরনের প্রতারণার সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য মিলেছে। এ ব্যাপারে পিবিআই ঢাকা মেট্রোর বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ জানান, মুন্সীগঞ্জের বাসিন্দা সাগর (২৬) নামের এক যুবকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রতারককে গ্রেফতার করা হয়। সাগর জানায়, তার বোনজামাই নাছির তিন বছর ধরে সিঙ্গাপুরে থাকেন। সিঙ্গাপুরে থাকাকালে নাছিরের সঙ্গে পারভেজের পরিচয় হয়। পারভেজ জানায়, সে ২৯ আগস্ট দেশে যাচ্ছে। নাছির তার পরিবারের জন্য পারভেজের কাছে দুটি স্বর্ণের পায়েল, ২টি স্বর্ণের ব্রেসলেট, ১টি স্বর্ণের নেকলেস, ৪টি স্বর্ণের চেইনসহ প্রায় চার লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার এবং ২টি আইফোন ১০ এক্স মোবাইল যার মূল্য অনুমান ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার মালামালসহ মোট সাড়ে ৫ লাখ টাকার মালামাল দেয়। আর নগদ ৯ হাজার টাকা দেয় মালামালগুলো বাড়ি পৌঁছে দিতে। গত ২৯ আগস্ট রাতে পারভেজ বাংলাদেশের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন। পারভেজ তার মোবাইল নম্বর থেকে নাছিরের শ্যালক সাগরকে ফোন করে বিমানবন্দরের গোলচত্বরের সামনে থাকতে বলে। সাগর সেখানে গেলে পারভেজ একটি কাগজে মোড়ানো অবস্থায় কিছু মালামাল সাগরের হাতে দেয়। সাগর প্যাকেট খুলে দেখে তার ভগ্নিপতির পাঠানো স্বর্ণালঙ্কারের সঙ্গে পারভেজের দেয়া স্বর্ণালঙ্কারের মিল নেই। পারভেজকে ঘটনা জিজ্ঞাসা করলে সে জানায়, বিমানবন্দরের ভেতরে কাস্টমস্ সব মালামাল রেখে দিয়েছে। এরপর সাগরের হাতে থাকা প্যাকেট নিয়ে পারভেজ পালিয়ে যায়। পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, পারভেজ এভাবে চাঁদপুর জেলা সদর থানাধীন গাজিবাড়ী পুরানবাজার এলাকার বাসিন্দা মোঃ আসিফ, নওগাঁ জেলা সদর কালিপুর এলাকার আনোয়ার হোসেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা সদর চর সৈয়দপুর এলাকার মোঃ দিদার, নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ থানাধীন চর খাগরা এলাকার মোঃ ইমামসহ সিঙ্গাপুরে থাকা বহু বাংলাদেশীর কাছ থেকে এভাবে দীর্ঘদিন ধরে মালামাল হাতিয়ে নিচ্ছিল। পারভেজ পরিকল্পিতভাবে এমন প্রতারণা করে আসছিল। প্রতারণার পর গ্রেফতার এড়াতে পারভেজ ভুয়া নাম ঠিকানায় পাসপোর্ট তৈরি করেছে। ওইসব ভুয়া পাসপোর্টের ফটোকপি যারা তার কাছে মালামাল দেয়, তাদের কাছে দিয়ে আসে। মূলত বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতেই এমন কৌশল। পরবর্তীতে ওইসব ঠিকানায় গিয়ে তার হদিস মেলে না। পারভেজ প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছে, সে প্রতারণার উদ্দেশ্যেই ভুয়া ঠিকানায় পাসপোর্ট তৈরি করে ২০০৭ সালে সিঙ্গাপুর যায়। সিঙ্গাপুরে থাকা অবস্থায় ২০১৫ সালে তার ডিজিটাল পাসপোর্ট হয়। পরবর্তীতে সে প্রতারণার কাজটি চালিয়ে যেতে দেড় লাখ টাকা দিয়ে পাবনার ঠিকানায় পাবনা জেলার এক পাসপোর্ট কর্মকর্তার মাধ্যমে আব্দুর রবের মাধ্যমে পাবনা জেলা পাসপোর্ট অফিসের অফিস সহকারী মোঃ সুমনকে দিয়ে ভুয়া ঠিকানায় দ্বিতীয় পাসপোর্ট তৈরি করে। পারভেজের বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে পিবিআইয়ের তরফ থেকে। আর ভুয়া পাসপোর্ট তৈরির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
×