ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

জার্মান দল থেকে অবসর ওজিলের

প্রকাশিত: ০৬:৫৬, ২৪ জুলাই ২০১৮

জার্মান দল থেকে অবসর ওজিলের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বয়সটা খুব বেশি নয়। মাত্র ২৯ বছর। এই সময়েই জার্মান জাতীয় দল ও ক্লাব ফুটবলে মর্যাদার সব ট্রফি জয়ের স্বাদ পেয়েছেন। অনায়াসেই খেলতে পারতেন আগামী বিশ্বকাপ, চাইলে ২০২৬ বিশ্বকাপও। কিন্তু বড্ড অসময়েই জার্মান জাতীয় দলের জার্সিটা খুলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ওজিল। তারকা এই এ্যাটাকিং মিডফিল্ডার রাগে, ক্ষোভে, অভিমানে জাতীয় দল থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। রবিবার রাতে ওজিল অবসর প্রসঙ্গে যে বার্তা দিয়েছেন তার পুরোটাই ছিল রাগ, ক্ষোভ আর অভিমানে ভরপুর। সুদর্শন এই ফুটবলার জানিয়েছেন, এবার রাশিয়া বিশ্বকাপে জার্মানি গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নেয়ার কারণে তাকে অব্যাহতভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ শুনতে হচ্ছে নিয়মিত। এসবকে তিনি বর্ণবাদী ও অশ্রদ্ধামূলক আচরণ হিসেবে অভিহিত করেছেন। মূলত এ কারণেই ২০১৪ বিশ্বকাপজয়ী তারকা জার্মান জাতীয় দলকে ‘না’ বলে দিলেন। অসময়ে অবসর হলেও ওজিলের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেল। গত মে মাসে লন্ডনে একটি অনুষ্ঠানে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপে এরদোগানের সঙ্গে ছবি তুলে সমালোচিত হন ওজিল। ওজিল দাবি করেন, যখন আমরা জিতি তখন আমি জার্মান, কিন্তু যখন আমরা হারি তখন আমি অভিবাসী। ওজিল জার্মানির ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপ জয়ে অনবদ্য ভূমিকা রেখেছিলেন। জার্মানির হয়ে ৯২ ম্যাচে ২৩ গোল করা এই মিডফিল্ডার সমর্থকদের ভোটে ২০১১ সাল থেকে পাঁচবার জাতীয় দলের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে জার্মানদের আচরণের কারণে জাতীয় দলের হয়ে আর খেলতে না চাওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া লম্বা বিবৃতিতে ওজিল লিখেছেন, তার মনে হচ্ছে কর ও ভাল কাজে অনুদান দিলেও এবং বিশ্বকাপ জিতলেও তাকে জার্মানরা ‘মেনে নিতে পারেনি’। এরদোগানের সঙ্গে ছবি তোলার পর জার্মান ফুটবল এ্যাসোসিয়েশন (ডিএফবি) কড়া সমালোচনা করেছিল ওজিলকে। চারপাশের আচরণে ক্ষুব্ধ আর্সেনালের এই খেলোয়াড়। ওজিল বলেন, সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনার কারণে অনেক কষ্ট নিয়ে অনেক বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমি আর জার্মানির হয়ে খেলব না। কারণ বর্ণবাদী এবং অশ্রদ্ধামূলক আচরণের শিকার হয়েছি বলে আমার মনে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, দারুণ গর্ব এবং শিহরণ নিয়ে আমি জার্মানির জার্সি পরতাম, কিন্তু এখন আর না। নিজেকে অবাঞ্ছিত মনে হচ্ছে; আমি ২০০৯ সালে জাতীয় দলের হয়ে অভিষেকের পর যা অর্জন করেছি তা ভুলে যাওয়া হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। লন্ডনে একটি ইভেন্টে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সঙ্গে দেখা হয় ওজিল ও ইকাই গুন্ডোগানের। ওজিলের মতো গুন্ডোগানও তুর্কি বংশোদ্ভূত। এরদোগানের সঙ্গে দু’জনের ছবি প্রকাশ পেলে জার্মানির রাজনীতিবিদরা সমালোচনায়মুখর হন। সমালোচনার মিছিলে ছিলেন জার্মান ফুটবল এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিও। ওই ছবির ভেতরে রাজনীতি ছিল না বলে জানান ওজিল। বলেন, এটা রাজনীতি বা নির্বাচন ছিল না; এটা ছিল আমার পরিবারের দেশের সবচেয়ে বড় পদটাকে শ্রদ্ধা জানানো। মূলত বিশ্বকাপের আগে থেকেই ঝামেলার মধ্যে ছিলেন ওজিল। তুরস্কের প্রেসিডেন্টকে আর্সেনালের জার্সি উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন তিনি। তখন থেকেই কড়া সমালোচনা শুনতে হচ্ছিল। বিশ্বকাপের প্রথমপর্ব থেকে জার্মানি বিদায় নেয়ার পর ব্যাপারটি আরও খারাপের দিকে মোড় নেয়। ইউরোপের পাওয়ার হাউসদের এমন বাজে পারফর্মেন্সের জন্য ওজিলকেই দায়ী করতে থাকেন সমর্থকরা। তুর্কি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করার ঘটনায় গুন্ডোগান প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলেও ওজিল এতদিন এটি নিয়ে মুখ খোলেননি। অবশেষে অবসরের ঘোষণা দিয়ে বিষয়টি তিনি পরিষ্কার করেছেন। বলেছেন, এটা কোন রাজনৈতিক সাক্ষাত ছিল না। নিতান্তই সৌজন্যতাবশত সেই সাক্ষাত নিয়ে যে এত কিছু হবে, সেটি কখনও ভাবিনি। তা ছাড়া ভুলে গেলে চলবে না। আমার দুটি হৃদয়। একটি তুর্কি, অন্যটি জার্মান। তুরস্ক আমার জন্মস্থান। আমি ছোটবেলা থেকে শিখেছি, কখনও নিজের উৎসকে ভুলে গেলে চলে না। তুরস্ক আমার উৎসভূমি। আমার মা আমাকে সেটিই শিখিয়েছেন। ২০০৯ সাল থেকে জার্মানির জার্সিতে খেলছেন ওজিল। ৯২ ম্যাচের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই তারকা ফুটবলার তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছেন। ২০১০ বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফর্মেন্স দিয়ে নিজেকে চিনিয়েছিলেন। এরপরই পাড়ি জমান বিশ্বের সবচেয়ে দামী ও সফল ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে। সেখানেও ছিলেন সফল। এরপর ২০১৩ সালে নাম লিখিয়েছেন ইংলিশ ক্লাব আর্সেনালে। ২০১৪ সালে জার্মানির চতুর্থ বিশ্বকাপ জয়ে রাখেন অসামান্য অবদান।
×