ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

কাঁচা মরিচের ঝালে দিশেহারা ভোক্তা, চালও উর্ধমুখী

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ৭ জুলাই ২০১৮

  কাঁচা মরিচের ঝালে দিশেহারা ভোক্তা, চালও উর্ধমুখী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কাঁচা মরিচের ঝালে দিশেহারা ভোক্তা। জাত ও মানভেদে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ পেতে ভোক্তাকে গুনতে হচ্ছে ১৬০-১৮০ টাকা পর্যন্ত। অথচ সপ্তাহ দুয়েক আগে এই মরিচ বিক্রি হয়েছে ৪০-৬০ টাকা কেজি। মরিচের সঙ্গে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। চালের বাজারও উর্ধমুখী। অপরিবর্তিত রয়েছে ভোজ্যতেল, চিনি, আটা, ডাল ও সবজির দাম। কিছুটা কমেছে গরুর মাংস, রসুন ও মাছের দাম। এছাড়া ডিমের দাম বেড়েছে। রাজধানীর কাওরান বাজার, কাপ্তান বাজার, ফার্মগেট কাঁচা বাজার ও ফকিরাপুল বাজার ঘুরে নিত্যপণ্যের দরদামের এসব তথ্য পাওয়া গেছে। কাঁচা বাজারে বেশির ভাগ সবজির সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। পটল, ঝিঙা, ধুন্দল, চিচিংগা, বেগুন, কাঁকরোল ঢেঁড়স, মিষ্টি কুমড়া, পেঁপে, করলাসহ প্রায় সব সবজিতে বাজার ভরপুর। সরবরাহ ভাল থাকায় সবজির দাম তেমন বাড়েনি। বাজারে অন্যান্য সবজি কেজিপ্রতি দর ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে খুচরা পর্যায়ে। তবে হঠাৎ করে মরিচের বাজার অস্থির হয়ে উঠছে। টানা বর্ষণে ক্ষেতে পানি জমে যাওয়ায় মরিচ পচে যাওয়াসহ চারাগাছগুলো মরে যাচ্ছে। আর এ কারণে মরিচের সরবরাহ কম। কাওরান বাজারের সবজি বিক্রেতা খোকন জানান, প্রতিবছর বর্ষার এই সময়টাতে মরিচের দাম বেড়ে থাকে। এবারও তাই হয়েছে। তবে সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মরিচের দাম আবার কমে যাবে। এদিকে, রমজান মাসে কাঁচা মরিচের দর ৬০-৮০ টাকার মধ্যে ছিল। কখনও কখনও তা ৪০ টাকায়ও নেমেছে। এখন মরিচ কিনতে গেলে ক্রেতাকে প্রায় তিনগুণ দাম দিতে হচ্ছে। দাম বেড়েছে পেঁয়াজের। কাওরান বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা মনির জনকণ্ঠকে বলেন, আমদানিকৃত পেঁয়াজ কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মানভেদে দেশীয় জাতের পেঁয়াজ ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা জানান, ঈদের পরে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০-১৫ টাকা বেড়েছে। অন্যদিকে দেশী পেঁয়াজের দর বেড়েছে কেজিতে ৫-১০ টাকা। কাপ্তান বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা নাসির বলেন, বাজারে দেশী পেঁয়াজ সরবরাহ কম। ভারতীয় পেঁয়াজের বাজারও আগের চেয়ে চড়া। এ দুইয়ে মিলে পেঁয়াজের দর বেড়েছে। তবে চীনা বড় রসুনের দর কেজিতে ২০ টাকার মতো কমে ৮০ টাকায় নেমেছে। এছাড়া ডিমের দাম বেড়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরেই ডিমের দাম কম ছিল। গত দুই-তিন মাসে ৭০-৮০ টাকার মধ্যে প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম কিনতে পেরেছেন ক্রেতারা। এখন সেই ডিম কিনতে ক্রেতাকে ৯৫-১০০ টাকা গুনতে হচ্ছে। ডিম বিক্রেতারাও বলছেন, সরবরাহ কম। সে তুলনায় চাহিদা বেশি। ঈদে গরু ও মুরগির মাংসের বাড়তি চাহিদার কারণে দাম বেশ বেড়ে গিয়েছিল। এখন বাড়তি চাহিদা নেই। তাই দর কিছুটা কমেছে। বাজারে এখন গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৪৮০ টাকা দরে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা, যা ঈদের আগে ৫৫০ টাকায় উঠেছিল। অবশ্য রমজান মাসে সিটি কর্পোরেশন গরুর মাংসের দাম সর্বোচ্চ ৪৬০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। ব্রয়লার মুরগির কেজিপ্রতি দর এখন ১৫০ টাকা, যা ঈদে ১৭০ টাকায় উঠেছিল। ফকিরাপুল বাজারের মুরগি বিক্রেতা রশিদ জনকণ্ঠকে বলেন, ঈদের আগে তিনি কক মুরগি ৩০০-৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। এখন তা ২৬০ টাকা দরে মিলছে। একইভাবে দেশী মুরগি কেজিতে ৫০ টাকা কমে ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, কিছুটা কমলেও মুরগির বাজার এখনও চড়া। কক মুরগির দর সাধারণত ২০০-২২০ টাকার মধ্যে থাকে। এছাড়া ইলিশ ও চিংড়ি মাছের দাম কিছুটা বাড়লেও দেশীয় জাতের মাছের দাম কিছুটা কমেছে। তবে এখন ইলিশ ধরার মৌসুম শুরু হচ্ছে। নদী ও সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলেরা। মাছ বিক্রেতারা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলছে, এ বছর নদী ও সাগরে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যেতে পারে। এদিকে, বাজেট ঘোষণার পর থেকে চালের বাজার উর্ধমুখী প্রতিকেজি উন্নতমানের সরু মিনিকেটে ও নাজিরশাইল চাল ৬০-৬৮, মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা ৫০-৫৫ এবং মোটা চায়না ইরি ও স্বর্ণা চাল ৪২-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছে, বাজেটের পর থেকে চালের দাম বেড়ে যাচ্ছে। আমদানিতে শুল্কহার না কমালে চালের দাম কমবে না। প্রসঙ্গত, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে চাল আমদানির ওপর ২৮ শতাংশ শুল্কারোপ করা হয়েছে। এর আগে চালের দাম কমাতে রেয়াতি সুবিধা দেয়া হয় আমদানিতে। ফলে সরকারী ও বেসরকারী খাতে ইতোমধ্যে বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি হয়েছে। কিন্তু বাজেট ঘোষণায় রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয়ায় শুল্ক সুবিধায় আমদানিকৃত চাল এখন বেশি দামে বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। এতে করে ভোক্তাদের পকেট ফাঁকা হলেও অধিক মুনাফায় ফুলেফেঁপে উঠছে ব্যবসায়ীরা।
×