ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

খুলনায় বিশেষ অভিযান, থাকবে ৫ হাজার পুলিশ

ভাসমান ভোটাররাই ফ্যাক্টর গাজীপুরে, আধুনিক নগরীর প্রত্যয় প্রার্থীদের

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ২২ এপ্রিল ২০১৮

ভাসমান ভোটাররাই ফ্যাক্টর গাজীপুরে, আধুনিক নগরীর প্রত্যয় প্রার্থীদের

অমল সাহা, খুলনা, মোস্তাফিজুর রহমান টিটু, গাজীপুর ও নুরুল ইসলাম, টঙ্গী থেকে ॥ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের (জিসিসি) নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, সেই সঙ্গে দ্রুত জমে উঠছে এবারের নির্বাচন। এবারের নির্বাচনেও প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ের ভাগ্য নির্ধারণে ভাসমান ভোটাররাই বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে। তাই নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী নির্বাচন প্রচার কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও শুরু না হলেও নিজেদের সমর্থন বাড়িয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের হারাতে তফসিল ঘোষণার পর থেকেই মেয়র প্রার্থীসহ প্রায় সকল প্রার্থী নানা কৌশলে নির্বাচনী প্রচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে শুরু থেকেই প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গের নানা অভিযোগ উঠছে। ইতোমধ্যে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ চার মেয়র প্রার্থীকে লিখিতভাবে সতর্ক করেছেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার। সোমবার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষদিন। এখন পর্যন্ত সাধারণ আসনের এক কাউন্সিলর প্রার্থী বাদে আর কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদসহ প্রায় সকল প্রার্থী গাজীপুরকে মাদক, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত একটি আধুনিক ও পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করে ভোটার ও কর্মী- সমর্থকদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, বিএনপির প্রার্থী মোঃ হাসান উদ্দিন সরকার, জাসদের রাশেদুল হাসান রানা, ইসলামি ঐক্যজোটের মোঃ ফজলুর রহমান, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের নাসির উদ্দিন, ইসলামী ফ্রন্টের মোঃ জালাল উদ্দিন, কমিউনিস্ট পার্টির গাজী রুহুল আমিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ উদ্দিন ও মোঃ সানাউল্লাহ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। চার মেয়র প্রার্থীকে সতর্ক ॥ সহকারী রিটার্নিং অফিসার মোঃ তারিফুজ্জামান জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের এবারের নির্বাচনে কয়েক প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি অমান্যের অভিযোগ পাওয়া যায়। তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্তে সেগুলোর প্রমাণও পাওয়া যায়। এর প্রেক্ষিতে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে মেয়র পদের চার প্রার্থী আওয়ামী লীগের মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, বিএনপির মোঃ হাসান উদ্দিন সরকার, জাসদের মোঃ রাশেদুল হাসান রানা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াত নেতা মোঃ সানাউল্লাহকে সতর্কীকরণের চিঠি দেয়া হয়েছে। এসব প্রার্থী আবার বিধি ভঙ্গ করলে তাদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। নির্বাচনে ভাসমান ভোটাররা ফ্যাক্টর ॥ এদিকে এবারের নির্বাচনেও প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ের ভাগ্য অনেকটা নির্ধারণ হবে ভাসমান ভোটারদের ভোট। নির্বাচনে এসব ভোটারই বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে। তাই এবারেও এসব ভোটারের কদর ইতোমধ্যে বেড়েছে। প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা ভোটার তালিকা ধরে বিভিন্ন পাড়া ও মহল্লায় গিয়ে ভোটারদের খোঁজ নিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। গাজীপুর শিল্পাঞ্চল জেলা হওয়ায় শিল্প-কারখানায় চাকরির সুবাদে অন্য জেলার বহু লোকজন এ জেলায় এসে অস্থায়ীভাবে বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করছে। এ কারণে এখানে এক এলাকার ঠিকানায় তারা ভোটার হলেও কর্মস্থল পরিবর্তনের কারণে স্থানীয়দের কাছে অপরিচিত। তাদের বাসাবাড়ির ঠিকানাও প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। নির্বাচনে এবারও ভাসমান এসব ভোটারই বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে বলে স্থানীয়দের অভিমত। প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকরা তালিকা অনুযায়ী এসব ভোটারের খোঁজে বাড়ি যাচ্ছেন তাদের সমর্থন আদায়ের জন্য। কিন্তু উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোটারকে না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরছেন তারা। খুঁজে না পাওয়া এসব ভোটারের প্রায় সবই ভাসমান ভোটার বলে অনেক প্রার্থী ও স্থানীয়রা মন্তব্য করেছেন। এসব ভাসমান ভোটারের অনেকেই নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নের কথা বিবেচনা না করেই ভোট দিয়ে থাকেন। আর এ কারণেই গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের গত নির্বাচনে একাধিক যোগ্য প্রার্থীকে পরাজিত হতে হয়েছে। যার মাসুল গুনতে হয়েছে স্থানীয় ভোটারদের। ২৮৬ কাউন্সিলরের মধ্যে ১১৪ জনই মামলার আসামি ॥ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ২৮৬ সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীর ১১৪জনই মামলার আসামি। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির উভয় দলের প্রার্থীর নামই রয়েছে। তাছাড়া সিটির ৫টি ওয়ার্ডের ২০ প্রার্থীর কারো বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই এবং তিনটি ওয়ার্ডের প্রত্যেক প্রার্থীর নামেই মামলা রয়েছে। প্রার্থীদের হলফনামা থেকে জানা গেছে, ২১নম্বর ওয়ার্ডের ৫ প্রার্থী, ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের ৬ প্রার্থী, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের ৩ প্রার্থী, ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের ৪ প্রার্থী এবং ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের ২ প্রার্থীসহ ওই ৫টি ওয়ার্ডের কোন প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। তবে ২০নম্বর ওয়ার্ডের ৩জন, ২৮নম্বর ওয়ার্ডের ৩জন এবং ৩৫নম্বর ওয়ার্ডের ৪জনসহ ওই তিনটি ওয়ার্ডের সকল প্রার্থীর নামে মামলা রয়েছে। তবে গাজীপুর জেলা শ্রমিকদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ১৫নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও একই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী মোঃ ফয়সাল আহমেদ সরকার বলেন, সমাজে খোঁজ নিয়ে দেখুন আমার মধ্যে কোন দুর্নীতি আছে কি-না, আমার গ্রহণযোগ্যতা আছে কি-না। তারপরও আমার বিরুদ্ধে চারটি মামলা রয়েছে। এগুলো শুধুই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফল। একই কথা বলেন, সদর থানা বিএনপির দফতর সম্পাদক ১৯নম্বর ওয়ার্ডের বতর্মান কাউন্সিলর ও এবারের কাউন্সিলর প্রার্থী তানভীর আহম্মেদ। তার বিরুদ্ধে রয়েছে ৮টি মামলা। তিনিও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাইলেন বড় দু’দলের মেয়র প্রার্থী ॥ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বড় দুই দলের মেয়র প্রার্থী শনিবার গণমাধ্যম কর্মীদের সহযোগিতা চেয়েছেন। অনিচ্ছাকৃত নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘনের ব্যাপারে অবহিত ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে তারা সহযোগিতা চান। আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম শনিবার দুপুরে ছয়দানা এলাকায় তার নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ সহযোগিতা কামনা করনে। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি ঘরোয়া পরিবেশে কথা বলছেন। তিনি বলেন, বাসায় সারাদিন এলাকার মানুষ যাতায়াত করে। বাইরে বের হলে যেখানেই তিনি দাঁড়ান কোন পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সেখানে লোকজন জড়ো হয়ে পড়ে। তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, তিনি নির্বাচনী আরণবিধি মেনে চলছেন এবং ভবিষ্যতেও চলবেন। কোথাও অনিচ্ছাকৃত নির্বাচনী আরণবিধি লঙ্ঘিত হলে তাকে অবহিত করার অনুরোধ করেন। অপরদিকে বিএনপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার শনিবার সকালে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সাক্ষাতকার দেন। সকাল ১০টায় নিজ বাস ভবনের আঙ্গিনায় যুবদলের ও বিকেলে মহিলাদলের নির্বাচনী প্রচারণার প্রস্তুতির অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা সভায় নেতাকর্মীদের দিক নির্দেশনা দেন তিনি। যুবদলের প্রস্তুতি সভায় উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি ফজলুল হক মিলন, সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, মোরতাজুল করিম বাদরু, নূরুল ইসলাম নয়ন, সুরুজ আহমেদ, এ্যাডভোকেট এমদাদ খান, প্রভাষক বসির উদ্দিন, শেখ আব্দুর রাজ্জাক, রফিকুল আজিজ প্রিন্স, আকরাম হোসেন প্রমুখ। মহিলাদলের প্রস্তুতি সভায় উপস্থিত ছিলেন মহিলাদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, ঢাকা মহানগর উত্তর মহিলাদলের সভানেত্রী পেয়ারা মোস্তফা, সহসভাপতি মেহেরুন্নেছা, সাধারণ সম্পাদক আমেনা খাতুন, যুগ্মসম্পাদক সপ্না আহমেদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভানেত্রী রাজিয়া আলী, সাধারণ সম্পাদক সামছুন্নাহার ভূইয়া, গাজীপুর জেলা মহিলাদলের সভানেত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস, সাধারণ সম্পাদক গোলনাহার, গাজীপুর মহানগর মহিলাদলের সভানেত্রী শিরিন চাকলাদার, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজা আক্তার, উপদেষ্টা আনোয়ারা বেগম, সাংগঠনিক সম্পাদক বীনা চৌধুরী প্রমুখ। এছাড়া হাসান সরকার শনিবার টঙ্গী ও উত্তরায় পৃথক দুটি বিবাহ অনুষ্ঠানে অংশ নেন। নির্বাচনী আচরণবিধি পর্যবেক্ষণে ১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত ॥ জিসিসি নির্বাচনে প্রার্থীদের আচরণবিধি পর্যবেক্ষণ ও তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণে সক্রিয় রয়েছে গাজীপুর জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যেই ১০ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত গঠন করে তাদের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। এ টিম ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত কঠোর অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালন করবে। ২৪ এপ্রিল থেকে আচরণ বিধি পর্যবেক্ষণসহ সার্বিক বিষয় মনিটরিংয়ের জন্য আদালতের সংখ্যা বৃদ্ধি করে ১৯টি ভ্রাম্যমাণ আদালত দায়িত্ব পালন করবে। জিসিসি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত আচরণবিধি বিষয়টিতে কঠোরভাবে মনিটরিং করা হবে। এ লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের পাশাপাশি জেলা পুলিশের বিশেষ টিমও এ কাজে নিয়োজিত থাকবে। এবার ভোট কেন্দ্র বেড়েছে ৩৩টি ॥ গতবারের চেয়ে এ নির্বাচনের জন্য ৩৩টি ভোট কেন্দ্র বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর ফলে এবার ভোট কেন্দ্র সংখ্যা হচ্ছে ৪২৫টি। এসব কেন্দ্রের মধ্যে কয়েকটিকে সম্পূর্ণ সিসি টিভি ক্যামেরার আওতায় নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। যা শীঘ্রই চূড়ান্ত হতে পারে। এছাড়াও কয়েকটি ভোট কেন্দ্রে পরীক্ষামূলক ইভিএম মেশিন স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ৩৯২ টি ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। খুলনা ॥ খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত রাখতে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। পদক্ষেপ অনুযায়ী শুক্রবার রাত থেকে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী, পলাতক আসামি গ্রেফতার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের লক্ষ্যে এ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এ অভিযান নির্বাচনের আগ পর্যন্ত চলমান থাকবে। এদিকে কেসিসি নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য ৫ হাজার পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে বলে কেএমপি সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৪ এপ্রিল প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে। এর পরপরই প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী প্রচারে নেমে পড়বেন। সন্ত্রাসী, অস্ত্রধারী অপরাধীরা বিভিন্ন প্রার্থীর হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রভাবিত করতে পারে। ভোটে যাতে কেউ সন্ত্রাসী ও পেশীশক্তির ব্যবহার করতে না পারে সেদিক বিবেচনায় রেখে বিশেষ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। সকল প্রার্থী তাদের নির্বাচনী প্রচার সুষ্ঠুভাবে করতে পারেন এবং ভোটাররা যাতে নির্বিঘেœ ভোট প্রদান করতে পারে সে লক্ষ্যে কেএমপির পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এদিকে আগামী ১৫ মে অনুষ্ঠিতব্য খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন উপলক্ষে নগরীর ২৮৯ টি ভোট কেন্দ্রে নিñিদ্র নিরাপত্তা দিতে ৫হাজার পুলিশ মোতায়েন রাখার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে প্রায় দুই হাজার পুলিশ সদস্য এবং অবশিষ্ট পুলিশ সদস্য অন্যান্য জেলা থেকে এনে প্রয়োজন মেটানো হবে। পুলিশের সঙ্গে আনসার সদস্যরা থাকবেন সহায়তায় এবং বিজিবি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে। এছাড়াও থাকবে র‌্যাবের টহল দল। এ ব্যাপারে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া এ্যান্ড কমিউনিটি পুলিশিং) সোনালী সেন বলেন, নির্বাচন উপলক্ষে শুক্রবার থেকে কেএমপির আট থানা এলাকায় বিশেষ অভিযান শুরু“ হয়েছে। খুলনা মহানগরীকে ঢেলে সাজাতে ২৪ দফা ॥ খুলনা মহানগরীকে ঢেলে সাজানোসহ দৃষ্টিনন্দন ও পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ে তুলতে ২৪ দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে। খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনকে সামনে রেখে শুক্রবার বিকেলে নগরীর বিএমএ ভবন মিলনায়তনে আয়োজিত নাগরিক মতবিনিময় সভায় এ প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হয়। সভায় ‘খুলনা মহানগর নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ’ গঠন করা হয়। বিএমএ খুলনার সভাপতি ডাঃ শেখ বাহারুল আলমের সভাপতিত্বে ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট খুলনার আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির ববির সঞ্চালনায় নাগরিক প্রতিনিধিদের সভায় বক্তৃতা করেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান এমপি, সাবেক পৌর মেয়র এ্যাডভোকেট এনায়েত আলী, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট এম এম মুজিবুর রহমান, সাংবাদিক মকবুল হোসেন মিন্টু, অধ্যক্ষ দেলোয়ারা বেগম, মুক্তিযোদ্ধা এমএম জিয়াউল ইসলাম, মানিকউজ্জামান অশোক, অধ্যক্ষ ফ ম আব্দুস সালাম, ডাঃ বঙ্গকমল বসু, হিমাংশু সরকার প্রমুখ। সভায় ডাঃ শেখ বাহারুল আলমকে আহ্বায়ক ও হুমায়ুন কবির ববিকে সদস্য সচিব করে খুলনা মহানগর নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের ১১ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির প্রধান উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট এনায়েত আলী, যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক দেলোয়ারা বেগম, এ্যাডভোকেট এমএম মুজিবুর রহমান, সাংবাদিক মকবুল হোসেন মিন্টু, মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার মোকাদ্দেস হোসেন, সাংবাদিক এসএম জাহিদ হোসেন, সুবীর রায়, অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ ও শাহিন জামান পন। সভায় মহানগরীকে ঢেলে সাজানোসহ দৃষ্টিনন্দন ও পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ে তুলতে ২৪ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এ ছাড়া খুলনা মহানগর নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের উদ্যোগে আগামী ২৪ এপ্রিল দুপুর ১২টায় খুলনা প্রেসক্লাব মিলানয়তনে সংবাদ সম্মেলন ও ২৬ এপ্রিল বিকেল ৪টায় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে তালুকদার আব্দুল খালেকের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। খুলনা মহানগর নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ উপস্থাপিত দাবির মধ্যে রয়েছে, খুলনাতে নতুন পাঁচটি মানসম্পন্ন স্কুল প্রতিষ্ঠা, গোলকমনি শিশুপার্ক আধুনিকায়ন ও দৌলতপুরে একটি শিশুপার্ক, নগরীর শহীদ হাদিস পার্ক, জাতিসংঘ পার্কসহ বিভিন্নস্থানে আধুনিক ক্যাফে তৈরি, বর্জ্য অপসারণের কাজ ভোর ৬টার মধ্যে শেষ করা, কেসিসি’র নিয়ন্ত্রণে বাসাবাড়ির বর্জ্যব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা, নগরীর প্রধান প্রধান সড়কে নগর পরিবহনের ব্যবস্থা করা, পরিচ্ছন্নতা কর্মীসংখ্যা বৃদ্ধি করা, সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে ইজিবাইক ও মোটর চালিত রিক্সা লাইসেন্স ও চালকের লাইসেন্স যথাযথভাবে প্রদান করা, নগরীতে প্রয়োজনীয় স্থানসমূহে আধুনিক পাবলিক টয়লেট গড়ে তোলা, ওয়ার্ডে নতুন করে কমিউনিটি সেন্টার গড়ার ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক মাল্টিপারপাস কার্যক্রম পরিচালনা করা যায় তেমন ডিজাইন করে নির্মাণ করা, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে আধুনিক সময় উপযোগী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা, কেডিএ এভিনিউ এর নামকরণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিনিউ করা, নাগরিকদের মতামত গ্রহণের কার্যকর ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা, মশার উপদ্রব কমানোর জন্য সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে, পাবলিক হলকে সিটি কমপ্লেক্স হলে রূপান্তরিত করা হবে, ময়ূর নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনা এবং লিনিয়র পার্ক পূর্ণাঙ্গরূপে বাস্তবায়ন করে নাগরিকদের জন্য উন্মুক্তকরণ প্রভৃতি। ফের আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ খালেক-মঞ্জুর ॥ খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনকে ঘিরে প্রতীক বরাদ্দের আগেই দলীয় প্রতীক ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রচার করার মাধ্যমে আবারও নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করার পরস্পর বিরোধী অভিযোগ করেছেন মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক ও বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। কেসিসি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারের দফতর সূত্রে জানা গেছে, আচরণবিধি লঙ্ঘন সংক্রান্ত শনিবার ২টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের বিষয়বস্তুু তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে বিধি অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আওয়ামী লীগের নগর শাখার দফতর সম্পাদক মুন্সি মোঃ মাহবুব আলম সোহাগ আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক রিটার্নিং অফিসারের কাছে শনিবার করা অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু গত ১৮ এপ্রিল খুলনা প্রেসক্লাবে প্রেসব্রিফিংকালে রঙিন ব্যানার ব্যবহারসহ সেখানে ধানের শীষ প্রতীক ব্যবহার করেছেন। যা ১৯ এপ্রিল স্থানীয় সকল পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। যা আচরণ বিধির ২ এর ৭নং অনুচ্ছেদ সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে। এ অপরাধ তার মনোনয়নপত্র বাতিলযোগ্য বলে আমি মনে করি। অপরদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয় মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০ এপ্রিল রাতে খুলনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হারুুন অর রশিদসহ জেলার নেতারা ইউনাইটেড ক্লাবে নৌকা প্রতীকের ব্যানার টানিয়ে সভা করেন। সেখান থেকে কেসিসি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানানো হয়। যে সংবাদ শনিবারের স্থানীয় দৈনিক সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে।
×