ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঘটছে ফসলহানি

নওগাঁয় ১১২ ইটভাঁটি অবৈধ

প্রকাশিত: ০৬:২০, ২৮ জানুয়ারি ২০১৮

নওগাঁয় ১১২ ইটভাঁটি অবৈধ

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ ॥ সরকারী নীতিমালাকে উপেক্ষা করে জেলার ১১ উপজেলায় অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে শতাধিক ইটভাঁটি। এসব ইটভাঁটিতে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ, নষ্ট করা হচ্ছে ফসলি জমি, বিপন্ন করা হচ্ছে পরিবেশ। কৃষিজমি ও আবাসিক এলাকায় গড়ে ওঠা এসব ইটভাঁটির কারণে মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। বর্তমানে জেলায় ৬২ শতাংশ ভাঁটিতে অবৈধভাবে ইট পোড়ানো হলেও পরিবেশ অধিদফতর বা জেলা প্রশাসন কার্যত নীরব রয়েছে। জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতর রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১১ উপজেলায় মোট ইটভাঁটির সংখ্যা ১৫৭টি। এর মধ্যে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নিয়ে চলছে ১২৮টি। অর্থাৎ পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে ২৯টি ইটভাঁটি। আর চলতি বছর জেলা প্রশাসন থেকে মাত্র ৬৮টি ভাঁটির লাইসেন্স নবায়ন করা হয়েছে। ফলে জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী ৮৯টি ইটভাঁটি অবৈধভাবে চলছে। জানা গেছে, বর্তমানে ১১ উপজেলার ১৮০ ইটভাঁটির মালিক জেলা ইটভাঁটি মালিক সমিতির সদস্য। সমিতির তথ্যানুসারে জেলায় ভাঁটির সংখ্যা মোট ১৮০টি। এই হিসাব মতে, জেলা প্রশাসনের অনুমোদিত (লাইসেন্সকৃত) ইটভাঁটির সংখ্যা ৬৮টি হলে জেলায় বর্তমানে ১১২টি ইটভাঁটি অবৈধভাবে চলছে। অর্থাৎ ৬২ শতাংশ ইটভাঁটিই অবৈধ। জেলা ইটভাঁটি মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, ‘ইটভাঁটির মালিকরা সকলেই লাইসেন্স নবায়ন করতে চান। কিন্তু বিগত ২০১৩ সালের আইন অনুযায়ী ভাঁটি তৈরির শর্ত পূরণ না হওয়ায় আইনী জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই এ বিষয়ে হাইকোর্টে রিট করেছেন। মামলাগুলো অমীমাংসিত থাকায় তারা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইটভাঁটি নির্মাণ করতে পারছেন না।’ ইটভাঁটি মালিকরা দাবি করছেন, পরিবেশ অধিদফতর, জেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যথারীতি উৎকোচ দিয়েই ইটভাঁটি চালু রাখতে হয়েছে। অবৈধ ইটভাঁটি চালু রাখার পক্ষে যুক্তি দিয়ে তারা বলেন, শুরুতে তারা ড্রাম চিমনি পদ্ধতির ভাঁটিতে ইট পোড়াতেন। পরে সরকার ১২০ ফুট উঁচু পরিবেশবান্ধব চিমনি দিয়ে ইটভাঁটি তৈরির নির্দেশনা দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বেশির ভাগ ইটভাঁটি ১২০ ফুট উঁচু চিমনিতে রূপান্তরিত করা হয়েছে। সর্বশেষ সরকার নতুন এক নির্দেশনায় জিগজ্যাগ কিলন, হাইব্রিড কিলন, ভারটিক্যাল স্যাফট কিলন, টানেল কিলন পদ্ধতিতে ইটভাঁটি প্রস্তুতের নির্দেশনা জারি করে। কিন্তু নির্মিত ভাঁটির শ্রেণী পরিবর্তন করা সময়সাপেক্ষ এবং অত্যন্ত ব্যয়বহুল বলে দাবি করেন তারা। এদিকে জেলা সদরের হাঁপানিয়া, কীর্ত্তিপুর ও বোয়ালিয়া ইউনিয়নের বেশকিছু গ্রাম এলাকার প্রায় প্রতিটি কৃষি জমির মাঠেই গড়ে ওঠেছে ইটভাঁটি। বিস্তৃীর্ণ ফসলের মাঠ ও ঘনবসতিপূর্ণ গ্রামের মধ্যে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে ভাঁটিগুলো। চিমনি দিয়ে বের হওয়া কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যায় চারপাশ। মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুরপুর ইউনিয়নের চৌমাশিয়া গ্রামের বাসিন্দা জিয়াউল, মনসুর আহমেদ ও সামসুদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন জানান, ‘নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের পাশে হওয়ায় চৌমাশিয়া গ্রামের ফসলি দুটি কৃষিজমির মাঠে ১২টি ইটভাঁটি গড়ে তোলা হয়েছে। এসব ইটভাঁটির কালো ধোঁয়ার কারণে ঠিকমতো শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়া যায় না। রীতিমতো শ্বাসকষ্ট হয়।’নওগাঁর জেলা প্রশাসক ড. মোঃ আমিনুর রহমান বলেন, ‘অবৈধ ইটভাঁটার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যারা এখনও লাইসেন্স নবায়ন করেনি, তাদের বিধি মোতাবেক উন্নত প্রযুক্তিতে ইটভাঁটি নির্মাণ করে লাইসেন্স নবায়নের জন্য তাগিদ দেয়া হচ্ছে। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কেউ ইটভাঁটি চালাতে পারবে না।’ মির্জাপুর নিজস্ব সংবাদদাতা মির্জাপুর থেকে জানান, নদীর কিনারা ও তিন ফসলি জমি ধ্বংস করে ভেকু মেশিন (এসকেভেটর) দিয়ে কেটে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার মাটি নেয়া হচ্ছে ইটভাটায়। এতে শুধু নদীর অবকাঠামো বা ফসলি জমিই ধ্বংস হচ্ছে না, ধ্বংস হচ্ছে বর্তমান সরকারের আমলে উন্নয়ন করা নবনির্মিত গ্রামীণ সড়কও। প্রতিদিন স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় শত শত ট্রাক মাটি ভাটাতে নিলেও প্রশাসন রয়েছে নির্বিকার। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় পর্যন্ত চার স্তরে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিদিন নদী ও নদীর কিনারা কেটে লাখ লাখ টাকার মাটি নিলেও সরকার এক টাকাও রাজস্ব পাচ্ছে না বলে জানা গেছে। মির্জাপুর উপজেলার বহুরিয়া ইউনিয়নের চান্দুলিয়া, কোটবহুরিয়া, গোড়াই ইউনিয়নের মীর দেওহাটা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে লৌহজং নদীর পাড় ও নদী সংলগ্ন ফসলি জমির মাটি ভেকু মেশিন দিয়ে ২০-২৫ ফুট গভীর করে কেটে ট্রাকযোগে ইটভাটায় নিচ্ছে।
×