এবি ব্যাংকের চেয়ারম্যানসহ তিন পরিচালকের পদত্যাগ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ মালিকানা পরিবর্তনের গুঞ্জনের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আরব বাংলাদেশ (এবি) ব্যাংকের চেয়ারম্যান এম ওয়াহিদুল হকসহ পরিচালনা পর্ষদের তিন সদস্য পদত্যাগ করেছেন। বৃহস্পতিবার রাজধানীর লো মেরিডিয়ানে বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) তাদের পদত্যাগপত্র অনুমোদিত হয়। পদত্যাগকারী অন্য দুই সদস্য হলেন- ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম আহমেদ ও ফাহিমুল হক। চেয়ারম্যান এম ওয়াহিদুল হকসহ পরিচালনা পর্ষদের তিন সদস্য পদত্যাগের পর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আরব বাংলাদেশ (এবি) ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান হয়েছেন এম আওয়াল। ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছেন ফিরোজ আহমেদ। দুজনেই ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন। এরপর নতুন তিন পরিচালক নির্বাচন করা হয়। পরে পরিচালনা পর্ষদের সভায় নতুন চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানসহ পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়। নতুন পরিচালকরা হলেন- শিরিন শেখ, নাজির আহমেদ ও মোশতাক আহমেদ। এর মধ্যে নাজির আহমেদ পদত্যাগকারী ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম আহমেদের ছেলে। আর শিরিন শেখ ও মোশতাক আহমেদ এম মোরশেদ খানের প্রতিনিধি বলে জানা গেছে। জানা গেছে, ইসলামী ব্যাংক, শাহজালাল ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংকসহ দেশের কয়েকটি ব্যাংকিং খাতে মালিকানা বদল নিয়ে গত কিছুদিন ব্যাংক খাতের শেয়ারে অস্থিরতা রয়েছে। বিভিন্ন গ্রুপ অব কোম্পানিজের পক্ষ থেকে পুঁজিবাজার থেকে শেয়ার কিনে বিভিন্ন ব্যাংকের মালিকানায় প্রবেশ করছে বলেও খবর এসেছে। এর মধ্যে গত মাসের ২০ নবেম্বর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিটির তিন কোটি ৩৯ লাখ শেয়ার হাতবদল হয়েছে, যার মূল্য ৮৫ কোটি টাকারও বেশি। অন্তত দুবছরের মধ্যে এবি ব্যাংকের এত শেয়ার হাতবদল হয়নি। এর আগে গত ৩১ মার্চ সর্বোচ্চ দুই কোটি ৮১ লাখ শেয়ার হাতবদল হয়েছিল। তখন দেশী-বিদেশী যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশের বেসরকারী খাতের প্রথম ব্যাংক এবি ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তনের গুঞ্জন তৈরি হয়। যার ফলে বার বার পেছাতে হয়েছে এবি ব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভা ও বিশেষ সাধারণ সভা। চলতি বছরের ১৭ আগস্ট প্রথমবারের মতো এজিএম করার লক্ষ্যে ভ্যানু নির্বাচন করা হয় ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরাতে। তবে অজ্ঞাত কারণে সেই সভাটি সম্পন্ন করতে পারেনি বর্তমান পর্ষদ। এরপর সিদ্ধান্ত হয় ২১ ডিসেম্বর কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে এজিএম ও ইজিএম দুটি সভাই করবে পরিচালনা পর্ষদ। কিন্তু শেষে এসে আবার স্থান পরিবর্তন করা হয়। সর্বশেষ গত রবিবার এজিএমের স্থান পরিবর্তন করে লা মেরিডিয়ান ঠিক করা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর লো মেরিডিয়ানে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হয়। যদিও ‘শারীরিক অসুস্থতার’ জন্য সভায় অনুপস্থিত ছিলেন পদত্যাগী চেয়ারম্যান ওয়াহিদুল হক। তার এই পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাংকের কোন পরিচালক কথা বলতে রাজি হয়নি। ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি। ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে পরিচালক হিসেবে যোগদানের পর পরের মাসেই চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান ওয়াহিদুল হক। এর থেকে চেয়ারম্যান হিসেবে টানা দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এজিএম অনুষ্ঠানে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান, তার ছেলে ফয়সাল মোরশেদ খানসহ উদ্যোক্তা ও শেয়ারহোল্ডারা উপস্থিত ছিলেন। ব্যাংকটির প্রায় ২৫ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা রয়েছে এম মোরশেদ খানের হাতে। মোরশেদ খান পরে সাংবাদিকদের বলেন, এজিএমের পর পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকের নতুন তিন পরিচালক ও চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। ব্যাংকের ৩৫তম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) এবি ব্যাংক লিমিটেডের ১২ দশমিক ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ অনুমোদন দিয়েছে কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররা। এছাড়াও সভায় ২০১৬ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন এবং নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী অনুমোদন করা হয়। ব্যাংকের বিশেষ সাধারণ সভায় ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডাররা যথাযথ কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি সাপেক্ষে পূর্ব ঘোষিত বর্তমানে বিদ্যমান প্রতি ৫টি শেয়ারের বিপরীতে ৪টি রাইট শেয়ারের পরিবর্তে প্রতি ৩টি বিদ্যমান শেয়ারের বিপরীতে ২টি রাইট শেয়ার অভিহিত মূল্য ১০ টাকায় ইস্যুর করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। উল্লেখ্য, গত ১২ এপ্রিল ২০১৭ এবি ব্যাংক ব্যাংকিং কার্যক্রমের ৩৫ বছর পূর্ণ করেছে। ২০১৬ সালে ব্যাংকের নেট সম্পদ মূল্য (এনএভি) দাঁড়িয়েছে ২,৩১১ কোটি টাকায়। গেল বছরে ব্যাংকের মোট সম্পদ দাঁড়িয়েছে ৩১,৪৮৪ কোটি টাকা যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। পরিচালনা পর্ষদের সহ-সভাপতি সেলিম আহমেদ ৩৫তম বার্ষিক সাধারণ সভা পরিচালনা করেন। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের পরিচালকবৃন্দ এবং প্রেসিডেন্ট ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর মসিউর রহমান চৌধুরী।