ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

সবচেয়ে বেশি স্প্রেড স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও ব্র্যাক ব্যাংকের

ঋণ ও আমানতের সুদহার মানছে না ১০ ব্যাংক

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ২ নভেম্বর ২০১৭

ঋণ ও আমানতের সুদহার মানছে না ১০ ব্যাংক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা সত্ত্বেও ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান (স্প্রেড) কমায়নি দেশী-বিদেশী ১০ ব্যাংক। গত সেপ্টেম্বর মাস শেষে পাঁচটি বিদেশী এবং পাঁচটি বেসরকারী ব্যাংকের স্প্রেড পাঁচ শতাংশীয় পয়েন্টের বেশি ছিল। সবচেয়ে বেশি স্প্রেড রয়েছে বহুজাতিক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের। এরপরেই রয়েছে বেসরকারী খাতের ব্র্যাক ব্যাংকের। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকগুলো ঋণের ক্ষেত্রে গড়ে ৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ হারে সুদ আদায় করেছে। আর আমানতের বিপরীতে দিয়েছে ৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ সুদ। স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৪ শতাংশ। তবে বিশেষায়িত ব্যাংকের স্প্রেড সবচেয়ে কম, যা মাত্র ২ দশমিক ৭৪ শতাংশ। বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক আমানতের বিপরীতে গড়ে ৫ দশমিক ৫১ ও ৮ দশমিক ৫ শতাংশ সুদ দিয়েছে। আর ঋণের ক্ষেত্রে সুদ নিয়েছে ৮ দশমিক ৬২ ও ৮ দশমিক ৯২ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, স্প্রেড পাঁচ শতাংশের নিচে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক বারবার নির্দেশনা দিয়ে আসছে। কিন্তু তা মানছে না কয়েকটি ব্যাংক। আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য আমানতের সুদের হার বেশি রাখতে হবে। যদিও মুক্তবাজার অর্থনীতিতে ব্যাংকগুলো নিজস্ব নীতিমালার আলোকে ঋণ ও আমানতে সুদহার নির্ধারণ করতে পারে। ব্যাংকিং খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ব্যাংকের কাছে প্রচুর পরিমাণে অলস টাকা পড়ে আছে। বিনিয়োগ স্থবিরতার কারণে উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে না। আবার খেলাপী ঋণের পরিমাণও বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকের ব্যয় নির্বাহ করাই কঠিন হয়ে পড়ছে। এত কিছুর পরও বছর শেষে রয়েছে ভাল মুনাফা অর্জন করার টার্গেট। ফলে আমানতকারীদের দিকে খেয়াল না রেখেই বছর শেষে ভাল মুনাফা অর্জনের স্বার্থে আমানতের সুদ কমাচ্ছে ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, বেসরকারী খাতের পাঁচ ব্যাংকের স্প্রেড পাঁচ শতাংশীয় পয়েন্টের ওপর অবস্থান করছে। গত সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারী ব্যাংকগুলো ঋণের ক্ষেত্রে গড়ে ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ হারে সুদ আদায় করেছে। আমানতের বিপরীতে দিয়েছে ৫ দশমিক ১৫ শতাংশ সুদ, স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশীয় পয়েন্ট। বিদেশী ব্যাংকগুলোর স্প্রেড এখনও পাঁচ শতাংশীয় পয়েন্টের ওপরে রয়েছে। বিদেশী ব্যাংকগুলো আমানতের বিপরীতে ১ দশমিক ৬৬ শতাংশ সুদ দিয়েছে। অন্যদিকে ঋণের বিপরীতে আদায় করেছে ৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ সুদ। এ খাতের ব্যাংকগুলোর স্প্রেড সবচেয়ে বেশি, যা ৬ দশমিক ৩২ শতাংশীয় পয়েন্ট। স্প্রেড পাঁচ শতাংশীয় পয়েন্টের ওপরের বিদেশী ব্যাংকগুলো হলো- স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, উরি ব্যাংক, এইচএসবিসি ও সিটি ব্যাংক এনএ। বেসরকারী ব্যাংকগুলো হলো- দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেড, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, ফারমার্স ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্যমতে, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের আমানতের বিপরীতে গড়ে ১ দশমিক ২৫ শতাংশ সুদ দিয়েছে। আর ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংকটি ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ সুদ নিয়েছে। বিদেশী খাতের এ ব্যাংকটির স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ। এছাড়া ব্র্যাক ব্যাংক আমানতের বিপরীতে সুদ দিয়েছে ৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ। আর ঋণের বিপরীতে নিয়েছে ১১ দশমিক ৮৫ শতাংশ সুদহার। বেসরকারী খাতের এ ব্যাংকের স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক শূন্য ৯৭ শতাংশ।
×